ভূমিকা সুস্বাস্থ্য রক্ষা এবং রোগ উপশমে ভেষজের ব্যবহার মানব সভ্যতার সমসাময়িক। প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতির অন্যতম বুনিয়াদ ছিল ভেষজ বিদ্যা তথা আয়ুৰ্বেদ। খ্রীষ্টপূর্ব আনুমানিক 4500-2500 সনের মধ্যবর্তী সময়ে লিখিত ঋকবেদে প্রায় শতাধিক ভেষজ উদ্ভিদের উল্লেখ ইঙ্গিত করে যে তখন থেকে অথবা তারও পূর্বে ভারতে ভেষজবিদ্যার প্রচলন ছিল। খ্রীষ্টপূর্ব আনুমানিক 2500-2000 সনের মধ্যবর্তী সময়ে রচিত অথর্ববেদেও বহু ভেষজ উদ্ভিদের বিবরণ ও ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। মিশর ও চীন বাদে অন্য আর কোনো প্রাচীন সভ্যতা সম্ভবত ভারতের মতো স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিজ্ঞানে এত উন্নতি করতে পারেনি। এবং এই সামগ্রিক উন্নতির প্রধান কারণ ভারতের প্রাকৃতিক, জৈবিক এবং সাংস্কৃতিক বিবিধতা। ভারতে প্রাপ্ত প্রায় 17500 উদ্ভিদের মধ্যে 2000 উদ্ভিদ আয়ুর্বেদ, য়ুনানী, সিদ্ধাই, তান্ত্রিক ইত্যাদি প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতিতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বনবাসী এবং অন্য উপজাতিরা প্রায় 8000 বনজ উদ্ভিদ তাদের নিজস্ব চিকিৎসা পদ্ধতিতে ব্যবহার ক'রে থাকে। ভারতীয় চিকিৎসাধারাগুলি মূলত ভেষজ-নির্ভর এবং তাই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন এবং অপেক্ষাকৃত কম ব্যয়সাপেক্ষ। ভেষজ উদ্ভিদের উৎস জৈবিক এবং ক্ষয়িষ্ণু। যত্ন এবং বুদ্ধির অভাবে তাই এই প্রাকৃতিক সম্পদ আজ বিপন্ন। জনসংখ্যার চাপ, শহুরে সভ্যতার বিকাশ, বনভূমির সংকোচন, মাত্রাতিরিক্ত সংগ্রহ এবং চোরাব্যবসা ভেষজ উদ্ভিদের একটি বড় অংশকে বিলুপ্তির দোরগোড়ায় এনে দিয়েছে। অতিরিক্ত লাভের লোভে মানুষ এইসব উদ্ভিদের ধ্বংসাত্মক সংগ্রহে লিপ্ত। অথচ এই উদ্ভিদগুলির পুনঃপরিপূরণের (Replenishment) প্রতি বিন্দুমাত্র লক্ষ দেওয়া হয়নি। এর ফলে আপৎকালীন তৎপরতায় এইসব গুরুত্বপূর্ণ ভেষজগুলির সংরক্ষণ আবশ্যিক হয়ে পড়েছে। বনে আপন স্বাভাবিক পরিবেশে সংরক্ষণের পাশাপাশি উদ্ভিদ উদ্যান (Botanical Garden), বংশাণু সংগ্রহশালা (Gene Bank), জীবমণ্ডল সংরক্ষণ, অভয়ারণ্য, জাতীয় পার্ক, ইত্যাদিতেও বিশেষ লক্ষ দেওয়া প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।