বশিষ্ঠের মতো মহাপুরুষের সিদ্ধির পীঠ তারাপীঠ প্রকৃত অর্থে মুক্তি প্রদায়িনী স্থান হিসাবে অনন্তকাল থেকে বিবেচ্য হয়ে আসছে। স্বয়ং বশিষ্ঠ যাঁর আরাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেছিলেন সেই শিলাময়ী তারা এই স্থানে চীনাচারে পূজিত হন। পবিত্র বঙ্গভূমি শক্তি সাধনার ক্ষেত্র। তন্ত্রসাধনার শ্রেষ্ঠতম ভূমি। তারাপীঠ হলো সেই সাধনার, সেই আরাধনার পবিত্র কেন্দ্র। বামাক্ষ্যাপা ধর্ম সুরক্ষা করার মানসেই, ঘোর কলিতেও তারাপীঠে ভৈরবরূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন। এই তারাপীঠে মোক্ষদানন্দ, ব্রজবাসী কৈলাসপতি, বামাক্ষ্যাপা, তারাক্ষ্যাপা থেকে আরম্ভ করে শঙ্করক্ষ্যাপা পর্যন্ত অনেকেই তারাপীঠের মহাশ্মশানে তারামায়ের আরাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেছিলেন। তারাপীঠ এবং বামাক্ষ্যাপা নিয়ে বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য এবং প্রামাণ্য গ্রন্থ রচিত হলেও তারা মায়ের আরেক একনিষ্ঠ ভক্ত ও নিরাসক্ত সাধক শঙ্করক্ষ্যাপা সম্পর্কে তেমন উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ আজ অবধি রচিত হয়নি। তিনি প্রকৃত অর্থে একজন শ্মশানচারী মহাক্ষ্যাপা দিন। মহাশ্মশান ও তারা মা ছাড়া তিনি আর কিছু জানতেন না। পার্থিব জগতের ভোগ-বিলাসের দ্রব্যাদির প্রতি তাঁর কোন লোভ কস্মিনকালেও ছিল না। অতি শৈশবকাল থেকেই তিনি শ্মশানে বসবাস করতেন। স্বভাব-বৈশিষ্ট্যে, অবয়বে, আচার-আচরণে তিনি সত্যই একজন প্রকৃত সাধকের মতই ছিলেন। তাঁর মুখনিঃসৃত বাণী বেদ বাক্যের মত ফলতো। তিনি যাঁকে আশীর্বাদ করতেন তাঁর প্রভৃত মঙ্গল হতো, আর যাঁকে অভিসম্পাত করতেন, তাঁর মহাসর্বনাশ হতো। লেখক শঙ্করক্ষ্যাপার জীবনের কিছু কিছু অলৌকিক ঘটনার বিবরণ দিয়ে তাঁর অভূতপূর্ব মহনীয় চরিত্র অহন করেছেন। কিন্তু তারাপীঠের মাহাত্ম্যের কথা, তারাপীঠ ভৈরব বামাক্ষ্যাপার কথা উল্লেখ না করে শঙ্করক্ষ্যাপার জীবনবৃত্তান্তের চিত্র কি করে অঙ্কন করা যাবে? তাই লেখক আলোচ্য গ্রন্থে সর্বপ্রথমে তারাপীঠের মাহাত্ম্যের কথা, তার পরেই মোক্ষদানন্দ, ব্রজবাসী কৈলাসপতি, বামাক্ষ্যাপা, তারাক্ষ্যাপার প্রসঙ্গ আলোচনা করেই বিস্তারিতভাবে শঙ্করক্ষ্যাপার সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। গ্রন্থটি পাঠকবৃন্দের কাছে সমাদৃত হলেই আমাদের এই প্রয়াস সার্থক হয়েছে বলে মনে করবো।