বাংলার সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের ইতিহাসে হেমচন্দ্র কানুনগো এক উল্লেখযোগ্য নাম। যিনি দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রত্যক্ষ ভাবে অংশগ্রহণের জন্য বিদেশে গিয়ে বিস্ফোরক বিষয়ক কৃৎকৌশল শিখে আসেন এবং দেশের স্বাধীনতার যুদ্ধে তার প্রয়োগ করেন। বিখ্যাত আলিপুর বোমা মামলায় তাঁর প্রথমে ফাঁসির আদেশ হয়। পরবর্তীকালে আপিলে যা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে পরিণত হয়। দুঃখের হলেও একথা সত্যি যে উক্ত মামলায় অনেকেই পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি করেছিলেন, ব্যতিক্রম হেমচন্দ্র। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড থেকে মুক্তি লাভের পর প্রকাশিত হয় তাঁর লিখিত বাংলায় বিপ্লব প্রচেষ্টা, যে বই প্রকাশিত হবার পর সমাজে প্রচণ্ড আলোড়ন সৃষ্টি হয়। কারণ হেমচন্দ্র সমস্ত আন্দোলনটিকে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টি থেকে বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন কোথায় তার ভুল আর কোথায় তার সার্থকতা। এই দেশ চিরকাল সুজলা সুফলা ‘ধর্মের পথেই আসবে স্বাধীনতা’ ইত্যাদি মতবাদকে তিনি তীব্র ভাবে ব্যঙ্গ করেছেন যা অনেককে ক্রুদ্ধ করেছে কিন্তু যেহেতু লেখক নিজে সেই বিপ্লবী প্রচেষ্টার অন্যতম অংশীদার ছিলেন, সেজন্য খুব বেশি প্রতি-আক্রমণ তাঁর প্রতি ধেয়ে আসেনি । অনাগত সুদিনের তরে তাঁর দ্বিতীয় প্রকাশিত গ্রন্থ। বলাবাহুল্য গ্রন্থটি দুষ্প্রাপ্য। তাঁর ভাষায় অনাগত (সর্বজনীন সত্য) সুদিনের তরে বইটি লেখা হয়েছে এযাবৎ কাল বাংলা সাহিত্য যে দৃষ্টিভঙ্গি থেকে রচিত হয়ে এসেছে, সম্পূর্ণ তার বিপরীত দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। এই বইটি রক্ষণশীল মনোভাবাপন্ন মানুষজনকে ক্ষিপ্ত করে তুলতে পারে এমন আশংকাও লেখকের ছিল। চিরায়ত প্রকাশন প্রাইভেট লিমিটেড এই দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থটি পাঠকদের হাতে তুলে দিতে পেরে নিজেকে গৌরবান্বিত বোধ করছে।