হ্যাপী থেকে আমাতুল্লাহ -বইয়ের কৈফিয়ত হ্যাপী থেকে আমাতুল্লাহ। বইটি একজন সাবেক অভিনেত্রীর সাক্ষাৎকার। মে মাসের এক সূৰ্যরাঙা সকালে আমরা তার বাসায় তার মুখোমুখি হয়েছিলাম একগাদা প্রশ্ন হাতে। আনন্দঘন সেই সাক্ষাতে তাকে আমরা একের পর এক প্রশ্ন করেছি। তাঁর পরিবার, ক্যারিয়ার, আগের জীবন, বর্তমান জীবন, সংসার, স্বামী, তাঁর স্বপ্ন ও ভবিষ্যৎ-পরিকল্পনা সম্পর্কে ক্ৰমাগত প্রশ্ন করেছি। আল্লাহর এই বান্দি আমাদের সবগুলো প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন অবলীলায়, অকপটে। কোনাে কৃত্রিমতা বা ভণিতার আশ্ৰয় নেননি। যেমন আমরা তাকে প্রশ্ন করেছি, “আপনি আপনার সন্তান নিয়ে কী স্বপ্ন দেখেন?” উত্তরে তিনি বলেন, “আমি আমার সন্তান নিয়ে এ স্বপ্ন দেখি যে, আমি যদি আমার আমলের কারণে হাশরের ময়দানে নাজাত না পাই, যদি পুলসিরাত পার হতে না পারি তা হলে ওরা যেন আমার নাজাতের উসিলা হয়। আমার খুব ইচ্ছে- ওরা হবে হাফেয, আলেম, কারী, মুফতী, মুহাদিস। আমি যেন ওদেরকে দ্বীনদার সন্তান হিসেবে গড়ে তুলতে পারি। দেখা গেল, আখেরাতের ময়দানে আমি আমার আমল দিয়ে নাজাত পাচ্ছি না, তখন যেন ওরা আমার হাত ধরে এই কঠিন দুঃসময় থেকে আমাকে উদ্ধার করে জান্নাতে পৌঁছে দেয়।” আমরা আলোচনার সুবিধার্থে সাক্ষাৎকারটিকে তিনটি ভিন্ন পর্বে ভাগ করেছি। প্রথম পর্বে আমরা তার প্রাথমিক পরিচয় জানতে চেয়েছি। দ্বিতীয় পর্বে আমরা তাঁর একান্ত ব্যক্তিগত কিছু বিষয় সম্পর্কে প্রশ্ন করছি। আর তৃতীয় পর্বে আমরা আলোচনা করেছি, তার বর্তমান জীবন, তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ও ভবিষ্যৎ-পরিকল্পনা সম্পর্কে। আমরা মনে করি, তিন পর্বের এই ধারাবাহিক সাক্ষাৎকার পাঠকবর্গের হাতে তাঁর জীবনের আদ্যোপােন্ত মেলে ধরবে। তাঁর কথাগুলো সত্যি আমাদের হৃদয় ছুঁয়েছে। সাক্ষাৎকারটি নেওয়ার মাধ্যমে আমরা বুঝেছি, আমাদের সমাজব্যবস্থা এমন যে, এখানে একটি মেয়ে চাইলে খুব সহজে “হ্যাপী হয়ে বেড়ে উঠতে পারবো। গোটা সমাজ তাকে তরতার করে এগিয়ে দেবে। কিন্তু একটা মেয়ে যদি “আমাতুল্লাহ হতে চায়, বা ‘হ্যাপী থেকে “আমাতুল্লাহ হতে চায় তা হলে আমাদের সমাজ তাকে পদে পদে আটকে রাখবে। তার পথ আগলে দাঁড়াবে। তার চলার পথ সংকুচিত করে দেবে। তার পথের ওপর কাটা বিছিয়ে রাখবে। হয়তো অন্ধকার থেকে আলোর পথে উঠে আসার সেই পথ এখনো পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়নি; কিন্তু ওপথ বডড বিপৎসংকুল। বড় বেশি কাটাভিরা। সাক্ষাৎকারটি আমরা এজন্যে প্ৰকাশ করছি যে, এর কথাগুলো কিছু বিষয়ের দিকে আঙুল তুলে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। আমাদের বিরাজমান সমাজব্যবস্থা সম্পর্কে আমাদের আরেকটু ভাবতে শেখাবে। আল্লাহর কোনো একজন বান্দা-বান্দি যদি এ বইটির উসিলায় হিদায়াতের আলো খুঁজে পান, অন্ধকার থেকে আলোর দিকে আসার পাথেয় পান, আমরা আমাদের শ্রম সার্থক মনে করব। নিবেদন্তে সাদিকা সুলতানা সাকী
আবদুল্লাহ আল ফারুকঃ লেখক, অনুবাদক, মুহাদ্দিস, সম্পাদক। পিতা : মাওলানা দেলাওয়ার হুসাইন সাইফী। মাতা : মুসাম্মাৎ রেদওয়ানুল জান্নাত জন্ম : ২২ নভেম্বর ১৯৮৩ ঈ.। খিলগাঁও, ঢাকা। শিক্ষা : দাওরায়ে হাদিস, আরবি সাহিত্য ও ইফতা. দারুল উলুম দেওবন্দ, ভারত। পেশা : লেখালেখি, শিক্ষকতা। লেখালেখি : লেখেন কবিতা, অনুবাদ ও কলাম। বই, দেয়ালিকা ও সাময়িকী সম্পাদনার অভিজ্ঞতা রয়েছে। মুহাদ্দিস হিসেবে জামেয়া মাদানিয়া বারিধারা ও দারুল উলুম রামপুরায় কর্মরত ছিলেন। ছাত্রজীবনেই লেখালেখির সূচনা। প্রথম লেখা প্রকাশিত হয় ১৯৯৭ সালে জামিয়া মাদানিয়া বারিধারার স্মারকে। বিভিন্ন মাসিক পত্রিকা ও স্মরণিকায় প্রবন্ধ, কবিতা ও অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে। আরবি ও উরদু থেকে অনুবাদ করতেই স্বাচ্ছন্দ্য বােধ করেন। তার অনূদিত শিশুতােষ বইগুলােও বেশ জনপ্রিয়। সাইয়্যেদ মানাযির আহসান গিলানী, শায়খ হিফযুর রহমান সিওহারভী, মাওলানা ইদরিস কান্ধলভী, মুহাদ্দিস আবদুর রশীদ নু'মানী, শাইখুল হাদীস যাকারিয়া কান্ধলভী, সাইয়্যেদ আবুল হাসান আলী নদভী, মুফতী তাকী উসমানী, শায়খ যুলফিকার আহমদ নকশবন্দীসহ বরেণ্যদের বেশ কিছু বইয়ের সার্থক অনুবাদ করেছেন। আরবি থেকে অনূদিত বইয়ের সম্ভারও বেশ ঋদ্ধ। আবদুত তাওয়াব। ইউসুফ, সামাহ কামেল, সামীর হালবী, আহমদ তাম্মাম, সালামা মুহাম্মদসহ আরববিশ্বের বেশ ক’জন খ্যাতিমান লেখকের বইও অনুবাদ করেছেন। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ইতােমধ্যে ৪৪ পেরিয়েছে। আকাবিরের জীবন ও কর্মের ওপর কয়েকটি জীবনী ও স্মারকগ্রন্থ অনুবাদ ও সম্পাদনা করেছেন।