"মনঃসমীক্ষণের ভূমিকা স্নায়ুরোগ" বইয়ের পিছনের কভারের লেখা: উনিশ শতকের চিকিৎসাবিজ্ঞানে স্নায়ুরােগ’ বলতে বােঝাতো কেবল স্নায়ুতন্ত্রের কোনাে ব্যাধি। কাজেই মনঃসমীক্ষণের বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের অভিযােগ ছিল যে মনঃসমীক্ষণ কেবল মনােবিজ্ঞানের সাহায্যেই স্নায়ুরােগ’ নামক দৈহিক ব্যাধির চিকিৎসা সম্পন্ন করে। এই অভিযােগ খারিজ করে ফ্রয়েড দেখান, স্নায়ুরােগের একটি অন্যতম কারণ (যদিও একমাত্র কারণ নয়) হচ্ছে যৌন কামনার তৃপ্তিসাধনে ব্যর্থতা, এবং যৌনতা যেহেতু নেহাতই কোনাে শারীরিক ব্যাপার নয়, মানসিক আবেগও হচ্ছে তার একটি প্রধান চালিকা শক্তি, তাই স্নায়ুরােগকে নিছক দৈহিক রােগ বলে ভাবা ঠিক নয়। নিছক দৈহিক হলে স্নায়ুরােগ হতাে চিকিৎসাবিজ্ঞানের নেহাতই কোনাে অধস্তন বিভাগের পাঠ্য বিষয়। কিন্তু প্রজাতিজনিত স্মৃতি (phylogenetic memory), স্বপ্ন বিশ্লেষণ এবং সম্মােহন বিদ্যার সাহায্যে ফ্রয়েড অবিসম্বাদীভাবে প্রতিষ্ঠিত করেন ‘নির্জ্ঞান’ মনের (unconscious mind) অস্তিত্ব, যে ‘নির্জ্ঞান মানস-প্রক্রিয়া থেকেই স্নায়ুরােগের উৎপত্তি। অতএব স্নায়ুরােগের দৈহিক মাত্রা থাকলেও তা যে বস্তুতপক্ষে মনােরােগ এবং মনােবৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সাহায্যেই তার প্রকৃতি-নির্ণয় এবং চিকিৎসা সম্ভব, এটিই ফ্রয়েড তার এই বক্তৃতামালায় দেখিয়েছেন। ১৯১৫-১৯১৭ সালে ভিয়েনাবিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্রয়েড প্রদত্তএই বক্তৃতামালার নাম ছিল : মনঃসমীক্ষণের ভূমিকা। বর্তমান গ্রন্থ, এই বক্তৃতামালার শেষ অংশটির বঙ্গানুবাদ।
সিগমুন্ড ফ্রয়েড ১৮৫৬ সালের ৬ মে ফ্রেইবার্গের মােরাভিয়া শহরে জন্মগ্রহণ করেন। অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিকিৎসাশাস্ত্র অধ্যয়ন শেষে ১৮৮১ সালে ডক্টর অব মেডিসিন ডিগ্রি লাভ করেন। এর পর থেকেই ফ্রয়েড মস্তিষ্কের শরীর সংস্থান, স্নায়ু রােগসহ মানসিক ব্যাধি নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী হয়ে উঠেন। এবং পরিণতিতে মনােবিশ্লেষণ নামে এক নতুন জ্ঞানকাণ্ডের সূত্রপাত ঘটান, যার প্রভাব অদ্যাবধি মানববিদ্যার সকল শাখায় অবিসংবাদিত। দীর্ঘ কর্মময় জীবনে তিনি অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রচনা করেছেন। ১৯৩৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বর লন্ডনে তাঁর জীবনাবসান ঘটে।