পরিবেশ বাস্তুতন্ত্রবিদ্যা বিজ্ঞানের সেই শাখা যা পরিবেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের অধ্যয়ন করে। পরিবেশ’ বলতে বােঝায় সমগ্র জীবজগৎ (মানুষকে বাদ দিয়ে) এবং প্রাকৃতিক পরিমণ্ডল, যাকে আমরা বলি Nature বা প্রকৃতি। বহু বহু যুগ আগে প্রায় কুড়ি লক্ষ বছর জুড়ে যখন প্রাচীন মানবজাতির অন্তর্গত আমাদের পূর্বপুরুষেরা আফ্রিকায় উদ্ভূত হয়ে ক্রমশ ইউরেশিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে, সেই সময় কুমারী প্রকৃতি (Virgin nature) (যে প্রকৃতি মানুষের কার্যকলাপ দ্বারা প্রভাবিত নয়) ছিল সর্বোচ্চ। এছাড়াও আমাদের নিজস্ব প্রজাতি হােমাে স্যাপিয়েন্স স্যাপিয়েন্স (Homo sapiens sapiens) দৈহিক গঠনানুযায়ী আধুনিক মানুষ (Anatomically Modern Man) আফ্রিকায় উদ্ভূত হয়ে গত ১৫০,০০০ বছরের মধ্যে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার পরও এই অবস্থাই চলতে থাকে। কিন্তু নিওলিথিক বিপ্লবের পর মানুষ যখন কৃষিকার্য ও পশুপালন শুরু করে (দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ দেখুন), নিজেদের অজান্তেই যে প্রাকৃতিক পরিবেশে তারা বাস করে, পর্যায়ক্রমে সেই পরিবেশের নানা অংশকে বদলে দিতে থাকে। তারপর আধুনিক যুগে, শিল্পের বিকাশ, জীবাশ্ম জ্বালানি ও নানারকম মারণাস্ত্রের (বারুদ থেকে পারমাণবিক অস্ত্র) ব্যবহারের সাথে সাথে মানুষ দৃশ্যতই প্রাকৃতিক পরিবেশ গড়ে ওঠার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ বা হেতু হয়ে ওঠে। এভাবে মানুষ অরণ্য ও বন্যপ্রাণী ধ্বংস করে, বায়ু ও জলদূষণ বৃদ্ধি করে, নিজের স্বার্থে নিজেই প্রকৃতির ক্ষতিসাধন করেছে। ১.২ প্লিস্টোসিন যুগে প্রাকৃতিক পরিবর্তন এই উপ-পরিচ্ছেদে আমরা আলােচনা করব ভূতাত্ত্বিক সময়কাল প্লিস্টোসিনে, যে সময়কাল প্রায় কুড়ি লক্ষ বছর বিস্তৃত : প্রায় ১.৯ বা ১.৮ মিলিয়ন বছর আগে থেকে (যখন ওদুভাই ঘটনাটি অর্থাৎ যখন স্বাভাবিক চৌম্বক মেরুত্বে পরিবর্তন ঘটে) প্রায় ১০,০০০ বছর আগে অবধি (যখন দুটি তুষার যুগের মধ্যবর্তী কালে (interglacial) হলােসিন যুগ শুরু হল) ভৌত (physical) অবস্থায় কতটা পরিবর্তন হয়েছিল। প্লিস্টোসিন যুগের শুরুতে মানবগােষ্ঠীর আদি নিদর্শন হােমাে হ্যাবিলিস (Homo habilis) এবং হােমাে ইরেক্টাস (Homo erectus)-এর উদ্ভব হয় আফ্রিকায় এবং ওই মহাদেশ থেকে বেরিয়ে ইউরেশিয়ার বিভিন্ন অংশে বসতি স্থাপন করে। প্লিস্টোসিন যুগ যখন শেষ হয় তার মধ্যেই আমাদের এই আধুনিক মানব প্রজাতি আফ্রিকা ও ইউরেশিয়ার সমস্ত মানব।
ইরফান হাবিব মার্কসবাদী ঐতিহাসিক হিসাবে বিশ্ববন্দিত। কিন্তু এই অভিধা ঐতিহাসিক ইরফান হাবিবের ইতিহাস চর্চার মৌলিকত্ব ও অভিনবত্বের সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা দেয় না। মার্কসবাদ ও সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী এই মানুষটি মার্কসবাদী ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রে যে বলিষ্ঠতা ও মৌলিকত্ব প্রদর্শন করেছেন, তাতে ভারতইতিহাস চর্চায় নিয়ে এল এক অভাবনীয় মাত্রা। প্রাচীন যুগ থেকে আধুনিক যুগের ভারতবর্ষের ইতিহাসের প্রায় সব ক্ষেত্রেই তাঁর অনুসন্ধানী দৃষ্টি পড়েছে। তার বস্তুনিষ্ঠ, তথ্যসমৃদ্ধ বিশ্লেষণের আলোয় মধ্যযুগের ভারত স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ বিষয়ে তাঁর পিতা বিখ্যাত ঐতিহাসিক মহম্মদ হাবিবকেও তিনি ছাড়িয়ে গেছেন বলে মনে হয়। তাঁর The Agraian System of Mughal India ক্লাসিক পর্যায়ের ইতিহাস চর্চা। তিনি ১৯৩১ সালে উদারপন্থী-মুসলমান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র ২২ বছর বয়সে ইতিহাস বিভাগে লেকচারার পদে যোগ দেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি এইচ ডি ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক পদ থেকে ১৯৯২ সালে অবসর নেন। এখনও তিনি ভারতব্যাপী গবেষকদের প্রেরণাদাতা ও সঠিক পথের দিশারি। তার নিজস্ব গবেষণা-গ্রন্থ, সম্পাদিত-গ্রন্থ এবং প্রবন্ধ কেবল সংখ্যার দিক থেকেই নয়, বিষয় বৈচিত্র্যে, গভীরতায় এবং মার্কসীয় ব্যাখ্যার অনন্যতায় অসাধারণ।