"ঋত্বিক ঘটক" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: একদা মারি স্টেন যাঁকে ভারতীয় চলচ্চিত্রের ‘দামাল শিশু' আখ্যা দিয়েছিলেন সেই ঋত্বিক কুমার ঘটকের (১৯২৫-১৯৭৬) ছবির সংখ্যা মাত্র আটটি হলেও গুণগত মানের জন্যই তার ছবিগুলি গুরুত্ব ও মর্যাদা দিয়ে অনুশীলন করা হয়ে থাকে। চলচ্চিত্র মাধ্যমটি তার কাছে কখনােই কেবলমাত্র প্রমােদমাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হতে পারেনি। ফিল্মে তিনি এসেছিলেন এই মাধ্যমটি গণশিল্পের সবচাইতে শক্তিশালী হাতিয়ার বলেই; কোনাে যশ, অর্থ, সম্মান, প্রতিপত্তি বা গ্ল্যামারের আকর্ষণে নয়। ভারতীয় সমাজব্যবস্থার মূলগত সত্যটিকে তিনি ধরতে চেষ্টা করেছিলেন তার প্রথম ছবি থেকেই, সেই ১৯৫২ সালে; এমনকি ১৯৭৪-এ তােলা তার শেষ ছবি যুক্তি তক্কো আর গপ্পো-তেও, তাঁর প্রিয় স্বদেশের পারিপার্শ্বিককে বিশ্লেষণ করতে চেষ্টা করেছিলেন। ১৯৪৭-এর দেশ বিভাগ ও তজ্জনিত জীবনযন্ত্রণা, মধ্যবিত্ত মানুষের ছিন্নমূল অস্তিত্ব, যন্ত্র ও মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক বিচার এবং শত দুঃখ ও হতাশার ব্যর্থতা সত্ত্বেও অপরাজেয় মানুষের এক উজ্জ্বল ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের প্রতি সুদৃঢ় আস্থা—এই সবই ছিল তাঁর ছবির মূল উপজীব্য। ঋত্বিক ঘটকের ৭৫ বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে তার প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য হিসেবে এই সংকলন গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। সম্পাদনা করেন চলচ্চিত্র বিষয়ক প্রখ্যাত প্রাবন্ধিক ও গবেষক রজত রায়। সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, মহাশ্বেতা দেবী, কুমার সাহানি, সফদার হাসমি, সুপ্রিয়া দেবী, মাধবী মুখােপাধ্যায় সহ বহু বিশিষ্ট মানুষের ঋত্বিক সম্পর্কিত মূল্যায়ন যেমন রয়েছে, তেমনি তার ছবিগুলি নিয়ে রয়েছে বিশিষ্ট সমালােচকদের মননশীল বিশ্লেষণ। বহুদিন দুষ্প্রাপ্য থাকার পর বইটির বর্তমান অখণ্ড সংস্করণ পাঠকের কাছে আগের মতােই মূল্যবান বলে বিবেচিত হবে।