এক হিসেবে বিচার করে দেখলে কবির কাছে অভিভাবক কবি নিজেই। এই দু- এর মেলবন্ধনেই তো সাফল্য-সম্ভব হয়ে ওঠে একটি কবিতার ভবিতব্য। সমস্ত বিবেচনা ও বিচার এই যে আমরা মহাকালের দরবারে ঠেলে দিই, পরোক্ষে ও আসলে সে পাঠকই। কবিতার সবচেয়ে নির্ণায়ক ভাষ্যকার ও ভবিষ্যদ্বক্তা কিন্তু দীক্ষিত পাঠক ছাড়া আর কেউ নন। আর সেই পাঠককেই কয়েকটি প্রশ্ন ও প্রসঙ্গের সৌজন্যে উৎসুক করে তোলাই এ-গ্রন্থে গ্রথিত প্রবন্ধগুচ্ছের মৌল অন্বিষ্ট। পাঠকই পারে কবিতার ঘরসংসার আর তার সদস্যদের ওপর আলো ফেলতে, চোখ রাখতে দিগন্তের চেয়েও একটু দূরে, সিদ্ধান্ত নিতে কোন পথে সম্ভাব্য হবে এই মুহূর্তের কবিতার ঈপ্সিত ক্রমমুক্তি, অজস্র অ-কবিতার ভিড়ে কীভাবে স্থায়িত্ব পাবে হাতে-গোনা কয়েকটি উত্তীর্ণ কবিতা। কিংবা অন্ধকার সময় পেরিয়ে কোন চোখ দিয়ে একজন কবি দেখে নেবেন অনাগত দিনের আলোর উৎসার। আবারও বলি, কবিতার মুখ্য আবিষ্কারক ওই পাঠকই, তিনি জানিয়ে দিতে পারেন, একমাত্র কবিতার শরীরেই অপ্রত্যাশিত গুরুচণ্ডালির শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ঘটে কীভাবে, গাছ আর বৃক্ষ কখন সমার্থক নয়, শুধুমাত্র গিমিক আর প্রযুক্তিবিজ্ঞানের কৃত্রিম শব্দজগৎ, তার হাতছানি কবিতাকে কতটা দিগ্ভ্রান্ত করে তুলতে পারে। এই সমস্ত উন্মোচক প্রতিবেদনেরই পরিচায়ক এ-বইয়ের প্রবন্ধমালা ।