"ফার্স্ট বয়দের দেশ" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ বিভিন্ন বঞ্চনাগুলাে কীভাবে শ্রেণি, জাতি ও লিঙ্গ-পরিচিতির সঙ্গে আন্তঃসম্পর্কের সূত্রে আবদ্ধ? কীভাবে আমাদের রাজনৈতিক নেতারা কী করতে হবে সে ব্যাপারে বাগাড়ম্বরে ভরা। বক্তৃতা দিতে যতটা দড়, সেগুলােকে কাজে পরিণত করতে ততটাই নিষ্কর্মার চেঁকি? কীভাবে আমরা ধর্মীয় রং না চাপিয়েই সংস্কৃত ও প্রাচীন ভারত বিষয়ে ভাবতে পারি? কেন বিশ্বের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয় নালন্দাকে পুনরুজ্জীবিত করা দরকার? ফার্স্ট বয়দের দেশ হচ্ছে অমর্ত্য সেনের ভারত-ইতিহাসের অনুধাবন এবং তার ভবিষ্যতের দাবিগুলাে নিয়ে অতীত ও বর্তমান বিষয়ক বুদ্ধিচর্চার পথ চলা। সংকলনের অন্তর্ভুক্ত প্রবন্ধগুলাের মূল ভাবের মধ্যে পড়ে। ভারতে জমাটবাঁধা চরম অসাম্যের প্রকৃতি এবং তা থেকে মুক্তির খোঁজ। ভাল মানের বিদ্যালয় শিক্ষার একটা বড় পাওনা হচ্ছে, ভারত যে বিশ্ব-সভ্যতার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, এই বােধটা গড়ে ওঠীসঅথচ বহু লােকই বিদ্যালয়শিক্ষার সুযােগই পান না। বিশ্ব যােগাযােগ ও আদান প্রদানে ভারত বরাবরই অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে সাড়া দিয়ে এসেছে। এই ক্ষেত্রে তার নিজস্ব অবদানগুলােও বিপুল: জ্যোতির্বিজ্ঞানের যুক্তির শৃঙ্খলায় গড়ে ওঠা। বিভিন্ন পঞ্জিকা থেকে শুরু করে দাবাখেলার। আবিষ্কার এবং আধুনিক গণিতের নানা শাখার সূচনা পর্যন্ত নানা ক্ষেত্রে তার বিস্তার। এই সংকলনে অমর্তর বিচার বিশ্লেষণের বিষয় হচ্ছে ন্যায্যতা, পরিচিতি, বঞ্চনা, বিবিধ অসাম্য, লিঙ্গসম্পর্ক, রাজনীতি, শিক্ষা, সংবাদমাধ্যম, এবং অগ্রাধিকারগুলাের নির্ধারণ। সাধারণ পাঠকের নাগালের মধ্যে থেকেও এই পথ-প্রবর্তক লেখাগুলাে অমর্ত্যর বিভিন্ন দিকনির্দেশক কৃতিগুলাের অন্তর্বস্তুকে তুলে ধরে।
অমর্ত্য সেন (Amartya Sen , জন্ম ৩রা নভেম্বর, ১৯৩৩) একজন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ভারতীয় বাঙালী অর্থনীতিবিদ ও দার্শনিক। দুর্ভিক্ষ, মানব উন্নয়ন তত্ত্ব, জনকল্যাণ অর্থনীতি ও গণদারিদ্রের অন্তর্নিহিত কার্যকারণ বিষয়ে গবেষণা এবং উদারনৈতিক রাজনীতিতে অবদান রাখার জন্য ১৯৯৮ সালে তিনি অর্থনৈতিক বিজ্ঞানে ব্যাংক অফ সুইডেন পুরস্কার (যা অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার হিসেবে পরিচিত) লাভ করেন। অমর্ত্য সেনই জাতিসংঘের বিভিন্ন দেশের শিক্ষা এবং মানব সম্পদ উন্নয়ন সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার জন্য মানব উন্নয়ন সূচক আবিষ্কার করেন। তিনিই প্রথম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক না হয়েও ন্যাশনাল হিউম্যানিটিস মেডালে ভূষিত হন। তিনি বর্তমানে টমাস ডাব্লিউ ল্যামন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক অধ্যাপক এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত আছেন। তিনি হার্ভার্ড সোসাইটি অফ ফেলোস, ট্রিনিট্রি কলেজ, অক্সব্রিজ এবং ক্যামব্রিজের একজন সিনিয়র ফেলো। এছাড়াও তিনি ১৯৯৮ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ক্যামব্রিজের ট্রিনিটি কলেজের মাস্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হেলথ ইমপ্যাক্ট ফান্ডের অ্যাডভাইজরি বোর্ড অফ ইনসেন্টিভ ফর গ্লোবাল হেল্থ্ এর সদস্য। তিনি প্রথম ভারতীয় শিক্ষাবিদ যিনি একটি অক্সব্রিজ কলেজের প্রধান হন। এছাড়াও তিনি প্রস্তাবিত নালন্দা আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসাবেও কাজ করেছেন।অমর্ত্য সেন এর লেখা বইগুলোর মধ্যে অন্যতম হলোঃ Development as Freedom(বাংলা অনুবাদে উন্নয়ন ও স্ব-ক্ষমতা), Rationality and Freedom,The Argumentative Indian(বাংলায় তর্কপ্রিয় ভারতীয়)এবং The Idea of Justice ,Identity and Violence The Illusion of Destiny(বাংলায় পরিচিতি ও হিংসা). অমর্ত্য সেনের লিখিত বই বিগত চল্লিশ বছর ধরে প্রায় তিরিশটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে ।