"বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা বাঙালির মুক্তি" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ বিশ্ব নন্দিত সংগ্রামী নেতা বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর গৌরবােজ্জ্বল সংগ্রামী জীবন, কালজয়ী কীর্তিকর্ম এবং ঐতিহাসিক ঘটনাবলি এবং জাতিসত্তার চেতনা মূল্যায়ন করে এ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে দুই হাজারের অধিক গ্রন্থ। এগুলাের মধ্যে রয়েছে কবিতা, প্রবন্ধ, নিবন্ধ, গল্প, ইতিহাস, গান, ছড়া, গীতিআলেখ্য, পুঁথি, গ্রন্থপঞ্জি, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ইত্যাদি। বাঙালি জাতির হাজার বছরের কাঙ্খিত স্বাধীনতার দীর্ঘদেহী স্বপ্নপুরুষ, শােষিত-বঞ্চিত, নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের মুক্তির ইতিহাসের কিংবদন্তী বঙ্গবন্ধু ছাত্রজীবন থেকেই অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে সাহসী সংগ্রামের নেতৃত্ব প্রদান করেন। ১৯৪৭ সালে সাম্যেরবাণী উপেক্ষিত হয়ে ধর্মভিত্তিক দ্বি-জাতিতত্ত্বের সমীকরণে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পূর্ববাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের অধিকার হরণ, মানবাধিকার ক্ষুন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর চরম আঘাত হানায় পাকিস্তানিদের হীন মনােবৃত্তির বিরুদ্ধে সিংহের মতাে গর্জে ওঠে বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠ। স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বীর বাঙালির রক্তাক্ত ইতিহাসের সংগ্রামীপুরুষ শেখ মুজিবুর রহমান ২৩ বছর নিরলস সাধনা, নিরবিচ্ছিন্ন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে সম্ভ্রমহারা বােনের বােবাকান্নার অশ্রু আর মুক্তিসেনার রক্তে রঞ্জিত স্বপ্নে তিলে তিলে সংগঠিত করেছেন জাতিকে। বাঙালির বঞ্চিত ব্যথায় তার বুকের পাঁজরে এঁকেছেন লাল সবুজের বিজয় পতাকা। বুকের রক্তে লিখেছেন মানবমুক্তির মহাকাব্য ও অসমাপ্ত আত্মজীবনী। আপােষহীন নেতৃত্ব এবং সফল সংগ্রামী নেতা হিসাবে তিনি পেয়েছেন বাঙালির হৃদয় নিঃসৃত প্রাণের অর্ঘ বঙ্গবন্ধু উপাধী। সংগ্রাম মুখর জনতার স্বতঃস্ফূর্ততায় তিনি আমাদের জাতির পিতা। ইতিহাসের দীর্ঘতম পথ-পরিক্রমায় বাঙালির গণরায়ে নির্বাচিত অবিসাংবাদিত মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে চিরস্মরণীয় এক জনসমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গে দাঁড়িয়ে তার বজ্রকণ্ঠে স্বাধীনতার মূলমন্ত্র প্রদান করেন। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। এই অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে গােটা বাঙালি জাতি স্বাধীনতার চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হয়। অসাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু ছিলেন আপােষহীন এক বিপ্লবীপ্রাণ। শােষণ বঞ্চনাহীন ও ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত সােনার বাংলা গড়ার দৃঢ় প্রত্যয়ে সশস্ত্র প্রতিরােধ যুদ্ধে তাঁর নেতৃত্বে সর্বস্তরের মুক্তিকামী মানুষ এবং জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযােদ্ধারা ঝাপিয়ে পড়ে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বীর বাঙালি স্বপ্নের স্বাধীনতা ও চূড়ান্ত বিজয় লাভ করে। মহাকালের মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা পেয়েছি মায়ের মতাে মাতৃভূমি বাংলাদেশ। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ টুঙ্গিপাড়ায় তাঁর জন্ম। আগামী ২০২০ সালে তাঁর। জন্ম শতবার্ষিকী। এ উপলক্ষে দেশ বরেণ্য প্রাবন্ধিকদের নির্বাচিত নিবেদন ও শ্রদ্ধার্ঘ বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা বাঙালির মুক্তি প্রবন্ধ গ্রন্থ প্রকাশের এ ক্ষুদ্র প্রয়াস মাত্র। শেকড় সন্ধানী গবেষক ও পাঠকের কাছে এ গ্রন্থটি সমাদৃত হবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
কবি অসীম সাহার জন্ম নেত্রকোনা শহরের মামাবাড়িতে। তার বাবা প্রয়াত অখিল বন্ধু সাহা, মা প্রয়াত প্রভা রানী সাহা। ছয় ভাই-বােনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। তাঁর পিতপুরুষের ভিটে মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় থানার তেওতা গ্রামে। তবে দার্শনিক পিতার চাকরির সূত্রে মাদারীপুরে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু। সেখানেই বিদ্যালয়, উচ্চবিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়ের পড়াশুনা শেষ করে ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। অসীম সাহার লেখালেখি-জীবনের শুরু ১৯৬৪ সালে। ১৯৬৫ সালে জাতীয় দৈনিকে লেখা ছাপার মধ্য দিয়ে আজ পর্যন্ত অব্যাহতভাবে কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ছড়া, কিশাের কবিতা প্রভৃতি লিখে চলেছেন। তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৩৫টি । লেখালেখির পাশাপশি বিগত আটচল্লিশ বছর ধরে তিনি দেশের মূলধারার পত্রিকাসমূহে সাংবাদিকতাও করে আসছেন। শিল্পের সাধনায় নিবেদিতপ্রাণ এই কবি-শিল্পী এ-পর্যন্ত বাংলা একাডেমি সাহিত্যপুরস্কার, আলাওল সাহিত্যপুরস্কার, কবিতালাপ পুরস্কার, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পুরস্কার, রূপসী বাংলা পুরস্কার (পশ্চিমবঙ্গ), কোলকাতা আন্তর্জাতিক লিটল ম্যাগাজিন পুরস্কার, কবিতালাপ পুরস্কার এবং আইএফআইসি ব্যাংক সাহিত্যপুরস্কার, বঙ্গবন্ধু স্মারক-পুরস্কারসহ বহু পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন। এছাড়াও তিনি চলচ্চিত্রে গীতিকার, সুরকার, অভিনেতা ও টিভি চ্যানেলের উপস্থাপক হিসেবেও কাজ করেছেন। তিনি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের সাবেক পরিচালক।