'মন ভাঙা আর মসজিদ ভাঙা সমান’, ‘কারো মনে আঘাত দিলে সে আঘাত লাগে কাবার ঘরে’, ‘প্রেম স্বর্গীয় উপাদান, ভালোবাসা আসে স্বর্গ থেকে,’ ‘ইউসুফ নবি প্রেম করেছেন, আমরা করলে দোষ কী’ ইত্যাকার নানান মুখরোচক ছন্দে গন্ধে আধুনিক তরুণ তরুণীদের যৌবনে এখন ভরা বর্ষাকাল। তাদের টইটম্বুর তারুণ্য-নদীর তীব্র জোয়ারে ছলাৎ ছলাৎ ঢেউ। এই ঢেউ আছড়ে পড়ছে বন্দরে-কন্দরে, গ্রামে-শহরে সর্বত্র। যৌবনের উত্তাল তরঙ্গে ভেসে যাচ্ছে সভ্যতার শক্ত পাটাতন। ধসে পড়ছে শ্লীলতা আর শিষ্টাচারের সুদৃঢ় প্রাসাদ। তারুণ্যের আঙিনায় আজ ফণা তুলে আছে বিষাক্ত কালসাপ। তারই বিষছোবলে সভ্যতা আর শ্লীলতা নীলবর্ণ ধারণ করে আছে। ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়ছে সোনালি সম্ভাবনার অপার সম্পদ- যুবসমাজ। সন্ত্রাস, রাহাজানি, লুটপাট, খুন আর পাপাচারে প্লাবিত সমাজ নিজেই বিলাপ দিতে বাধ্য হচ্ছে। যুবকদের হাত আজ খুনের রক্তে রঞ্জিত, বিষাক্ত। এই যুবক-যুবতিরা যদি সঠিক আলোর দিশা পায়, তাদের নাগালে যদি থাকে সত্যের দীপশিখা; তাহলে তারা অন্তত নিজের জীবনটা ভয়ঙ্কর আঁধারের নিকষ অমানিশা থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হবে। আর তারা মুক্তি পেলে মুক্তি পাবে পরিবার, সমাজ, দেশ ও জাতি। সত্য-সুন্দর তারুণ্য আজ সোনার হরিণ। এই তারুণ্যকে জাগিয়ে তুলতে এবং যুবক-যুবতি তথা সকল নারী-পুরুষের কাছে যুগোপযোগী মুক্তির পয়গাম পৌঁছে দিতে সুপরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন মিসরের দরদি সাহিত্যিক শায়খ ড. আলী তানতাবী রহ.। তিনি মানবতার কা-ারির বেশে আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্বের যুবক-যুবতিদের। তাদের মুক্তির পথ আবিষ্কার করেছেন নিষ্ঠার সাথে, দরদি মনে। দিয়েছেন চমৎকার সব টিপস্ ও নানা প্রেসক্রিপশন। ব্যক্তিজীবনে আদর্শ মানুষ হয়ে ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন নাজাতলাভের ভিন্ন স্বাদের চমৎকার সেই সব টিপস্ই ‘লাভ মেরিজ’ শিরোনামে সংকলিত। আশা করি টক-মিষ্টি-ঝাল ভরা এ বইটি সকলের প্রাণের খোরাক জোগাবে।
বিংশ শতাব্দীর এক সমাজচিন্তক দার্শনিক ড. শায়খ আলী তানতাবী। ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে সিরিয়ার দামেশক নগরীতে তাঁর জন্ম। পৈত্রিক আবাস মিসরের তানতা শহর হওয়ায় তানতাবী নামেই তিনি সমধিক পরিচিত। ছাত্রজীবনেই তুখােড় মেধার কারণে তিনি গবেষক শিক্ষকগণের দৃষ্টি কাড়েন। সেকালে গবেষণা ও জ্ঞানসাধনায় তার পারিবারিক ঐতিহ্য ছিল ঈর্ষণীয়। সেই পরিবারেই তিনি ইসলামি ও সাধারণ শিক্ষার সমন্বিত জ্ঞান অর্জন করে ঐতিহ্যের তিলকে সােনার প্রলেপ আঁটেন। সতেরাে বছর বয়স। থেকেই বিভিন্ন পত্রিকায় তাঁর গবেষণামূলক প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও গল্প প্রকাশ হতে থাকে। ১৯৩৬ সালে সাম্রাজ্যবাদীদের জুলুম ও শােষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে তিনি ইরাক গমন করেন। সুদীর্ঘ পাঁচ বছর পর দামেশকে ফিরে এসে বিচারক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পর্যায়ক্রমে যােগ্যতার সিঁড়ি বেয়ে তিনি প্রধান বিচারপতির আসন অলঙ্কৃত করেন। আর লেখালেখি! সে তাে তার নেশা। এ নেশা তার মজ্জার সাথে মিশা। একটু সময় পেলেই এ চিন্তাবিদ কাগজ কলম হাতে লিখতে বসে যেতেন। তাঁর জ্ঞানের নিগুঢ় চশমায় ধরা পড়ে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঘাপটি মেরে থাকা অসঙ্গতির কালাে পাহাড়। সেই অমানিশা দূর করতে তিনি। জ্বালান নানান রঙের জ্ঞানের মশাল। সেই আলােয় বিদুরিত হয় শত প্রকারের। আঁধার-অজ্ঞানতা; সম্বিৎ ফিরে পায়। হতাশাচ্ছন্ন জাতি। গবেষণামূলক লেখালেখির খ্যাতির মধ্য দিয়ে তিনি মক্কা মােকাররমা শরিয়া কলেজের অধ্যাপক নিযুক্ত হন। বিভিন্ন মিডিয়ায় যুগ-জিজ্ঞাসার সমাধানমূলক অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। পাশাপাশি নিয়মিত পত্র-পত্রিকায় কলাম লেখা, বিষয়ভিত্তিক গ্রন্থ প্রণয়ন আর বিভিন্ন মাদরাসা-কলেজে দরসদানও চলতে থাকে সমান গতিতে। ১৯৯৯ সালে ৯০ বছর বয়সে এ শায়খ মক্কা নগরীতে ইন্তেকাল করেন।