বাংলা কবিতার একটি বাণিজ্যিক রূপ ঠিক কবে শুরু হয়েছে তা বলা মুশকিল। কবিতা লিখে নানা উপহার, পদ ও খ্যাতি পাবার ঘটনা কম নয়। দৈনিক কিংবা বিভিন্ন পত্রপত্রিকার অনলাইনে কবিতা প্রকাশিত হলে এখন মোটামুটি ভালোই একটা সম্মানী পাওয়া যায়। কিন্তু এ দিয়ে কবির জীবনধারণ করা সম্ভব নয়। তবে এতোকিছু মাথায় রেখে তো আর কাব্যচর্চায় উদয়অস্ত লেগে থাকেন না কবি। কবিসত্তার মধ্যে যে বিমূর্ত আন্দোলন তা প্রকাশ করতে গিয়ে আলোচিত এ বইটির কবি নাজমা আহমেদ লিখেন- ‘অপরের সূক্ষ্ণ শ্লেষ, ভ্রুকুটি বা বিদ্বেষ/কবিকে করে না পরাহত/কবি চির অভিমানী সংবেদী;/মনের গভীরে সে ক্ষত বয়ে চলে নিরবধি।/প্রেম অপ্রেম আর আশ্লেষেই আবিষ্ট কবি/দুর্জনের অপমানে আঘাতে দীর্ণ নয়/কবির কঠিন-কোমল প্রাণ,/নিজের সাথেই যার নিয়ত সংগ্রাম।’ (কবিসত্তা/পৃষ্টা-৫৮) ‘কবির আঙুলে ফোটে রক্ত গোলাপ’ বইটি প্রকাশিত হয়েছে ২০১৮ সালের অমর একুশে বইমেলায়। ৬৪ পৃষ্টার এ বইটিতে রয়েছে ৫২ টি কবিতা। কবিতাগুলো আলাদা আলাদা শিরোনামে সূচিবদ্ধ হলেও কবির যাপিত জীবনের ছায়া সমানভাবে পাওয়া যাবে কবিতাগুলোর মধ্যে। কবি মাত্রই স্বতন্ত্র চিন্তা আর নতুনত্তে¡র প্রতীক। এমন করে আগে কেউ বলেনি এ কথা। এমন করে প্রকাশিত হয়নি এমন শব্দমালা। ওরা ছিন্নমূল পথশিশু, ধর্ষণ যখন বিনোদন, বীর নারী, বীরাঙ্গনা, জাগো মানবতা জাগো, একুশ এসো ফিরে, জন্মভূমি অপরূপা বাংলাদেশ কবিতাগুলোর মধ্যে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও দেশের সমসাময়িক অনেক ঘটনা চিত্রায়িত হয়েছে। নানা চিত্রকল্প ও উপমার ব্যবহার কবিতাকে করেছে আরও বেশি দৃঢ়। কবির শব্দ ব্যবহারে প্রতিভা লক্ষণীয়। ‘কবির আঙুলে ফোটে রক্তগোলাপ/কৃষ্ণচূড়া হেসে ওঠে থোকায় থোকায়/মেঘবতী শব্দরা রঙিন পাখনা মেলে (ম্যালে)/উজ্জ্বল সাদা ক্যানভাসে।/ কবির আঙুলে কলম তো নয়,/গর্জে ওঠে ঝলসানো তরবারি! টর্নেডো! মাইন;/ক্রোধে ক্ষোভে দ্রোহে প্রতিশোধে জ¦লে/শানিত শব্দে বজ্র বিদ্যুৎ খেলা করে।’ (কবির আঙুলে ফোটে রক্তগোলাপ/পৃষ্টা-৩৭) কবিতার নিগূঢ় রহস্য ও ভাবের বৈভব কবিতার পাঠককে আচ্ছন্ন করে রাখে। কবিতাপাঠ পরবর্তী যে বোধের সঞ্চয় করে পাঠক তার মনে তা হলো পুঁজি। এই পুঁজির কোনো খরচ হয় না। কবি নাজমা আহমেদের কবিতা স্বপ্নময় পাঠক মনকে প্রলুদ্ধ করবে ও একই সাথে জাগিয়ে তুলবে মানবিকবোধ। কবির কবিতা দিন দিন আরো বেশি উজ্জ্বলতা ছড়াক এ প্রত্যাশা রইল।