"অলাতচক্র (তারানাথ তান্ত্রিকের গল্প)" নিখিল ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিরহস্যের কার্যকারণ যতদিন আমাদের কাছে অজানা থাকবে, ততদিনই আত্মা পরলোক এবং দৈবীশক্তি সম্বন্ধে মানুষের বিশ্বাস অনড় ও অচল থেকে যাবে। কতিপয় ব্যক্তি বিজ্ঞাননির্ভর হয়ে অবিশ্বাসে সব কিছু উড়িয়ে দিতে পারেন, তবু দেখা গেছে চরম বিপদে বা সংকটে সেই সব মানুষই দৈবীশক্তির ওপর ভরসা করছেন। ‘অলাতচক্র’ গ্রন্থের পটভূমি এই আলৌকিক বা আধিদৈবিক ঘটনার ওপর দাঁড়িয়ে। মূল চরিত্র তারানাথ, যাকে পাঠকেরা তারানাথ তান্ত্রিক বলে জারের অনেক আগে থেকেই। তাঁর কিছু দৈবীশক্তিসম্পন্ন মানুষ। এঁদের অভিজ্ঞতা এবং সহযোগিতা গ্রন্থের কাহিনী-কথককে কীভাবে আবিষ্ট করেছে এবং রক্ষা করেছে নানা বিপদ থেকে তারই মনোমুগ্ধকর, কখনও বা রোমহর্ষক বিবরণ এই ‘অলাতচক্র’ গ্রন্থটি।
‘তারানাথ তান্ত্রিক’ বইয়ের লেখক কথা: এই গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত কাহিনী আমার চিন্তাপ্রসূত নয়, বেশিরভাগই অভিজ্ঞতাপ্রসূত। অলৌকিক এবং অতিলৌকিক ঘটনার দিক শেষ হয়ে যায়নি, কেবল অনেক সময় আমরা তাদের অলৌকিক বলে চিনে নিতে পারি না-এই যা। জে. বি. এস. হ্যালডেন বলেছিলেন- সত্য যে কল্পনার চেয়েও বিচিত্র শুধু তাই নয়, আমাদের কল্পনা যতদূর পৌঁছয় সত্য তার চেয়েও অদ্ভুত। পাঠকেরা বিশ্বাস বা অবিশ্বাস যা নিয়েই পড়তে শুরু করুন না কেন, এ কাহিনীগুলি সত্য। গত আট বছর ধরে কথাসাহিত্য’ এবং অন্য পত্রিকায় তারানাথের গল্প প্রকাশিত হচ্ছিল— এখনও হতে থাকবে, তার গল্পের বুলি নিঃশেষিত হয়নি। কিন্তু তারানাথের প্রকৃত পরিচয় জানতে চাইলে আমি তার উত্তর দেবো না। পাঠকেরা আন্দাজ করার চেষ্টা করতে পারেন। পাণ্ডুলিপি প্রস্তুতির পর্যায়ে মিত্র ও ঘোষা’-এর শ্ৰীনুপেন চক্রবতীর অকৃপণ সাহায্য আমাকে অপরিশোধ্য ঋণে আবদ্ধ করেছে। কৃতজ্ঞতা উৎসাহদাতা অগ্ৰজসমান শ্ৰীভানু রায়কেও। মিত্ৰা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ঋণ আজীবনের—তাকে নতুন করে আর কি জানাব? দ্বিতীয় মুদ্রণের প্রাককথা মানুষ গল্প শুনতে ভালবাসে। সেই আদিম নিয়ানডার্থলি মানুষদের যুগেও সারাদিন শিকার আর খাদ্যসংগ্ৰহ অভিযানের পর সন্ধেবেলা গোষ্ঠীর সকলে গুহায় ফিরে এসে অগ্নিকুণ্ডের চারদিকে বসে গল্প শুনত এবং শোনাতো। এখন মানুষ চাদে-মঙ্গলে-মেষরাশিতে মহাকাশযান পাঠায়, হৃৎপিণ্ড আর কিডনী শল্যচিকিৎসা করে বদলে দেয়, কম্পিউটারের চাবি টিপে মুহুর্তে যোগাযোগ ঘটায় পৃথিবীর অপর প্রাস্তের সঙ্গে-কিন্তু চেতনার গহন-গভীরে সে এখনও গল্পখোর। বোধহয় সেজন্যই ‘তারানাথ তান্ত্রিক’-এর পুনর্মুদ্রণের প্রয়োজন হল। তারানাথের গল্প এখনও লিখে চলেছি, পাঠকেরা চাইলে হয়ত বা সেগুলিও সংকলিত হবে। বিভূতিভূষণ দুটি তারানাথের গল্প লিখে প্রয়াত হয়েছিলেন (সে দুটি এই সংকলনের অন্তর্ভুক্ত নয়), তারপর থেকে তারানাথ আমার হাতে। প্রথম থেকে ধরলে তারানাথের ধারাবাহিকতা প্ৰায় ছয় দশকের। কিন্তু তার বয়েস বাড়েনি, এখনও সে মধ্য পঞ্চাশে, থাকে মটু লেনেই, বিংশ শতাব্দীর চতুর্থ দশকের কলকাতায়-যে কলকাতা এবং তার পরিবেশ স্বপ্নবৎ মিলিয়ে গিয়েছে। “মিত্র ও ঘোষ’-এর সবিতেন্দ্রনাথ রায়, প্রদোষকুমার পাল। মণীশ চক্রবর্তী এবং অন্য সমস্ত বন্ধুদের কৃতজ্ঞতা জানাই আমার প্রতি তাদের গ্ৰীতিপূর্ণ প্রশ্রয়ের মনোভাবের জন্য। আমার অসুস্থতার কারণে প্রাথমিক পর্যায়ের প্রফ সংশোধন করে দিয়েছেন আমার সহধর্মিণী মিত্ৰা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা তো আজীবন৷ ১৭ অগ্রহায়ণ, ১৪০৮ আরণ্যক তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
Title
তারানাথ তান্ত্রিক ও অন্যান্য ভৌতিক গল্পের কালেকশন ২টি বই
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পথিকৃৎ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় বেশ কিছু কালজয়ী উপন্যাস রচনার মাধ্যমে জয় করে নিয়েছেন বাংলা ভাষাভাষী পাঠকদের হৃদয়। শুধু উপন্যাসই নয়, এর পাশাপাশি তিনি রচনা করেছেন বিভিন্ন ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, দিনলিপি ইত্যাদি। প্রখ্যাত এই সাহিত্যিক ১৮৯৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগণা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন, তবে তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল যশোর জেলায়। অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র হিসেবে তিনি শিক্ষাজীবন অতিবাহিত করেন, যার প্রমাণ পাওয়া যায় তাঁর প্রথম বিভাগে এনট্রান্স ও আইএ পাশ করার মাধ্যমে। এমনকি তিনি কলকাতার রিপন কলেজ থেকে ডিস্টিংশনসহ বিএ পাশ করেন। সাহিত্য রচনার পাশাপশি তিনি শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্মজীবন অতিবাহিত করেন। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর বই সমূহ এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলো 'পথের পাঁচালী', যা দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হওয়ার মাধ্যমে। এই উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মাণ করে প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায় অর্জন করেছেন অশেষ সম্মাননা। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর বই এর মধ্যে আরো উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো 'আরণ্যক', 'অপরাজিত', 'ইছামতি', 'আদর্শ হিন্দু হোটেল', 'দেবযান' ইত্যাদি উপন্যাস, এবং 'মৌরীফুল', 'কিন্নর দল', 'মেঘমল্লার' ইত্যাদি গল্পসংকলন। ১০ খণ্ডে সমাপ্ত ‘বিভূতি রচনাবলী’ হলো বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর বই সমগ্র, যেখানে প্রায় সাড়ে ছ’হাজার পৃষ্ঠায় স্থান পেয়েছে তার যাবতীয় রচনাবলী। খ্যাতিমান এই সাহিত্যিক ১৯৫০ সালের ১ নভেম্বর বিহারের ঘাটশিলায় মৃত্যুবরণ করেন। সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি মরণোত্তর 'রবীন্দ্র পুরস্কারে' ভূষিত হন।