“মুক্তির জন্যে যুদ্ধ" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ বাঙালি জাতির জীবনে অবিস্মরণীয় সময় ১৯৭১ আর অতুলনীয় অর্জন মহান স্বাধীনতা। দীর্ঘ ন'মাসের সেই অসম যুদ্ধে যারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, কর্নেল শাফায়াত জামিল বীর বিক্রম তাদেরই একজন। বিভিন্ন রণাঙ্গনে তার নেতৃত্বে মুক্তিযােদ্ধারা জীবন বাজি রেখে লড়াই করেছে। মাইলের পর মাইল এলাকাকে করেছে শত্রুমুক্ত। ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ কালাে রাতে পাক হানাদাররা যখন উন্মত্ত নেকড়ের মতাে ঝাপিয়ে পড়ে এই সবুজ শ্যামল বাংলায়—তখনই তৎকালীন মেজর বীরযােদ্ধা শাফায়াত জামিল বিদ্রোহ ঘােষণা। করেন এবং ২৭ মার্চ তার অধীনস্থ চতুর্থ বেঙ্গলের সৈনিকদের নিয়ে প্রকাশ্যে হানাদারদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচন থেকে শুরু করে একাত্তরের ২৫ মার্চ পর্যন্ত অসংখ্য ঐতিহাসিক ঘটনার স্মৃতি আর দীর্ঘ ন'মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধেরই এক জীবন্ত চিত্র মুক্তির জন্যে যুদ্ধ। যুদ্ধ। পূর্ববর্তী বহু ঘটনা তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন, পাকবাহিনীকে খুব কাছে থেকে দেখেছেন, চক্রান্তের স্বরূপ জেনেছেন যুদ্ধের আগেই। তাই তাঁর স্মৃতি ব্যতিক্রমীই বটে। এই বীরযােদ্ধা। বিভিন্ন রণাঙ্গণে নেতৃত্বদানের লােমহর্ষক সাহসী ঘটনাবলীর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ। বাঙালি যে কেবল হানাদার বাহিনী কর্তৃক নির্যাতিত হয়েছে, একতরফা মার খেয়েছে—প্রচলিত এ ধারণা ভ্রান্ত। সেই দিনগুলােতে হানাদারদের বিরুদ্ধে জীবন বাজি রেখে কী মধুর প্রতিশােধ নিয়েছে বাংলার বীর সন্তানের, তারই অভূতপূর্ব ঘটনার এক চমকপ্রদ কাহিনি প্রতিফলিত হয়েছে এই গ্রন্থে। সমকালীন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বইয়ের মধ্যে মুক্তির জন্যে যুদ্ধ’ নিঃসন্দেহে ব্যতিক্রম।
Cornel Safayet Jamil (Retired) (জন্ম: ১ মার্চ, ১৯৪০ - মৃত্যু: ১১ আগস্ট, ২০১২) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে। তাঁর বাবার নাম এ এইচ এম করিমউল্লাহ এবং মায়ের নাম লায়লা জোহরা বেগম। তাঁর পিতা এএইচ করিমুল্লাহ ছিল ইস্ট পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস (জুডিশিয়াল) অফিসার ছিলেন। তার স্ত্রীর নাম রাশিদা শাফায়াত। তাঁদের তিন ছেলে। শাফায়াত জামিল ঢাকা কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমী থেকে শিক্ষা গ্রহন করেন। তিনি ঐ একাডেমীতে জেনারেল পারভেজ মুশাররফের (পরবর্তীতে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট) সহপাঠি ছিলেন। শাফায়াত জামিল ১৯৬৪ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে কমিশনপ্রাপ্ত হন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি চতুর্থ বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত ছিলেন। এই রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল কুমিল্লা সেনানিবাসে। সম্ভাব্য ভারতীয় আগ্রাসনের কথা বলে পাকিস্তানি সেনারা এই রেজিমেন্টের দুটি কোম্পানিকে ১৯৭১ সালের ১ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পাঠায়। একটি কোম্পানির নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। ২৬ মার্চ পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণের সংবাদ পেয়ে তিনি তাঁর ও অপর কোম্পানির সবাইকে নিয়ে বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। প্রতিরোধপর্বে আশুগঞ্জ-ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও আখাউড়া-গঙ্গাসাগর এলাকায় যুদ্ধ করেন। এরপর ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মতিনগরে যান। তাঁকে তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি দেওয়ানগঞ্জ, সিলেটের ছাতকসহ আরও কয়েক স্থানে যুদ্ধ করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে, জামিল লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে উন্নীত হন এবং বীর বিক্রম পদক লাভ করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি কর্নেল পদে উন্নীত হন এবং ৪৬ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার নিযুক্ত হন । ৩ নভেম্বর, ১৯৭৫ তারিখে তিনি এবং খালেদ মোশাররফ খন্দকার মোস্তাক আহমদের বিরুদ্ধে একটি অভ্যুত্থান ঘটান । ৬ নভেম্বর মোস্তাক রাষ্ট্রপতির পদ থেকে সরে দাঁড়ান এবং বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম তার স্থলাভিসিক্ত হন। ৭ নভেম্বর এক পাল্টা অভ্যুত্থানে খালেদ মোশাররফকে হত্যা করা হয় এবং কর্নেল জামিল গ্রেফতার হন । জামিল ১৯৮০ সালের ২৬ মার্চ সেনাবাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত হন ।