সম্পাদকের কথাঃ একদিন প্রিয় নবীজি ﷺ আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসকে (রাঃ) বললেন, ‘শোনো হে বালক! আল্লাহকে হেফাজত করো, তিনি তোমাকে হেফাজত করবেন। আল্লাহকে হেফাজত করো, তাহলে তাঁকে তুমি তোমার সামনে পাবে। স্বাচ্ছন্দ্যের সময়ে আল্লাহকে জেনো, তাহলে তোমার বিপদের সময় তিনি তোমাকে জানবেন। যখন কিছু চাইবে, আল্লাহর কাছেই চাইবে। যখন সাহায্য চাইবে, আল্লাহর দিকেই ফিরবে। যা যা ঘটবে, (তা লিখার পর) কলম শুকিয়ে গেছে। সমগ্র সৃষ্টিজগৎ একত্রিত হয়ে যদি তোমার এমন কোনো উপকার করতে চায়, যা আল্লাহ নির্ধারিত করে রাখেননি; তাহলেও তারা তা করতে সমর্থ হবে না। আর তারা যদি তোমার এমন কোনো ক্ষতি করতে চায়, যা আল্লাহ নির্ধারিত করে রাখেননি; তাহলেও তারা তা করতে সমর্থ হবে না। জেনে রেখো, তুমি যা অপছন্দ করো তা ধৈর্যের মাধ্যমে সহ্য করার মধ্যে রয়েছে মহাকল্যাণ। বিজয় আসে ধৈর্যের মাধ্যমে; কষ্টের সাথেই আসে স্বস্তি; আর কাঠিন্যের সাথে আসে সহজতা।” . আক্ষরিক অর্থে অতি সহজ স্বাভাবিক উপদেশবার্তা মনে হলেও বাস্তবে তা মোটেই নয়। তার প্রমাণ এই বই। এই পুরো বইটাতে ইবনে রজব হাম্বলী (রাহিমাহুল্লাহ) হাদিসটার ব্যাখ্যা করেছেন। পড়তে পড়তে যত সামনে আগাবেন বিস্ময় জাগবে। একদিকে অতি জরুরী ফরজিয়াত ইলম যেমন জানা যাবে, একইসাথে আত্মার চমৎকার ইসলাহ হয়ে যাবে। এমন এমন হৃদয়কাড়া সব আছার, কাউল আর ইলমের পসরা সাজানো প্রতি পরতে পরতে, নিজেকে খুব তুচ্ছ মনে হবে, নিজেকে পাল্টে ফেলার এক অদম্য বাসনা অন্তরে চেপে বসবে ইনশাআল্লাহ।
ইমাম ইবনে রজব আল-হাম্বলী ছিলেন একজন মুসলিম বিদ্বান। তার পুরো নাম: জাইনুদ্দীন আবুল ফারাজ আব্দুর রহমান ইবনে আহমাদ ইবনে আব্দুর রহমান ইবনেুল হাসান ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আবি আল-বারাকাত মাস'উদ আস-সুলামি, আল-বাগদাদি, আল-হাম্বলী। তিনি ইবনে রজব নামেই সুপরিচিত। ইমাম ইবনে রজব জন্মগ্রহণ করেন বাগদাদে ১৩৩৫ খ্রিষ্টাব্দে (৭৩৬ হিজরি)। তার বয়স যখন পাঁচ, ইবনে রজবের পরিবার দামেস্কে স্থানান্তরিত হয় তিনি ইবনে আন-নাকীব (মৃত্যু ৭৬৯ হিজরি), আস সুবকি, আল ইরাকি (৮০৬ হিজরি), মুহাম্মাদ ইবনে ইসমাইল আল খাব্বাজ এবং প্রমুখ বিদ্বানের কাছে শিক্ষা গ্রহণ করেন। ইমাম আন-নববী রহঃ কর্তৃক রচিত প্রসিদ্ধ গ্রন্থ "চল্লিশ হাদিস" এর একটি বৃহৎ ব্যাখ্যা (শরাহ) ইবনে রজব রচনা করেছিলেন (জামি' আল-উলুম ওয়াল হিকাম) যা আজ পর্যন্ত চল্লিশ হাদীছের শ্রেষ্ঠ ব্যাখ্যা গ্রন্থ হিসেবে সমাদৃত হয়ে আসছে। ৭৯৫ হিজরি সনের চতুর্থ রমযানের পবিত্র এক রাতে (১৩৯৩ ঈসায়ী) মৃত্যুবরণ করেন। তখন তার বয়স হয়েছিল ৫৯ বছর। মৃত্যুর পর দিন তার জানাযার সালাত অনুষ্ঠিত হয় এবং তাকে সমাহিত করা হয় বাব আস-সাগীর কবরস্থানে।