এককথায় বলতে গেলে আধুনিক সভ্যতার ধ্যান-ধারণা এবং সংস্কৃতি তথা পুরো সভ্যতাটাই ইসলামের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এটা ব্যাখ্যা করার জন্য সবচেয়ে উত্তম হবে আধুনিক সভ্যতার চিন্তাদর্শন, রীতিনীতি তথা আজকের বিশ্বায়নের সংস্কৃতিকে পর্যালোচনা করা, যার দ্বারা আমরা সবাই ব্যাপকভাবে প্রভাবিত। এটা পরিস্কার, আর যাইহোক আধুনিকতার বৈশিষ্ট্য তাওহিদ নয়, বরং তাওহিদের সম্পূর্ণ উল্টো। এটাকে শিরক হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। কিন্তু শিরক শব্দটার চেয়ে এখানে তাকছির শব্দের ব্যবহার বেশি সঙ্গত হবে। তাওহিদের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে: কোনোকিছুকে এক বানানো, আর পারিভাষিক অর্থে: সর্বক্ষেত্রে মহান আল্লাহর একত্বকে প্রতিষ্ঠিত করা। তাকছিরের আভিধানিক অর্থ: জিনিসকে বহু হিসেবে সাব্যস্ত করা। আধুনিক সভ্যতার কোনো নির্দিষ্ট ক্ষেত্র, দিক, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য নেই। নেই কোনো সুনির্দিষ্ট মূলনীতি, জীবনদর্শন। অন্যকথায় এখানে নির্দিষ্ট কোনো ঈশ্বর নেই। আধুনিক বিশ্ব বহু ঈশ্বরের পূঁজো করে। আর এই বহু ঈশ্বরের সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলছে। লোকদের কাছে যেটাই আবেদনময়ী হয়, সেটাকেই তারা ঈশ্বর হিসেবে পূঁজো করে এবং একইসাথে তারা বহু ঈশ্বরের পূঁেজা করে। আমার এই কথার সত্যতা ধরা পড়বে যখন পশ্চিমা বিশ্ব জগতের সাথে মোটামুটি ১৮৫০ সাল পর্যন্ত চলে আসা ইসলামি সভ্যতাকে আমরা তুলনা করবো। ইসলামি সভ্যতার প্রধান বৈশিষ্ট্য তাওহিদের চূড়ান্ততা। চিন্তার ঐক্য, সামঞ্জস্যতা, ভারসাম্য হচ্ছে প্রধান নিয়ামক। বিখ্যাত মুসলিম চিন্তাবিদগন একইসাথে বহু জ্ঞান ও বিদ্যায় পারদর্শী হতেন এবং তারা এসমস্ত জ্ঞানকে একই গাছের বিভিন্ন শাখা হিসেবে বিবেচনা করতেন। এই গাছটি হচ্ছে তাওহিদের বৃক্ষ। ফলে জোতিষবিদ্যা ও প্রাণিবিদ্যা চর্চা, কিংবা পদার্থবিদ্যা ও নৈতিকতা, গণিত ও আইন বা আধ্যাত্মবাদের চর্চা কখনো সাংঘর্ষিক হত না। যেহেতু সবকিছুই মহান আল্লাহর সর্বব্যাপী বাস্তবতায় আচ্ছাদিত হয়ে আছে। কিন্তু আধুনিক পশ্চিমা বিশ্ব এটার সম্পূর্ণ বিপরীত। বর্তমানের আধুনিক পন্ডিতেরা কোনো ক্ষুদ্র একটি বিষয়ে পারদর্শী হয়ে থাকেন। দিনদিন তথ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সেটার সাথে তাল মিলিয়ে শাখা-প্রশাখার সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। জ্ঞানের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখাতে কোনো ঐক্য নেই, বরং একই শাখাতে বিদ্যমান উপশাখার লোকেরা পুরো শাখা সম্পর্কে আদৌ কোনো ধারণা রাখে না। জ্ঞানের বিভিন্ন শাখাকে তো একটি সুসামঞ্জস্যপূর্ণ ঐক্যে নিয়ে আসাটা বাতুলতা মাত্র। এতো বিশৃঙ্খলা থাকা সত্তে¡ও প্রত্যেকেই তাদের নিজস্ব ঈশ্বরের পূঁেজা করে। শূন্যতা আর হাহাকার নিয়ে তো কেউই তার জীবন অতিবাহিত করতে পারে না। তাকে কোনো না কোন লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, আশা, বাসনা, স্বপ্ন নিয়ে বাঁচতে হয়। আধুনিক লোকেরা সেসব জিনিসেরই পূঁেজা করে যারা তাদের জীবনে আশা, উদ্দীপনা, উদ্দেশ্য ও তাৎপর্য প্রদান করে। প্রাচীন পূঁেজার মূর্তি এবং আধুনিকতার পূঁজিত ঈশ্বরের মধ্যকার প্রধান পার্থক্য হচ্ছে: আধুনিকতার এসব ছোট ছোট ঈশ্বরকে কোনো একটি চূড়ান্ত ঈশ্বরের আওতায় আনা সম্ভব নয়। আর যদি সম্ভবও হয়, তখন সেই চূড়ান্ত ঈশ্বর হয় কোনো না কোনো মতাদর্শের দ্বারা উৎপাদিত। মতাদর্শের দ্বারা উৎপাদিত এই ঈশ্বর তাওহিদের নয়। তাকছিরের ঈশ্বরের সংখ্যা সীমাহীন। এদের প্রধান ঈশ্বরদেরকে উল্লেখ করতে গেলে লম্বা তালিকার প্রয়োজন হবে। এই প্রধান ঈশ্বররা হলেন: বিবর্তন, উন্নতি, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, মার্কসবাদ, স্বাধীনতা, সমতা। কিন্তু সবচেয়ে বিপদজনক ঈশ্বর হচ্ছেন তারা, যাদেরকে চিহ্নিত করাটাই দুষ্কর। কেননা আমরা সেসবকে অনেকটা পানি-বাতাসের মতো নিত্য ব্যবহার্য বস্তু হিসেবেই গ্রহণ করেছি। চলুন আমরা এই ঈশ্বরদেরকে চিহ্নিত করি: মৌলিক অধিকার , দায়িত্ব , যোগাযোগ, ভোগ , উন্নয়ন, শিক্ষা , শক্তি , লেনদেন , ভবিষ্যৎ , বৃদ্ধি , উপাদান , স্বকীয়তা , তথ্য (রহভড়ৎসধঃরড়হ), জীবনযাত্রার মান (ষরারহম ংঃধহফধৎফ), ব্যবস্থাপনা (সধহধমবসবহঃ), কাঠামো (সড়ফবষ), আধুনিকায়ন (সড়ফবৎহরুধঃরড়হ), পরিকল্পনা (ঢ়ষধহহরহম), উৎপাদন (ঢ়ৎড়ফঁপঃরড়হ), প্রগতি (ঢ়ৎড়মৎবংং), প্রকল্প (ঢ়ৎড়লবপঃ), কাঁচামাল (ৎধি সধঃবৎরধষ), সম্পর্ক (ৎবষধঃরড়হংযরঢ়), সম্পদ (ৎবংড়ঁৎপব), ভূমিকা (ৎড়ষব), সেবা , যৌনতা, সমাধান, সিস্টেম, কল্যান, কর্ম ।
এগুলো হচ্ছে আধুনিক ঈশ্বরের সুন্দরতম ৯৯ নাম। এগুলোর জপ করাটাই আধুনিক মানুষের যিকির। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এইসব শব্দের সুনির্দিষ্ট কোনো অর্থ নেই বরং এদের জ্ঞাতার্থ আছে। আমরা এদেরকে বরং প্লাস্টিক শব্দ হিসেবে আখ্যায়িত করবো। এই প্লাস্টিক শব্দসমূহকে ক্ষমতায়ন করা হয়েছে, যারাই এদেরকে ব্যবহার করে তারা সম্মান লাভ করে। দায়িত্ব, যোগাযোগ , ভোগ, উন্নয়ন, তথ্য এ প্লাস্টিক শব্দগুলোকে ব্যবহার করে, তারাই সম্মান, মর্যাদা যশ, খ্যাতি লাভ করে, যেহেতু সে ভালো এবং সত্যের কথা বলছে। এই শব্দগুলো অন্যদেরকে চুপ করিয়ে দেবে। এমন কোন গাঁধা আছে যারা দায়িত্ব ও উন্নয়ন এর বিরোধিতা করবে? যেসব মুজতাহিদ এসব মিনি-ঈশ্বরের ব্যাপারে কথা বলেন, তারা হলেন: বিশেষজ্ঞ। প্রতিটি প্লাস্টিক শব্দ একটি রোল-মডেল স্থাপন করে এবং আমাদেরকে এটা ভাবতে উৎসাহিত করা হয়, কেবল বিশেষজ্ঞরাই এটা অর্জন করতে পারে। তাই আমাদের জীবনকে তাদের হাতে বিশ্বাস করে তুলে দিতে হবে। আমাদেরকে এই বৈজ্ঞানিক মুজতাহিদদের শাসন মেনে নিতে হবে, এবং এরা আমাদের স্বাস্থ্য, কল্যাণ, শিক্ষার জন্য শরীয়াহ প্রণয়ন করবে। লোকজন তাদের সিদ্ধান্তকে ফতওয়া হিসেবে মূল্যায়ন করে। যদি বিশেষজ্ঞরা ইজমার মাধ্যমে একমত হয় যে, উন্নয়ন নামক ঈশ্বরের ভোগ হিসেবে একটি গ্রামকে ধ্বংস করতে হবে, তবে আমাদেরকে সেটা মানা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। আর এই মুজতাহিদরাই বিশেষত সবচেয়ে ভালো জানেন। প্রতিটি প্লাস্টিক শব্দ অন্য শব্দকে সেকেলে এবং প্রাচীন হিসেবে চিহ্নিত করে। আমরা এসব ঈশ্বরদেকে পূঁজো করে গর্ববোধ কতে পারি আর আমাদের সকল বন্ধু-বান্ধব এবং কলিগরা আমাদেরকে আলোকিত মানুষ হিসেবে বিবেচনা করবে। আর যারা আগের পুরাতন ঈশ্বরকে পূঁেজা করে তারা সেটাকে ঢেকে দিতে পারে পুরাতনের সাথে নতুন ঈশ্বরকে একত্রে পূঁেজার মাধ্যমে। আবার এমন অনেক লোকই আছে যারা আগের পুরাতন ঈশ্বরের শিক্ষাকে একটু ঘুরিয়ে পালন করবে, যাতে করে এটা প্রতীয়মান হয় যে, ঐ ঈশ্বরও আমাদেরকে মৌলিক অধিকার, দায়িত্ব (পধৎব), যোগাযোগ , উন্নয়ন, শিক্ষা , জীবনমান , আধুনিকায়ন এর দিকেই আহ্বান করছে। যেহেতু এসব প্লাস্টিক শব্দের সুনির্দিষ্ট কোনো অর্থ নেই, তাই যারা এতে বিশ্বাস করে, ঐ প্লাস্টিক শব্দটি যেভাবে তাদেরকে আকর্ষণ করে তারাও সেটাকে ঐভাবেই উপলব্ধি করে। আর তাদের উপলব্ধকৃত ঐ বিশেষ আবেদনটাকে পূরণের জন্য তারা নেমে পড়ে। ধর্মীয় লোকদের এ ব্যাপারে কোনো মাথা ব্যথা নেই, তারা বরং এসব প্লাস্টিক শব্দের সাথে ধর্মীয় রং লাগায়। মূলত প্লাস্টিক ঈশ্বরের নামে সমাজের ভালো লোকেরা একসাথে সমাজকে পরিবর্তনের জন্য নেমে পড়ে, কিন্তু তারা উপলব্ধি করে না যে, তারা মূলত মানুষের তৈরি করা অদৃশ্য প্লাস্টিক মূর্তির পূঁজো করছে, পবিত্র কোরআন যেটার ব্যাপারে বলছে: (তাদের নিজেদের হাতেই তারা তা তৈরি করেছে)। আগের প্রতিটি জনপদের নিজস্ব ধরনের তাওহিদ ছিল, এমনকি লোকেরা অজ্ঞতা এবং গাফেলতির কারণে শিরকে আপতিত হত। কিন্তু আধুনিক সভ্যতাতে তাকছিরের ঈশ্বর ব্যতীত আর কিছুই নেই। আর এই ঈশ্বরগুলো তাওহিদের জন্য কোনো স্থানই বাকি রাখেনি। বর্তমানের ইসলাম যখন এই আধুনিকতার সম্মুখীন হয়, কিছু সম্মানিত ব্যতিক্রম বাদে, প্রায় সকল মুসলিমেরাই এই আধুনিক ঈশ্বরের ব্যাপারে কোনো প্রশ্নই তোলে না। বরং তারা বির্তক করে কীভাবে এ প্লাস্টিক ঈশ্বরের পূজো করা যায়। তারা ভাবে ইসলামি সমাজকে ঢেলে সাজাতে হবে, সংস্কার করতে হবে। আধুনিকতা তাকছিরের উপর ভিত্তি করে যে ধরনের জীবনমান ঠিক করে দিয়েছে তা লাভ করতে হবে, প্রগতির দরজায় আরোহণ করতে হবে, এবং পশ্চিমের কাছে নিজেদের চেহারাকে সমুজ্জ্বল করতে হবে। অন্যভাবে বলতে গেলে আধুনিক যুগের মুসলিমেরা কীভাবে শিরকে চিরতরে আচ্ছন্ন হবে তার পথ তালাশ করছে। অনেক মুসলিমই বলবে: পশ্চিমা সভ্যতা তাদের আধুনিকায়ন, ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য বেশ মূল্য পরিশোধ করছে। সেখানে সংসার, মূল্যবোধ, পরিবার ইত্যাদি সবকিছুই নষ্ট হয়েছে, এই বিপর্যয় মূলত ধর্মীয় আদর্শ, মূল্যবোধ এবং নৈতিক আদর্শ থেকে বিচ্যুতির কারণেই হয়েছে। কিন্তু ঠিক এই লোকেরাই আবার বলবে: ইসলাম সম্পূর্ণ ভিন্ন, ইসলাম প্রযুক্তি গ্রহণ করতে পারে। কীভাবে প্রযুক্তি, উন্নয়নকে গ্রহণ করতে হয় এবং একইসাথে নৈতিক জীবনযাপন করতে হয়। অন্যভাবে বলতে গেলে ইসলাম তাওহিদকে ভুলে গিয়ে তাকছিরকে গ্রহণ করতে পারে, কিন্তু নৈতিক শক্তিবলে ইসলাম কোনো ধরনের বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে না! প্রকৃতপক্ষে, বেশিরভাগ মুসলিম এইভাবে চিন্তা করে এবং তাদের এরূপ হাস্যকর অবস্থানকে উপলব্ধি করতেই পারছে না যে, মূলত তারা তাওহিদের দর্শনকে পরিত্যাগ করেছে, যেই তাওহিদ এক সময় ইসলামি সভ্যতায় প্রাণ দিতো। তারা দেখতে পাচ্ছে না যে, সবকিছুই একে অপরের সাথে সম্পৃক্ত। তারা উপলব্ধি করতে পারছে না যে, এই সমস্ত প্লাস্টিক তথা মিথ্যা ঈশ্বরের উপাসনা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ভারসাম্যকে ধূলিস্মাৎ করে দিচ্ছে। যেভাবে আল্লাহর আনুগত্য করার প্রয়োজন মানুষ যখন সেটা প্রত্যাখ্যান করে, তখন তারা তাদের সৃষ্টিগত উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারে না। ফলাফল হচ্ছে: বিশ্ব দিন দিন ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, আধুনিক পশ্চিমা বিশ্বে যদি কোনো ধরনের আকিদা-বিশ্বাস থেকে থাকে, যেটা সার্বজনীন তা হচ্ছে: এটা চিরায়ত জীবনধারাকে প্রত্যাখ্যান করা। আধুনিকতার বড় বড় নবী যেমন ডেসকার্ট, রুশো, মার্কস, ফ্রয়েড, এরা সবাই ভিন্ন ভিন্ন ঈশ্বরকে অনুসরণ করেছে, কিন্তু সবাই একটি জায়গায় একমত, তা হচ্ছে: প্রাচীন ঈশ্বর আর কোনো কাজের নয়। অন্যদিকে ইসলামের দর্শনে আল্লাহর সকল নবীরা একই প্রাচীন তাওহিদ প্রচার করেছে। বিপরীতভাবে বলতে গেলে, আধুনিক নবীরা তাওহিদ প্রত্যাখ্যানে একমত এবং তাকছিরের প্রচারে ঐক্যমত। ইসলামের দর্শনে আল্লাহ হলেন: কাদিম (প্রাচীন, অসীম)। কিন্তু আধুনিতার ঈশ্বর হলো নতুন। সদা পরিবর্তনশীল। আজ এটা তো কাল ওটা। আজ যদি কমিউনিজম হয়, তো কাল পুঁজিবাদ, বা গণতন্ত্র। প্রযুক্তির নামক সদা-পরিবর্তনমীল অমোঘ ঈশ্বর তো আছেই। আজ এই ফ্যাশন তো কাল আরেকটি ফ্যাশন। আজ এই থিওরি তো কালকে অন্য থিওরি। চিরায়ত জীবনধারাকে বর্জনের আরেকটি ভয়াবহ দিক রয়েছে, যেটা আজকের মুসলিমরা ভোগ করছো, আর সেটা হচ্ছে: আধুনিক পশ্চিমের সমস্ত প্লাস্টিক ঈশ্বরদেরকে আমদানি করা হচ্ছে, আর মুসলিমদের সমস্ত ইতিহাস-ঐতিহ্যকে বস্তাভরে জলে ফেলে দেয়া হচ্ছে। তারা তাদের মুসলিম পরিচয় ধরে রাখতে চাইছে, কিন্তু এটার জন্য তারা ঘোষণা করছে কেবল পবিত্র কোরআন এবং হাদিসই যথেষ্ট। আর মধ্যখানের ঐতিহ্যের কোনো প্রয়োজন নেই। এখানে দুটো আচরণ দেখা যায়। একটি হচ্ছে: আমাদের প্রয়োজন নেই এসব আদি মুসলিম সেকেলে ঐতিহ্য, কারণ আমাদের কাছে বিজ্ঞান আছে, বিজ্ঞানের চরম উন্নতির এই যুগে কি কাজে লাগবে এসব পুরোনো ঘ্যানঘ্যান। পশ্চিমারা যাই বলে তাই এদের কাছে অমৃতসম। কোনো ব্যাপারে আইনস্টাইন কি বললো, সেটা এদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ এবং পূজনীয়, কিন্তু সেই একইকথা যদি আল-গাযালী বা ইবনে আরাবী বলে তবে সেটা নেহায়েত মধ্যযুগীয় প্যাচাল ছাড়া আর কিছু নয়। দ্বিতীয়টি হচ্ছে: মুসলিম উম্মাহর পতন ও নষ্টের জন্য এই সব মধ্যযুগীয় ঐতিহ্যই দায়ী, এসব ফেলে দিয়ে আমাদেরকে ঠিক সাহাবীদের যুগে ফিরে যেতে হবে, তাদের আদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। হ্যাঁ, ১৩০০ বছরের ইসলামি ঐতিহ্য যে একেবারে সোনায় সোহাগা তা নয়, কিন্তু যারা সেই ঐতিহ্যের সাথে বিন্দুমাত্রও পরিচিত আছেন, তারা সবাই একবাক্যে স্বীকার করবেন যে, সেই ঐতিহ্য কতোটা সমৃদ্ধ, উন্নত ছিল। সেখানের অনেককিছুই আপনার কাছে ঠিক নাও লাগতে পারে, সমালোচনা করুন, ভ্রান্তি উন্মোচন করুন। কিন্তু সমগ্র ঐতিহ্যকে জলে ফেলে দেবার কি প্রয়োজন। ফলাফল পরিস্কার: পবিত্র কোরআন এবং হাদিস থাকলেও তা ব্যবহারের কোনো উপায়, সরঞ্জাম নেই। সে শূন্যতাকে দখল করে নিয়েছে পাশ্চাত্যের ধ্যান-ধারণা তথা আধুনিকতার সমস্ত উপকরণ। নাস্তিকদের সংখ্যা দিনদিন ব্যাপক হারে বাড়ছে, নাস্তিকতার জোয়ার আটকাবে সেটা তো দূরের বিষয়, নাস্তিকতার সামনে তাদের অসহায় মনে হয়। ইসলামের ইতিহাসে বহু নাস্তিক আগেও ছিল, কিন্তু নাস্তিকতাকে কখনো মারাত্মক সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করা হয়নি, কিন্তু পশ্চিমা আঘাতে সবকিছুই আজ বিলীন। মোটকথা পশ্চিমা আধুনিক সভ্যতার মৌলভিত্তিই হচ্ছে: তাকছির যেটা তাওহিদের বিপরীত, শিরকের আকর। আধুনিক পশ্চিমা সভ্যতার শিক্ষাকাঠামো, সমাজব্যবস্থা, অর্থনীতি, রাজনীতি, পরিবার-ব্যবস্থা থেকে শুরু করে যা আছে তা তাকছিরের উপর দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত, যেখানে ইসলামের পুরো কাঠামো তাওহিদের উপর প্রতিষ্ঠিত। এটা পশ্চিমা আধুনিক সভ্যতার ক্ষেত্রে একটি জ্ঞানগত পর্যালোচনা। আপনি যেভাবে কিংবা যে পদ্ধতিতেই পর্যালোচনা করুন না কেন ফলাফল একই আসবে। যদি আপনি সত্যিকারের পর্যালোচনা করার যোগ্যতাসম্পন্ন হন। অন্যথায় আপনিও পশ্চিমা সভ্যতার চাকচিক্যময় উন্নতি দেখে তাদের বন্দনায় মেতে উঠবেন এবং তাদের এই সমৃদ্ধিকে মুসলিম সমাজে প্রয়োগ করতে চাইবেন। আপনার আর সেটা করতে হবে না, আপনার এই চাওয়া ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত হয়ে চলছে। মুসলিম সমাজে পশ্চিমা আধুনিক বিশ্বের সমস্ত জিনিস সেটা পণ্য হোক কিংবা হোক মতাদর্শ সবই বানের জলের মতো প্রবেশ করেছে। ফলাফল যা হবার তাই, হত্যা, খুন, ধর্ষণ, শ্লীলতাহানি, পরিবার ভাঙ্গন, সমকামিতা, মাদক থেকে শুরু করে পশ্চিমারা যেসব সামাজিক অবক্ষয়ের শিকার হয়েছে তার সবই এখানে বিকাশ লাভ করছে। এখানে একটি দিক থেকে আলোচনা করা হয়েছে, নচেৎ আরো অনেক দিক আছে যেগুলো আলোচিতই হয়নি। যেমন: পশ্চিমা সমাজ একেবারে ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ, ধর্ম সেখানে ডাস্টবিনের বিষয়, কিন্তু পশ্চিমা সভ্যতার রাষ্ট্র, সেনাবাহিনী, অর্থনীতি, গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার তারা কি আসলেই ধর্মনিরপেক্ষ? যদি ধর্মনিরপেক্ষ হয়েই থাকে তবে (ংশঁষষ ধহফ নড়হবং), (নরষফবৎনবৎম), (ঃৎরষধঃবৎধষ পড়সসরংংরড়হ) এর মতো সংগঠন কেনই বা মধ্যযুগীয় কায়দায় গোপনভাবে তাদের পূজো অর্চনা চালিয়ে যায়, যেটার ব্যাপারে বিশ্বের সকল সংবাদ মাধ্যম একেবারে নীরব? আর তারাই বা কার উদ্দেশেই এসব পূজো-উপাসনা চালিয়ে যায়? ধর্ম, সমাজনীতি, অর্থনীতি, মূল্যবোাধ, খাবার, ওষুধ, সংস্কৃতি, ফ্যাশন, আর্ট, কৃষ্টি ও কালচার ইত্যাদির এমন কোনো ক্ষেত্রে নেই যেখানে আধুনিকতার এই বিষবাষ্প স্পর্শ করেনি। যেটা পৃথিবীর ইতিহাসে একেবারে প্রথম এবং ভয়াবহ। কেউই এটার ক্ষতিকর প্রভাবে থেকে মুক্ত নয়। আপনি যদি স্মার্ট, বুদ্ধিমান হন, এসব আপাত বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলোকে একটু পিছন থেকে দেখতে শুরু করেন, এবং বিচ্ছিন্ন পাজলকে মেলাতে আরম্ভ করেন, তবে হতবাক করা একটি ভৌতিক ছায়াছবির সন্ধান আপনি পাবেন। সন্ধান পেয়ে যাবেন সেই ভৌতিক ছায়াছবির আসল ভিলেনকে, তার সহযোগী এবং দেখতে পাবেন সবকিছুই আপাত বিচ্ছিন্ন ঘটনা মনে হলেও এদের সবাই একই মালায় গাঁথা। এই লম্বা বিস্তর কথা বলার কারণ মূলত একটিই, দৃষ্টিভঙ্গি পরিস্কার করা। আপনার দৃষ্টিভঙ্গি চিন্তাচেতনা যদি পরিস্কার এবং পরিপক্ক না হয় তবে আপনি পবিত্র কোরআনকে ঠিক তেমনই মনে করবেন, যেমনটি আপনার দৃষ্টিভঙ্গি। আধুনিকতার রঙ্গিন চশমা চোখে দিয়ে পবিত্র কোরআন অধ্যয়ন করলে, আপনি সবকিছুই আধুনিক পশ্চিমা সভ্যতার চিন্তার রঙ্গে রঙ্গিন দেখতে পাবেন। কিন্তু চোখ থেকে চশমা খুলে সেটাকে সত্যিকারের তাওহিদের আলোতে রঙ্গিন করলে আপনি সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র দেখতে পাবেন। গ্রন্থটি ও তার অনুবাদ প্রসঙ্গ যেকোনো সংস্কতিরই দুটো দিক থাকে। নাকলি এবং আকলি দিক। নাকলি দিক বংশ পরম্পরায় এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে স্থানান্তরিত হতে থাকে। এই দিকটিকে সূত্র পরম্পরার জ্ঞান হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। দ্বিতীয় দিকটির উপর সভ্যতার জ্ঞানগত বিকাশ নির্ভর করে। এটাকে বুদ্ধিভিত্তিক জ্ঞানধারা বলা যায়। নাকলি জ্ঞানের ক্ষেত্রে তাকলীদ বা নিঃর্শত আনুগত্য ব্যতীত আর কোনো পথ নেই। কিন্তু আকলি জ্ঞানে কোনো তাকলীদ নেই। যে সভ্যতার এদুটো দিক যত শক্তিশালি, সে সভ্যতা ততবেশি গতিশীল ও সমৃদ্ধ হবে। ইসলামের ক্ষেত্রে এটাই হয়েছিল। ইসলামের নাকলি জ্ঞান অত্যন্ত শক্তিশালী, যেটা আমাদের চোখের সামনে এখনো দীপ্তিময়। ইসলামের এই নাকলি জ্ঞানের মধ্যে রয়েছে: পবিত্র কোরআনের কেরাত, বিভিন্ন আয়াত সম্পর্কে প্রাচীন ব্যাখ্যাতাদের বক্তব্য, আলোচনা, হাদিস, ফিকহ, আরবি ব্যাকরণ ইত্যাদি। এসমস্ত শাস্ত্রের বিরাট অংশ নাকলি। আর নাকলি জ্ঞানের ক্ষেত্রে ‘কেন’ এই প্রশ্নটি করা যায় না। এখানে প্রয়োজন প্রশ্নবিহীন আনুগত্য। যেমন: নাকলিভাবে আমাদের কাছে পবিত্র কোরআন এসেছে। এখানে প্রশ্ন করা যাবে না যে, পবিত্র কোরআন এমন কেন, এতো সূরা কেন, এই শব্দ কেন ব্যবহার করা হলো ইত্যাদি। হাদিস শাস্ত্র এটার জ্বলন্ত উদাহরণ। নাকলি জ্ঞানের মধ্যে আবার সূত্রধারা যাচাইয়ের উপর বিভিন্ন ভাগ রয়েছে। ইসলামের মৌলিক বিষয়, তথা কালেমা, পাঁচ ওয়াক্ত নামায, রমযানের রোযা, হজ্জ, যাকাত, আমাদের হাতে থাকা পবিত্র কোরআনই নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আনীত পবিত্র কোরআন, ফেরেশতা, কেয়ামত, হাশর, বিচার দিবসসহ আরো কতক বিষয়। এ ব্যাপারে কারো কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু আরো অনেক নাকলি বিষয় আছে যেগুলো এ পর্যায়ের নয়। এখানে সেটা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার তেমন সুযোগ নেই। আকলি জ্ঞানের মধ্যে রয়েছে: দর্শন, গণিত, ইলমে কালাম, আধ্যাত্মবাদ ইত্যাদি। এখানে আপনার মেধা, চিন্তাকে কাজে লাগাতে হয়। কিন্তু আকলি এবং নাকলি জ্ঞান পরস্পর থেকে আলাদা নয়। বরং একে অপরের সাথে সম্পর্কযুক্ত। উদাহরণ দিলে বোঝা যাবে: পবিত্র কোরআনের একটি আয়াত পড়লেন, তার ব্যাখ্যার বিভিন্ন মনীষীদের মন্তব্য পড়লেন, এগুলো হলো নাকলি অংশ। এরপর উক্ত আয়াতের উপর চিন্তা গবেষণা করে জ্ঞানের নতুন দিগন্ত নিয়ে আসলেন, সেটা আকলি ক্ষেত্র। পশ্চিমা আধুনিকতার করাল গ্রাসে ইসলামের আকলি ক্ষেত্র একেবারেই বিলুপ্ত প্রায়। নাকলি ক্ষেত্রটিই টিকে আছে, কোনো মতে। ইসলামের আকলি ক্ষেত্রটির এই বেহাল দশা থাকার কারণে মুসলিমরা না পারছে চিন্তা করতে, আর না পারছে আধুনিকতার কঠিন চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলা করতে। পবিত্র কোরআন অধ্যয়নের নিয়মনীতি নিয়ে অনেক গ্রন্থই আছে, কিন্তু এদের অধিকাংশই নাকলি জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে রচিত। ফলস্বরূপ, নাকলি জ্ঞান হিসেবে গ্রন্থগুলো ভালো কিন্তু বর্তমানের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য সেগুলো আর তেমন কাজের নয়। প্রয়োজন পবিত্র কোরআনের প্রাণ শক্তিকে আবার জাগ্রত করার। পবিত্র কোরআন মহান আল্লাহর কালাম। আল্লাহর কালাম সময়ের সীমার বাহিরে। ফলে এই পবিত্র কোরআনই পারে আজকের ভয়াবহ পশ্চিমা তথা সকল চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলা করতে। কিন্তু সেটার জন্য কার্যকর নিয়মনীতির প্রয়োজন, যাতে পবিত্র কোরআনের দীপ্তি উদ্ভাসিত হয়। সে লক্ষ্যেই এই গ্রন্থটি রচিত। গ্রন্থটি প্রাথমিক প্রয়োজন পূরণ করবে। কিন্তু বাকি পথ আপনাকেই হাঁটতে হবে। আপনাকেই পবিত্র কোরআনের অসীম সাগরে অবগাহন করতে হবে। সেখান থেকেই আসবে চির সবুজ জ্ঞান। আল্লাহতায়ালা চির সবুজ, এবং তাঁর পবিত্র কোরআনও চির অ¤øান। লেখকের এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান হলো পবিত্র কোরআনের অর্থপ্রকাশের পদ্ধতি যেটা তিনি তাঁর শিক্ষক ড. ফজলুর রহমান আনসারির (রহিমাহুল্লাহু)-এর কাছ থেকে লাভ করেছেন, সেটাকে প্রয়োগ করে পবিত্র কোরআনের কিছু বিষয়কে নতুনভাবে আলোকিত করা। অর্থপ্রকাশের পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ আমাদের এ গ্রন্থটিতে আলোচিত হয়েছে। কিন্তু আকলি জ্ঞান বিলুপ্ত হওয়ার কারণে পবিত্র কোরআনের সে মহিমা সকলের কাছে প্রকাশিত হচ্ছে না। আপনি যদি ইবনে সিনা, আল-বিরুনি, জাবের ইবনে হাইয়ান, আল-ফারাবি, গাযালি, রুমি, ইবনে আরাবি, তোফায়েল, যাহিয, মূসা আল-খাওরিজমি ইত্যাদি মহান ব্যক্তিদের অবদান সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন এবং তাদের লিখিত কিছু গ্রন্থের সাথে পরিচিত হন, তবে বেশ উত্তম হত। আপনি দেখতে পেতেন জ্ঞানের ময়দান কতো বিশাল। দেখতে পেতেন পবিত্র কোরআনের একটি আয়াত থেকে কীভাবে ইমারত দাঁড় করানো যায়। কিন্তু তাদের ঐতিহ্য সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকার কারণে জ্ঞানগত ক্ষেত্রে কেউ কোনো উন্নত ধারণা দিলেই, তিনি সকলের কাছে নিন্দার পাত্র হয়ে যান। কিন্তু খেয়াল করে না তাদের পাত্রই তো ছোট। তারা কীভাবে সাগর ধারণ করবে, যাদের ডোবাকেই সহ্য করার ক্ষমতা নেই। এই গ্রন্থটি পাঠ করলে আপনার তেমনই অভিজ্ঞতা হবে। এমন অনেক বিষয়ের সম্মুখীন আপনি হবেন, যা আপাতভাবে আপনাকে চমকে দিবে। কিন্তু পেছনের ইতিহাস যখন জানবেন, তখন তা আপনার কাছে স্বাভাবিক এবং বুদ্ধিদীপ্ত মনে হবে। সেটা মাথায় রেখেই তেমন কয়েকটি স্থানকে আমি চিহ্নিত করেছি, এবং গ্রন্থটির পরিশিষ্টে আলোচনা করেছি। লেখকের সাথে আপনার একমত হতেই হবে এমন কোনো কথা নেই, বরং তাঁর মতটিকে জ্ঞানগত একটি মত হিসেবে বিবেচনা করতে পারেন। আর যারা একমত হবেন তারা সে মোতাবেক এগিয়ে চলুন, এটাই কামনা।
ইমরান নযর হোসেন। ক্যারিবিও দ্বীপপুঞ্জের ত্রিনিদাদে জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪২ সালে। আলিমিয়া ইসলামিক ইনস্টিটিউট (করাচি) থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন এবং পাশাপাশি করাচি বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আল-আযহার সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন। উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করেন সুইজারল্যান্ডের Graduate Institute of International Relations থেকে। দায়িত্ব পালন করেন করাচির আলিমিয়া ইসলামিক ইনস্টিটিউটের প্রিন্সিপাল হিসেবে, ছিলেন করাচির World Muslim Congress-এর রিসার্চ ডাইরেক্টর এবং মিয়ামির Islamic Institute for Education and Research-এর ডাইরেক্টরও। এছাড়াও তিনি ত্রিনিদাদ এন্ড টোবাগোর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কূটনীতিক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ইসলাম, সমকালীন রাজনীতি, অর্থনীতি, সামাজিক বাস্তবতা এবং সর্বোপরি আধুনিক যুগের বাস্তবতা তুলে ধরতে তিনি সত্যিই অনবদ্য। তাঁর গ্রন্থের বিষয়বস্তু বর্তমানে বাস্তবে সত্যে পরিণত হচ্ছে এবং প্রতিনিয়ত তাঁর বক্তব্যকে সত্যায়িত করে চলছে, যা সত্যই তাঁর আধ্যাত্মিক উচ্চতার পরিচয় বহন করে। Jerusalem in the Quran- An Islamic View of the Destiny of Jerusalem তাঁর আলোড়ন সৃষ্টিকারী গ্রন্থ।