১৮৯৩ সালের ৩১শে অগস্ট তারিখে রাশিয়ার তখনকার রাজধানী এবং সবচেয়ে বড়ো শহর সেন্ট পিটার্সবার্গে ভ্লাদিমির ইলিচ্ উলিয়ানভ়্ নামে ২৩ বছরের এক যুবক এসে পৌছল। শহরের নাম সেন্ট পিটার্সবার্গ— রাশিয়ার শহর হলেও জার্মান ভাষায় নাম। রাশিয়ার সাধারণ লোকে বলতো, পিটারের শহর –‘পেত্রোগ্রাদ্’। ২১ বছর পরে জার্মানির সঙ্গে যখন রাশিয়ার যুদ্ধ বাধলো তখন জার্মান নামটা আস্তে আস্তে বাদ পড়ে গেল, আর ১৯১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মার্চ মাস বিপ্লবের সময় থেকে ‘পেত্রোগ্রাদ’-ই বলতো সবাই। ওই ২৩ বছরের যুবকটির নামও এর মধ্যে কয়েকবার বদলে গেছে, –শেষ পর্যন্ত তার নাম হয়েছে ‘লেনিন’, যে নামে জগতের সবাই তাকে জানে। শহরটার নাম আবার বদলে গেল, এই মানুষটার নামেই নতুন নাম হলো শহরটার – “লেনিনগ্রাদ্’, লেনিনের শহর। এই নামেই শহরটাকে এখন দেশবিদেশে সবাই জানে । এই যে শহরটার নাম বদলাচ্ছে, মানুষটার নাম বদলাচ্ছে- -- এ সব শুধু নাম বদলানোর ব্যাপার নয়। আসল বস্তুও বদলে গিয়েছিল, নাম-বদল সেই বাস্তব পরিবর্তনের চিহ্ন। শহরটা বদলে গিয়েছিল। মানুষটাও বদলেছিলো বৈকি সে কখনও এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকেনি, অবিচল লক্ষ্য নিয়ে ক্রমাগত চলছিল। জয়পরাজয়ের উথাল-পাথাল ঢেউ ঠেলে, নিন্দার প্রশংসার ঘৃণার ভালোবাসার তুফান কাটিয়ে সে চলতে চলতে নিজেকে গড়ে তুলছিল, চারপাশের দুনিয়াটাকেও বদলে দিচ্ছিল। সেন্ট পিটার্সবার্গ শহর থেকে দক্ষিণ পূর্ব দিকে প্রায় চারশো মাইল দূরে মস্কো শহর। সেখান থেকে পুব দিকে আরও প্রায় সাড়ে চারশো মাইল দূরে ভল্ল্গা নদীর পুব তীরে কাজান শহর। কাজানের কাছে ভল্ল্গা নদীর চেহারা বিশাল — প্ৰায় ছোটখাটো সাগরের মতো। ভল্গার পশ্চিমপার বরাবর, অর্থাৎ কাজান শহরের বিপরীত তীরে, দক্ষিণ দিকে আরও প্রায় একশো মাইল দূরে সিমবার্স্ক শহর। ভ্লাদিমির ইলিচ উলিয়ানভ এই শহরে জন্মেছিল ১৮৭০ সালের ২২শে এপ্রিল। ওই শহরটারও নাম বদলে এখন হয়েছে উলিয়ানস্ক।