‘প্রান্তিক মানব’ পূর্ব-পাকিস্তানের উদ্বাস্তু এবং পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে তাঁদের প্রভাব সম্পর্কিত একটি সামগ্রিক ইতিহাস। এই প্ৰথম ‘ইতিহাসের সবচেয়ে বেদনাদায়ক অভিবাসন'-এর বিস্তৃত গবেষণার মধ্য দিয়ে অধ্যাপক চক্রবর্তী বিধৃত করেছেন পূর্ব-পাকিস্তান থেকে বিতাড়িত লক্ষ লক্ষ ছিন্নমূল মানুষের স্থান থেকে স্থানান্তরে ভ্রাম্যমাণতার ইতিবৃত্ত। দুঃস্বপ্নের মতো আতঙ্কের পরিস্থিতিতে মানবেতর প্রাণীতে পরিণত হওয়া বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠী, তাদের অবর্ণনীয় দুঃখভোগ, দুর্মর সাহস এবং উদ্যোগ ও সৃজনশীলতার মধ্য দিয়ে সংঘবদ্ধ এক জীবনে নবজাগরণের কাহিনী এই বই। পরিত্যক্ত পোড়ো জমিকে দখল করে উদ্বাস্তুরা পশ্চিমবঙ্গে তাঁদের জায়গা খুঁজে নিয়েছেন। ব্যক্তিগত সম্পত্তির উপর প্রথাগত আইনের ভিত্তিকে অমান্য করবার এই নজির পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে নতুন উপাদানের জন্ম দিয়েছে—উদ্বাস্তু ক্ষমতা। জবরদখল কলোনিগুলির প্রতিষ্ঠা এবং প্রধান বাস্তুহারা সংগঠন হিসেবে ইউনাইটেড সেন্ট্রাল রিফিউজি কাউন্সিল-এর গড়ে ওঠাকে লেখক পশ্চিমবাংলার রক্ষণশীল আপসকামী সমাজের বিপরীতে এক পরিবর্তনকামী আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন সমাজের জন্ম হিসেবে দেখেছেন। লেখক বলেছেন পরবর্তীকালে পশ্চিমবাংলার সমস্ত বামপন্থী আন্দোলনের ভিত্তি হল এই সংগঠনের পরিকাঠামো। সরকারি অবহেলার প্রত্যক্ষ নিদর্শন প্রায় এক হাজার উদ্বাস্তু কলোনি। ষাটের দশকে এই কলোনিগুলি ক্ষুধার্ত আর অবহেলিত শিশুতে ভরে যায়। মানবেতর পরিমণ্ডলে বেড়ে ওঠা এই শিশুরাই সত্তরের দশকে পরিণত হয় এক নতুন যুবগোষ্ঠীতে। লেখকের মতে এঁরাই হলেন প্রান্তিক মানুষ ৷