”স্রষ্টার ইতিবৃত্ত” বইয়ের ফ্ল্যাপে লিখা কথা মোটামুটিভাবে মানুষ হিসাবে পরিচিত হয়ে ওঠার পরপরই নারী-পুরুষ পৃথিবীতে অবস্থান ও চারপাশেল নানান রহস্যকে বোঝার উদ্গ্র কৌতূহর থেকে দেব-দেবীর উপাসনা শুরু করে। ক্যারেন আর্মস্ট্রংয়ের অসাধারণ সৃষ্টি উন্মোচক এ গ্রন্থটি একেশ্বরবাদী অর্থ্যাৎ ইহুদী, ক্রিশ্চান ও মুসলিমদের ঈশ্বর সম্পর্কিত ধারণা ও অনুভূতি বিকাশ লাভের ইতিহাস অনুসন্ধান করেছে।
ঐতিহাসিক, দার্শনিক, বৃদ্ধবৃত্তিক ও সামাজিক অগ্রগতি ও দর্শনের বহুবর্ণ পটভূমিকায় শত শত বছরের পরিক্রমার বিভিন্ন পর্যায়ে কীভাবে একেশ্বরবাদী প্রতিটি ধর্ম ঈশ্বর সম্পর্কে সূক্ষ্ণভাবে ভিন্ন ধারণা গড়ে তুলেছিল সেটাই দেখিয়েছেন ক্যারেন আর্মস্ট্রং । সাথে সাথে এসব ধারণার গভীর সাদৃশ্যের দিকেও আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন তিনি, স্পষ্ট করে তুলেছেন যে সব ধর্মেই ঈশ্বর প্রবল ও গভীর আবেগে এবং প্রায়শঃ বিশেষ করে পাশ্চত্যে, পীড়াদায়কভাবে অনুভূত হয়েছেন, হচ্ছেন। একেশ্বরবাদীদের কেউ কেউ দেখেছেন অন্ধকার, নৈঃসঙ্গতা ও আতঙ্ক : আবার অন্যদিকে অন্যরা দেখেছেন আলো ও দৈহিক রূপান্তর। এ সমস্ত অন্তর্গত পার্থক্যের কারণ পরীক্ষা করা হয়েছে ও এসব ঘটনাবলীর নেপথ্য চরিত্রগুলোকে জীবিত করে তোলা হয়েছে।
বাবিলনে নির্বাসনকালে প্যাগান দেবতাদের কাছ থেকে ক্রমশঃ সরে গিয়ে ইহুদিতের মাঝে পূর্ণাঙ্গ একেশ্বরবাদ গড়ে ওঠার দিকে নজর দেব আমরা । এরপর আলোচনায় এসেছে ক্রিশ্চান ও মুসলিমদের মাছে সমান্তরাল অথচ আলাদা ধারণা ও বিশ্বাস সৃষ্টির প্রসঙ্গ। এরপর এ গ্রন্থ প্রজন্ম পরম্পরায় অগ্রসর হয়েছে দার্শনিকদের ঈশ্বর ও তিনটি ধর্ম বিশ্বাসের অতিন্দ্রীয়বাদীদের ঈশ্বর, সংস্কার-এর ঈশ্বর, আলোকনের ঈশ্বর ও অবশেষে ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীর সংশয়বাদী ও নাস্তিকদের চ্যালেঞ্জ ও এর পাশাপাশি আমাদের সময়ের মৌলবাদীদের মারাত্মকভাবে দুর্বল বিশ্বাস পর্যালোচনা করেছে।
আর্মস্ট্রং বরেছেন, ঈশ্বর সম্পর্কিত যেকোনও কারণকে-যদি টিকে থাকতে হয়-অবশ্যই এর উদ্ভাবনকারীদের প্রয়োজন মেটাতে হবে। অকার্যকর হয়ে উঠলেই ঈশ্বরের ধারণাসমূহ বদরে যায়। তিনি যুক্তি দেখিয়েছেন, আমাদেরই অপেক্ষাকৃত বৃহত্তর রূপধারীর মতো আচরণকারী ঈশ্বরের ধারণা একটা নির্দিষ্ট পর্যায়ে মানব জাতির জন্যে জুৎসুক বটে, কিন্তু ক্রমবর্ধমান হারে তা আর মানুষের কাজে আসছে না।
তিনি বলছেন, একবিংশ শতাব্দীতে এক নতুন ধারণা সন্ধানে অতীতে চির পরিবর্তনশীল ঈশ্বরের ধারণা ও সংশ্লিষ্ট সময়ে তার প্রাসঙ্গিকতা অনুধাবন একটা উপায় । তাঁর গ্রন্থ দেখিয়ে দিচ্ছে, এমন একটি পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী, কারণ সর্বজনীনভাবে অনুভূত অলৌকিক সঙ্গীকে প্রকাশের একটা প্রতীকের খোঁজ করা মানুষের সহজাত প্রকৃতি।
সূচিপত্র * অনুবাদকের কথা * মানচিত্র * সূচনা * উদ্ভব * এক ঈশ্বর * জেন্টাইলদের প্রতি আলো * ট্রিনটি : ক্রিশ্চানদের ঈশ্বর * একত্ব : ইসলামের ঈশ্বর * অতিন্দ্রীয়বাদীদের ঈশ্বর * সংস্কারকদের ঈশ্বর * আলোকন * ঈশ্বরের প্রয়াণ? * ঈশ্বরের কি ভবিষ্যৎ আছে? * নির্ঘণ্ট * তথ্যসূত্র
অনুবাদক শওকত হােসেন-এর আদি নিবাস চট্টগ্রাম জেলার পরাগলপুর গ্রামে। বাবার বিচার বিভাগীয় চাকরির সুবাদে দেশের বিভিন্ন শহরে কেটেছে বাল্য ও কৈশাের। বই পড়ার অদম্য নেশা পেয়েছেন বই প্রেমী মায়ের কল্যাণে। ১৯৮৫ সালে রানওয়ে জিরাে-এইট অনুবাদের মাধ্যমে হঠাৎ করেই লেখালেখির শুরু শওঁকত হােসেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে মাস্টার্স করেছেন। বর্তমানে একটি বেসরকারী ব্যাংকে কর্মরত।