মুখবন্ধ উত্তরবঙ্গ নিয়ে গবেষণার যে বিস্তৃত ক্ষেত্র এখনো নিবিড় মনোযোগ দাবি করে, উমেশ শর্মা মহাশয়ের ‘জলপাইগুড়ির ইতিহাস' গ্রন্থটি আমাদের আর একবার সে কথা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়। মূল ইতিহাসের স্রোতে উত্তরবঙ্গ-চর্চা পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে আজও প্রায় উপেক্ষিত । এর মধ্যে যে ক'জন মানুষ জলপাইগুড়ি জেলার অতীত বিষয়ে এখনও চর্চা করছেন, উমেশ শর্মা তাদের মধ্যে অবশ্যই অন্যতম । আলোচ্যমান গ্রন্থটি তিনি মোট দশটি অধ্যায়ে বিভাজন করেছেন, মূলতঃ বিষয়বস্তুর নিরিখে । প্রথম অধ্যায়ে জলপাইগুড়ি চর্চার একটি রূপরেখা নির্মাণের পাশাপাশি তিনি নামকরণ নিয়ে বিভিন্ন বিভ্রান্তি তথা ভৌগোলিক সমস্যা বিষয়ে আলোচনা করেছেন । দ্বিতীয় থেকে ষষ্ঠ অধ্যায়ে ইতিহাসের এক দীর্ঘ পরিক্রমা। সপ্তম অধ্যায়টিতেও অতীত কথা রয়েছে, কিন্তু বিষয়টি খুবই নতুন ব'লে আমার মনে হয় – দেশি-বিদেশি শাসন পর্বে(১৮৮৮-১৮৯২) জলপাইগুড়ি জেলার ইতিহাস। লেখক বলেছেন, “আমরা ১৮৮৮ থেকে ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দের ঐ কালপর্বকে ধরে কিছু প্রামাণ্য চিঠিপত্র, রাজনির্দেশ প্রভৃতির সাহায্যে জেলার অন্তর্গত ক্ষুদ্র দেশিয় রাজ্যটির আর্থিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অবস্থানটিকে তুলে ধরবার চেষ্টা করছি। প্রদত্ত ২৫১ টি নথি হল রাজ সেরেস্তা থেকে ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে পাঠানো চিঠিপত্র।” অষ্টম অধ্যায়ের বর্ণিতব্য বিষয় হল জেলা গঠন থেকে দেশ ভাগ (১৮৬৯-১৯৪৭) পর্যন্ত ব্রিটিশ শাসিত জলপাইগুড়ির অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা প্রভৃতি বিষয়ের অগ্রগমন প্রচেষ্টার ইতিহাস। নবম অধ্যায়ের বিষয় ‘জলপাইগুড়ি জেলার কিছু পর্যটন কেন্দ্র’। মোহময়ী উত্তরের এই জেলাটি যে সবদিক থেকেই আকর্ষণীয়, লেখকের বর্ণনায় সেই তথ্যই উঠে এসেছে। অজস্র অপরিচিত স্থানের অনুপুঙ্খ বর্ণনা যে কোনো পাঠককেই উৎসাহিত করবে। সেই সঙ্গে আছে দর্শনীয় স্থানের আলোকচিত্র। শেষ অধ্যায়ে বেশ কিছু নথি দাখিল করেছেন তিনি। এই সমস্ত দুষ্প্রাপ্য নথি-প্রকাশ পরবর্তী গবেষণার ক্ষেত্রকে অনেকটাই সুগম ক’রে তুলবে। আমার বিশ্বাস, এই গ্রন্থ উত্তরবঙ্গ চর্চার সঙ্গে সঙ্গে বৃহত্তর বঙ্গের ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য দলিল হয়ে উঠবে।