ফ্ল্যাপে লিখা কথা সারা দুনিয়াব্যাপি পরিবেশের যে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে এসেছে এটা এখন আর কারও অজানা নয়। জলবায়ুর পরিবর্তন বা বৈশ্বিক উষ্ণতার বিপদ নিয়ে সবাই কথা বলছে। কিন্তু ব্যাপক তোড়াজোড়ের পরেও , সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একটি চালনসই নমনীয় সিদ্ধান্তে পৌঁছাতেও ব্যর্থ। দীর্ঘ দীর্ঘদিন ধরে ‘উৎপাদন ও উন্নয়ন’ এর নামে প্রকৃতি বিধ্বংসী যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রতিযোগিতা চলছে তা থেকে কেউ বেরিয়ে আসতে রাজি নয়। উন্নয়নের যে দর্শন এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির যে নকশা এতদিন নির্বিচারে সবাই অনুশীলন করেছে তার ক্ষতি এবং বিকৃতি দগদগে দৃশ্যমান এবং প্রমাণিত । অন্যদিকে বিজ্ঞান, যন্ত্র , কৃৎকৌশলের নির্বিচার দাপট চলছে জী্বশ্ম ভিত্তিক এবং মুনাফা তাড়িত সভ্যাতাকে আরো দানবীয় করে তোলার জন্য। ইতোমধ্যে যুদ্ধ ও মারনাস্ত্র উৎপাদনের অধীন এবং কম্পানির মুনাফা কমানোর উপায়ে পরিণত হওয়া ‘আধুনিক বিজ্ঞান’ -ই আমাদের সব সমস্যার সমাধান করবে সেটা হয়ে উঠেছে কুসংস্কার এবং অন্ধবিশ্বাস। ফলে আরো ক্ষতিকর কারিগরি উদ্ভাবন এবং তা ব্যবহারে আমাদের বাধ্য করার চেষ্টা থেমে নেই। সাহায্য পাওয়ার নামে আমরাও আগের মতো অবলীলায় সভ্যতার ক্ষত বাড়িয়ে তুলতেই উদগ্রীব দেখা যাচ্ছে। সেই ষাটের দশক থেকে একে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের নামে অপরিক্ষিত ও ক্ষতিকর সামগ্রী ব্যবহারে বাধ্য করা ,কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর নামে মাটি ও পরিবেশ বিনষ্টকারী সার -বিষ আর কীটনাশক প্রাণের বিনা ঘটানো, সেচের নামে মাটির তলায় পানি তোলে আর্সেনিক সৃষ্টি , তথাকথিত উন্নত জাতের নামে কৃষকের হাত থেকে স্থানীয়জাত ছিনতাই সহ বাঁধ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণের নামে এত এত প্রকৃতি বিরুদ্ধ কাজ হয়েছে যে বাংলাদেশের বৈচিত্র্যময় প্রান প্রাচুর্য, উর্বর মাটি, পানি এবং খাদ্য কৃষি ব্যবস্থা আজ প্রায় বিপন্নতার দ্বারপ্রান্তে সাথে আছে আঞ্চলিক পানি আগ্রাসন। গত তিন শতক ফরহাদ মজহার নিরলসভাবে নয়া কৃষি আন্দোলনে নিয়োজিত। আত্নঘাতি প্রকৃতি বিনাশী কর্মকাণ্ড থেকে বের হয়ে এসে প্রাণ ও প্রকৃতির লালন এবং পরিচর্যার প্রায়োগিক জমিন তৈরিতে , মানুষ ও প্রকৃতির অনিবার্য সম্পর্কে নতুন দিগন্ত মেলে ধরে আগামী দুনিয়া গড়ার ইশারাগুলোকে চিহিৃত করার কাজে। এই লেখাগুলো সেই অভিপ্রায় ও দায় থেকে রচিত। সূচিপত্র পরিবেশ: পরিবেশ এবং দুই পৃথিবীর রাজনীতিbr কৃষি ও খাদ্য কিংবদন্তির কথা বলে যাওয়া নরমান ই বোরলগের ( অ) বিজ্ঞান কিংবা অপবিজ্ঞান মহানুভব খাদ্য ব্যাপারি ও পাওয়ার টিলারের কথা বিষ কোম্পানির বিষগর্ভ কথার উত্তরে বন: বনের যারা রক্ষাকারী তারাই বনসম্পদ থেকে বঞ্চিত বন ও বনবাসীর জীবন ব্যবস্থা রক্ষা ও ক্ষুদ্র জাতিসত্তার আত্ননিয়ন্ত্রণের অধিকারের প্রশ্নে দাবিদাওয়া ও ঘোষণার প্রয়োজনীয়তা পরিবেশের লড়াই আর শহুরে মধ্যবিত্তের গাছের রাজনীতি পানি: পানির ‘হক’ আদায়, পরিবেশ কিংবা এক জলদেবতার গল্প জলের জল্লাদদের বিরুদ্ধে জলদেবতার যুদ্ধের ডাক ভারতের নদী সংযোগ প্রকল্প: দ. এশিয়ার জনগনের প্রতিরোধ দরকার টিপাইমুখ প্রকল্প এবং উপমহাদেশের নয়া রাজনীতির সম্ভাবনা জলবায়ু: জলবায়ুর পরিবর্তন বা দুনিয়া গরম হয়ে যাবার রাজনীতি জলবাযূর সম্মেলন: ফলাফল শূন্য কোপেনহেগেনের ঘোড়ার ডিম বিশ্ব ব্যবস্থা পরিবর্তনের দাবি
জন্ম ১৯৪৭ সালে, নোয়াখালী। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা : ঔষধশাস্ত্র ও অর্থনীতি, প্রিয় স্মৃতি : মাইজদী কোর্ট, প্রিয় স্থান : বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা নয়াকৃষির বিদ্যগাঘর। তিনি একজন বাংলাদেশি কবি, কলামিস্ট, লেখক, ঔষধশাস্ত্রবিদ, রাজনৈতিক বিশ্লেষক, বুদ্ধিজীবী, সামাজিক ও মানবাধিকার কর্মী এবং পরিবেশবাদী। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৭ সালে ওষুধশাস্ত্রে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন এবং পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের দি নিউ স্কুল ফর সোশাল রিসার্চ থেকে অর্থশাস্ত্রে ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সামাজিক অর্থনীতিতেও গবেষণা করেছেন। চিন্তা নামক একটি পত্রিকার সম্পাদক মজহার উবিনীগ এনজিও গঠন করে নয়াকৃষি আন্দোলনও শুরু করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহ হল: প্রস্তাব, মোকাবিলা, এবাদতনামা ও মার্কস পাঠের ভূমিকা।