রায় পরিবারের প্রথম পুরুষ। সত্যজিতের ঠাকুরদা, সুকুমারের বাবা। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। তাঁর প্রতিভার আলোকছটায় বাংলার শিশুসাহিত্য আজও উদ্ভাসিত। একাধারে সন্দেশ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা- সম্পাদক, কালজয়ী গুপি গাইন বাঘা বায়েন, টুনটুনির বই, ছেলেদের রামায়ণ-এর মতো অজস্র গল্পের, গল্প ও কাহিনির স্রষ্টা। প্রাণীকথা থেকে লোককথা— ছোটদের ভালোবেসে পড়ার কোনও বিষয়েই বাদ দেননি। মহা বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছিলেন একাধারে চিত্রশিল্পী, প্রকাশক ও মুদ্রক হিসাবেও। কিন্তু উপেন্দ্রকিশোরের প্রতিভার অনাবিষ্কৃত জগৎ কিছু কম নেই। ভারতীয় সঙ্গীত' নামের দীর্ঘ প্রবন্ধ সম্পর্কে কতটুকু জানেন একালের পাঠক। জানেন কি, তাঁর প্রথম প্রকাশিত বইটির নাম ‘শিক্ষক ব্যতিরেকে হারমোনিয়াম শিক্ষা’! তারপর ‘বেহালা শিক্ষা'। উপেন্দ্রকশোরের ছোটদের লেখা গ্রন্থিত করে ‘রচনা সমগ্র' প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু সাবালক পাঠকের জন্য লেখা প্রবন্ধ স্থান পায়নি। পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় সম্পাদিত পত্রভারতীর উপেন্দ্রকিশোর সমগ্র' এইখানেই অনন্য। এই অখণ্ড গ্রন্থের পরিশিষ্ট অংশে সাবালকদের জন্য তাঁর সমস্ত নিবন্ধ যেমন সংযোজিত হয়েছে, তেমনই রয়েছে তাঁর প্রয়াণের পর বিভিন্ন বরণীয় মানুষের ব্যক্তিগত মূল্যায়ন। আর রয়েছে কিছু দুর্লভ ছবি ও স্কেচ। এই ‘উপেন্দ্রকিশোর সমগ্র' পাঠক ও গবেষক সাগ্রহে গ্রহণ করবেন, আমাদের বিশ্বাস ।
উপেন্দ্রকিশোরের জন্ম ১২৭০ বঙ্গাব্দের ২৭শে বৈশাখ (১৮৬৩ সালের ১০ই মে) ময়মনসিংহ জেলার মসূয়া গ্রামে, যা অধুনা বাংলাদেশে অবস্থিত। তাঁর পিতা কালিনাথ রায় ছিলেন সুদর্শন ও আরবি, ফার্সি ও সংস্কৃতে সুপণ্ডিত। তাঁর ডাকনাম ছিল শ্যামসুন্দর মুন্সী। উপেন্দ্রকিশোর শ্যামসুন্দরের আটটি সন্তানের মধ্যে তৃতীয় পুত্রসন্তান। তাঁর পৈতৃক নাম ছিল কামদারঞ্জন রায়। পাঁচ বছরেরও কম বয়সে তাঁর পিতার অপুত্রক আত্মীয় জমিদার হরিকিশোর রায়চৌধুরী তাঁকে দত্তক নেন ও নতুন নাম দেন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। মেধাবী ছাত্র বলে পড়াশোনায় ভাল ফল করলেও ছোটোবেলা থেকেই উপেন্দ্রকিশোরের পড়াশোনার থেকে বেশি অনুরাগ ছিল বাঁশী, বেহালা ও সঙ্গীতের প্রতি। ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে উপেন্দ্রকিশোর প্রবেশিকা পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয়ে বৃত্তি পান। তারপর কলকাতায় এসে ভর্তি হন প্রেসিডেন্সী কলেজে। ১৯১৫ সালের ২০শে ডিসেম্বর মাত্র বাহান্ন বছর বয়সে উপেন্দ্রকিশোর পরলোক গমন করেন।