"জনম জনমের স্বপ্ন" বইয়ের ভূমিকা: আমরা বাঙালি, বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। বাঙালি জাতি হিসেবে আমরা গর্বিত এই জন্য যে, প্রতিটি প্রাপ্তির পেছনে আমাদের রয়েছে দাবি আদায়ের গৌরবময় সংগ্রামী ইতিহাস এবং অনেক ত্যাগের কঠিনতম পরীক্ষা। ১৯৭১এর মহান মুক্তিযুদ্ধ তার মধ্যে অন্যতম। একাত্তরের সেই মুক্তিযুদ্ধে দেশপ্রেমিক বাঙালিরা জীবন বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়ে শত্রুদের বিরুদ্ধে। সশস্ত্র মুক্তিযােদ্ধা ছাড়াও লাখাে লাখাে দেশপ্রেমিক তাদের জীবনের মায়া ত্যাগ করে মুক্তিযােদ্ধাদের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তি করে, প্রচার-প্রচারণা করে, চিকিৎসাসেবা প্রদান ছাড়াও বিভিন্নভাবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অংশ নেয়। তারাও মুক্তিযােদ্ধা এবং জাতির গর্বিত সন্তান। খন্দকার আশরাফ মাস্টারও তেমনি একটি চরিত্র, যিনি সশস্ত্র মুক্তিযােদ্ধা না হয়েও দেশের প্রয়ােজনে শত্রুদের বুলেটের সামনে হাসিমুখে বারবার বুক পেতে দিয়েছেন। নির্দ্বিধায় বহু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন কিন্তু নতিস্বীকার করেননি শত্রুদের কাছে, আপস করেননি দেশমাতাকে মুক্ত করার প্রশ্নে। কিন্তু স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে মুক্তিযােদ্ধারা বিভিন্ন সরকারি সুযােগ-সুবিধা পেলেও সাদা মনের এই মানুষটি কখনাে গ্রহণ করেননি সামান্যতম সুবিধা, এমনকি মুক্তিযােদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতিটুকুও কখনাে দাবি করেননি তিনি। আজ সময় এসেছে এমন অনেক দেশপ্রেমিক মুক্তিযােদ্ধা, যারা অনাদরেঅবহেলায় পড়ে আছেন, জীবনের অন্তিম সময়েও যদি তাদের প্রাপ্য সম্মানটুকু রাষ্ট্র প্রদান করে তাহলে তারা স্বস্তি নিয়ে শেষনিঃশ্বাসটুকু ত্যাগ করতে পারবেন। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসেবে মুক্তিযােদ্ধার স্বীকৃতিটুকু তাদের অধিকার। ‘জনম জনমের স্বপ্ন' উপন্যাসে ছদ্মনামে একজন অস্বীকৃত মুক্তিযােদ্ধার জীবনের কিছু সত্য ঘটনা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা এবং বিশ্বাস করি, অচিরেই এমন অবহেলিত মুক্তিযােদ্ধাদের স্বীকৃতি প্রদানে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান কার্যকর ভূমিকা পালনপূর্বক রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে যথাযথ সম্মান প্রদান করবে। বাংলাদেশ চিরজীবী হােক। -আজাদ বাকী
আজাদ বাকী, একজন লেখক, কবি ও সমাজসেবক। তার পিতা মাওলানা মো. আজগর আলী স্বনামধন্য শিক্ষক ছিলেন। মাতা মোছা. মেহের নিগার। আজাদ বাকী কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে এমএ এবং বিএড ও এমএড ডিগ্রি অর্জন করেন। প্রথম কর্মজীবনে শিক্ষকতা পেশায় থাকলেও বর্তমানে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাথে সম্পৃক্ত। তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের একজন তালিকাভুক্ত সংবাদ উপস্থাপক (বাংলা)। এ ছাড়া তিনি সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘জলছবি’র চেয়ারম্যান ও নির্বাহী প্রধান হিসেবে দায়িত্বরত। এ সংগঠনের মাধ্যমে তিনি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ফ্রি চিকিৎসাসেবা, বয়স্ক স্কুল প্রতিষ্ঠা, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, পথশিশুদের ফ্রি লেখাপড়ার ব্যবস্থা গ্রহণের আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্বাস্থ্যবিষয়ক বিভিন্ন কর্মশালা, এসিড নিক্ষেপ, যৌতুক প্রথা, নারী নির্যাতন, বাল্যবিবাহের কুফল, মাদকাসক্তির কুফলসহ বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক আলোচনাসভা, নাটকসহ অন্যান্য প্রচারাভিযানে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। তিনি স্বপ্ন দেখেন একটি শিক্ষিত, শিল্পিত জ্ঞানভিত্তিক সুুস্থ জাতির। সে লক্ষ্যে তার আন্তরিক প্রচেষ্টা নিত্য জাগরূক। তিনি মনে করেন, জাতির মানস গঠনে তার প্রচেষ্টা যদি সামান্যতম অবদানও রাখতে সক্ষম হয়, তাহলে নিজেকে সার্থক ও ধন্য মনে করবেন।