মধ্যবিত্ত ঘরের বড় সন্তান আমিনুল। টানাপড়েনের সংসারে জলাঞ্জলিতে যায় তার স্বপ্ন-সাধ, আশা-আকাক্সক্ষা। সংসারের বড় সন্তান হলে যা হয়- বাবা-মা, ভাইবোনকে রেখে পাড়ি জমায় বিদেশ বিভুঁইয়ে। কিন্তু সেখানে গিয়ে করবে কী? লেখাপড়ার দৌড় তো বেশি নয়; উচ্চ মাধ্যমিক পাস। প্রবল ইচ্ছাশক্তি আর আর অদম্য সাহসই তার উন্নতির প্রধান বাহন। নিজ যোগ্যতাবলে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি পায়। সেখান থেকেই শুরু। ধীরে ধীরে কর্মদক্ষতার বদৌলতে সেখানে নিজের একটা অবস্থান তৈরি করে নেয়। খুব দ্রæত নিজের এবং পরিবারে সচ্ছলতা আসে। এর জন্য অবশ্য তাকে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতে হয়। অতটুকুন ছেলে কী পরিশ্রমই না করে- এই বলে আমিনুলের মা কত আহাজারি করে। এর মধ্যে আমিনুল গ্র্যাজুয়েশনটাও সম্পন্ন করে, তবে তা কাজের পাশাপাশি। এত সব উন্নতির সাথে আরো কিছু যোগ হয় তার জীবনে; তা হলো একটি নিটোল প্রেম। হ্যাঁ প্রেম! তাও আবার মালিকের মেয়ের সঙ্গে। কী সাংঘাতিক! প্রথম দিকে সে একটু নার্ভাস ছিল। আস্তে আস্তে মেয়েটি নিজেই আমিনুলের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়ে। বলা যেতে পারে- মেঘ না চাইতে বৃষ্টি। তাকে আর আটকায় কে? সিনেমায় এ রকম অসম প্রেমের কাহিনি আমিনুল অনেক দেখেছে। কিন্তু তার জীবনেই ঘটে গেল এই আশ্চর্য ব্যাপারটি? তবে যতটা সহজ ভেবেছিল ততটা সহজ নয়। মাঝপথে কিছুটা বাধা হয়ে দাঁড়ান ফাহরিয়ার বাবা। মানে আমিনুলের সেই স্বপ্নের রানির নাম- ফাহরিয়া। আমিনুল আদর করে ডাকে ফারু। সে যা-ই হোক, এদিকে আমিনুলের বাবা-মাও তার জন্য পাত্রী নির্ধারণ করে। এ দেখি উভয় সংকট, মানে জলে কুমির ডাঙায় বাঘ। কিন্তু কোনো কুমির কিংবা বাঘ তার প্রেমের কাছে পাত্তা পায় না। কথায় আছে- স্বর্গ হতে আসে প্রেম স্বর্গে হয় লীন, প্রেমের বহ্নিশিখা জ্বলে চিরদিন। সেই স্বর্গীয় প্রেমে মগ্ন আমিনুল-ফাহরিয়া। শুধু মগ্ন হয়ে থাকলেই তো সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায় না। ফাহরিয়া যেমন আমিনুল ছাড়া কিছু ভাবতে পারে না, তেমনি আমিনুলও ফাহরিয়া ছাড়া কিছু বুঝতে চায় না। উভয় পরিবারের এই দ্বিমুখী সংকটে ঘুরপাক খেতে থাকে দুটি মনের চাওয়া-পাওয়া। তাহলে এখন উপায়? এই সব বাধা-বিপত্তিকে অতিক্রম করে দুটি হৃদয় কীভাবে মিলিত হবে তা জানতেই বদিউল আলমের ‘ফারু’ উপন্যাসটির পাতা উল্টাতে হবে।
বদিউল আলম। কবি, গল্পকার ও ঔপন্যাসিক। তিনি ১৯৫৬ সালের ৫ মে, চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলায় খাজুরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মরহুম হাজী সেকান্দর আলী মিয়া। মা মোসাম্মৎ ফাতেমা বেগম। কবি বদিউল আলম চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় হতে স্নাতক (সম্মান) ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৮২ সালের বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারে যোগদান করেন। মাঠপর্যায়ে কর্মরত থাকাকালে তিনি বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে উপভোগ করার সুযোগ পেয়েছেন। সরকারের যুগ্মসচিব পদ থেকে তিনি অবসরে এসে সাহিত্যাঙ্গণে পূর্ণ মনোনিবেশ করেন। নিসর্গপ্রেম, বিরহ, বেদনা, বাস্তবতা, সামাজিক, মনস্তাত্তি¡ক ও মানবিক বিষয়গুলো কবির কবিতায় নান্দনিক এবং সাবলীলভাবে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি একই সঙ্গে কবি, গল্পকার ও ঔপন্যাসিক। তাঁর প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ জুলুভাই (২০১৯) ও উপন্যাস- ফারু (২০১৯) শাহেদ (২০২০) শেষ উপহার (২০২০) কবরী (২০১২১) দেশে ও বিদেশে বাঙালি পাঠকদের ভূঁয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছে এবং আলোচিত ও সমাদৃত হয়েছে। তাঁর কাব্যগ্রন্থ- বলাকার দেশে (২০১৮), কে তুমি তন্দ্রাহরণী (২০১৮), সূর্যাস্তের সাথেই যাব (২০১৯), গোলাপ ছুঁয়েছি নিমগ্ন আবেগে (২০১৯) কবি মহলে ও কবিতাপ্রেমিদের মধ্যে ব্যাপকভাবে সাড়া জাগিয়েছে। ‘শিশিরের ঠোঁটে বেদনার নীল’ তাঁর পঞ্চম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ। এই কাব্যগ্রন্থে তাঁকে পাওয়া যাবে আরও পরিণত ও কাব্যদৃষ্টি সম্পন্ন একজন পরিপূর্ণ কবি রূপে।