কবি ও লেখক বদিউল আলমের ‘গোলাপ ছুঁয়েছি নিমগ্ন আবেগে’ কাব্যগ্রন্থ্যটিতে কবি এক অতুলনীয় রোমান্সের আবহ সৃষ্টি করেছেন। শুধু রোমান্স নয়, নৈসর্গিকতা কবিকে আচ্ছন্ন করে রাখে তার বেশির ভাগ রচনায়। কবি একক নীরবতায় নিঃসঙ্গ সময়ে প্রকৃতির কাছাকাছি চলে যান। গ্রন্থের সূচনায় কবির উপলব্ধি অতুল সৃষ্টিশীলতায় প্রকাশ পেয়েছে। ‘কোথাও কেউ নেই’ কবিতায় লিখেছেন- ‘প্রপাতের ধারাজলে তীব্র স্রোতে জলের উপর জলের জলকেলি কোথাও কেউ নেই।’ আবার- ‘অকালের বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত ক্রমশই হচ্ছে গভীর সবুজের আচ্ছাদনেও পাহাড়ের ঘুম নেই এলোমেলো গুহায় শেয়ালের ডাক ভেজা পাখিদের ক্ষীণস্বরে আকুতি পাহাড়ের অশ্রু ঝরে, বয়ে যায় নিরবধি নেমে যায় ঝর্ণার ছন্দে ঢালু ছড়ায় সেখানেও কেউ নেই, কোথাও কেউ নেই।’ কবি নৈসর্গিক সুষমাকে নীরবে উপভোগ করেন। কবি দেশপ্রেমিক সমাজ ও ইতিহাস সচেতন, মানবিক চেতনায় সমৃদ্ধ। ইতিহাস সচেতনতার কবি লিখেছেন, ১/লেলিনগ্রাদে হিটলারের পতন, ২/স্ব-অধিনতা কি স্বাধীনতা, ৩/মাতৃভ‚মি প্রিয় স্বদেশ, ৪/ বারবার লেগেছে দস্যি হাওয়া (বত্রিশ নম্বরে)। মানবতা বাদি কবিতাগুলোতে রোহিঙ্গা শরণার্থী ও রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বর হামলার তীব্র প্রতিবাদী কবিকে খুঁজে পাওয়া যায় তার কবিতা- ১/ বুদ্ধ অপমানে ভিখারি সাজে, ২/ মানবতা কাঁদে, ৩/ মানবতা কি রসিকতা। এমনি আরো প্রতিবাদী কবিতা রয়েছে- যেমন : বেহায়ার আন্তর্জাতিক সংস্করণ (তিস্তা চুক্তি প্রসঙ্গে)। কবির রোমান্স ভালোবাসানির্ভর অনেক কবিতা রয়েছে। কবি আশাবাদী আশার কথা বলেছেন। নতুন প্রজন্মকে নিয়ে ভাবনার কথা বলেছেন। শিরোনাম কবিতায় তার রোমান্টিকতার প্রকাশ। যেমন : ‘আমি গোলাপ ছুঁয়েছি ও বুকে নিমগ্ন আবেগে পাপড়ি গভীরে মিলনের সুধাসুখে নিঃশঙ্ক মন্থনে ভালোবাসায় কানে কানে সুধাতে যে মন চায় উদাসী আমি ভালোবাসি তোমায়।’ কবির সবগুলো কবিতাতেই শব্দ চয়নে মুগ্ধতার শৈলী আর ভাবের গতিময় প্রকাশ ও অনুভ‚তির প্রকাশ ঘটেছে এই কাব্যগ্রন্থ্যে। যেকোনো পাঠককেই কবিতাগুলো আকৃষ্ট করবে। বোদ্ধা পাঠকের কাছে একটি অনন্য কাব্যগ্রন্থ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার সকল উপাদানই ‘গোলাপ ছুঁয়েছি নিমগ্ন আবেগে’ কাব্যগ্রন্থ্যটিতে বিদ্যমান রয়েছে। প্রচ্ছদ শৈল্পিক শৈলীতে সুন্দর, অফসেট কাগজে ছাপানো বইটি নির্ভুল ও চমৎকার বাইন্ডিংয়ে প্রকাশিত হয়েছে।
বদিউল আলম। কবি, গল্পকার ও ঔপন্যাসিক। তিনি ১৯৫৬ সালের ৫ মে, চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলায় খাজুরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মরহুম হাজী সেকান্দর আলী মিয়া। মা মোসাম্মৎ ফাতেমা বেগম। কবি বদিউল আলম চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় হতে স্নাতক (সম্মান) ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৮২ সালের বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারে যোগদান করেন। মাঠপর্যায়ে কর্মরত থাকাকালে তিনি বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে উপভোগ করার সুযোগ পেয়েছেন। সরকারের যুগ্মসচিব পদ থেকে তিনি অবসরে এসে সাহিত্যাঙ্গণে পূর্ণ মনোনিবেশ করেন। নিসর্গপ্রেম, বিরহ, বেদনা, বাস্তবতা, সামাজিক, মনস্তাত্তি¡ক ও মানবিক বিষয়গুলো কবির কবিতায় নান্দনিক এবং সাবলীলভাবে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি একই সঙ্গে কবি, গল্পকার ও ঔপন্যাসিক। তাঁর প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ জুলুভাই (২০১৯) ও উপন্যাস- ফারু (২০১৯) শাহেদ (২০২০) শেষ উপহার (২০২০) কবরী (২০১২১) দেশে ও বিদেশে বাঙালি পাঠকদের ভূঁয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছে এবং আলোচিত ও সমাদৃত হয়েছে। তাঁর কাব্যগ্রন্থ- বলাকার দেশে (২০১৮), কে তুমি তন্দ্রাহরণী (২০১৮), সূর্যাস্তের সাথেই যাব (২০১৯), গোলাপ ছুঁয়েছি নিমগ্ন আবেগে (২০১৯) কবি মহলে ও কবিতাপ্রেমিদের মধ্যে ব্যাপকভাবে সাড়া জাগিয়েছে। ‘শিশিরের ঠোঁটে বেদনার নীল’ তাঁর পঞ্চম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ। এই কাব্যগ্রন্থে তাঁকে পাওয়া যাবে আরও পরিণত ও কাব্যদৃষ্টি সম্পন্ন একজন পরিপূর্ণ কবি রূপে।