দৈনিক পত্রিকাগুলোতে প্রতি সপ্তাহে একটি রম্য পাতা বা ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয়। এই সমস্ত পাতা বা ম্যাগাজিনের প্রকাশিত লেখাগুলো সর্ব সাধারণ উপযোগী করে প্রকাশিত হয়। এতে যারা নিয়মিত লিখছেন তাদের মধ্যে একজন উল্লেখযোগ্য লেখক মোহাম্মদ অয়েজুল হক। তিনি বাস্তব জীবনের নানা জঙ্গমতা আর বিচ্যুতিগুলোকে চিহ্নিত করে হাসি-ঠাট্টার ছলে গল্পগুলো লিখেছেন। ৬৪ পৃষ্ঠার এই বইটিতে ২০ টি রম্যগল্প সংকলন করা হয়েছে। নির্বাচিত সব গল্পগুলোই সমকাল, যুগান্তর, ইত্তেফাকের মতো দেশের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকাগুলোতে প্রকাশিত হয়েছে। সে হিসেবে এ গল্পগুলোর পাঠকরা লেখার মানের বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারেন। সেই সাথে যারা পত্রিকায় এ গল্পগুলো পূর্বে পাঠ করছেন তাদের আনন্দ এই যে, গল্পগুলো একমালটে করে সংগ্রহ ও পুনঃপাঠ দেয়ার একটা সুযোগ করে দিয়েছেন মোহাম্মদ অয়েজুল হক। সাহিত্যের যে কতোগুলো শাখাপ্রশাখা রয়েছে তার মধ্যে রম্যগল্প খুবই একটি শক্তিশালী ও কার্যকরী শাখা। কেননা রম্য গল্পের মাধ্যমে যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ত্রুটিবিচ্যুতিগুলো আকারে ইঙ্গিতে, হাসি-তামাসা করে প্রকাশ করা হয়। এতে করে সেই সব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের খুব দ্রুত টনক নড়ে। এ বইটিতে ঠিক তেমনি টনক নাড়িয়ে দেয়ার মতো গল্প রয়েছে। এলাকার প্রবীণ পাতি নেতার সম্মোধনগত সমস্যা নিয়ে একটি মজার গল্প ‘কেমন আছেন’ দিয়ে শুরু এ বইটি। ‘চাকরি বিক্রয় হইবে’ এ বইটির একটি উল্লেখযোগ্য গল্প। চাকরি প্রার্থীদের যে করুণ পরিণতি তার চিত্র আরও স্বকরুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন এ গল্পে। এক, দুই থেকে সর্বোচ্চ তিন পৃষ্ঠার মধ্যে গল্পগুলোর পরিসর। বর্তমান সময়ে হাসি বা রম্যগল্পের নামে কিছু অসামঞ্জস্য বা অসংলগ্ন গল্প নানা জায়গায় চোখে পড়ে। যা পাঠকদের একটা বিরক্তি ও অনীহাভাব তৈরি করে। এক্ষেত্রে এ বইটির প্রতি গল্পই পাঠকে দেবে রম্য গল্প পাঠের স্বাদ ও নির্মল আনন্দ সেই সাথে বোধের উত্তাপও।
মোহাম্মদ অয়েজুল হক। নড়াইল জেলার কালিয়া থানার অন্তর্ভুক্ত টোনা গ্রামে তার নানাবাড়িতে ১৯৮৫ সালের ২৭ নভেম্বরে জন্মগ্রহণ করেন। দাদাবাড়ি বা গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী থানার অন্তর্ভুক্ত ফলসী গ্রাম। বাবার চাকরির সুবাদে বেড়ে ওঠা খুলনা শহরে। সরকারি ল্যাবরেটরি উচ্চ বিদ্যালয়, খুলনা থেকে এসএসসি ও সরকারি সুন্দরবন কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল থেকে হার্ডওয়্যার ও ট্রাবল শুটিংয়ে ডিপ্লোমা করে ঢুকে পড়েন চাকরিজীবনে। ছোটবেলা থেকেই অগোছাল জীবন যাপনে অভ্যস্ত। লেখালেখিও সেই ছোটবেলা থেকে। অষ্টম শ্রেণির ছাত্র থাকা অবস্থায় তার প্রথম লেখা প্রকাশিত হয় তৎকালীন জনপ্রিয় সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন যায়যায়দিন-এ। একই সময়ের জনপ্রিয় সাপ্তাহিকী-সাপ্তাহিক চলতিপত্রে লিখেছেন অসংখ্য গল্প, ছড়া। সাপ্তাহিক চলতিপত্রের কলামিস্ট হিসেবে মাথাগোল হকের কলাম শিরোনামে নিয়মিত কলামও লিখেছেন। বাংলাদেশের প্রথম রম্য ম্যাগাজিন দৈনিক ইনকিলাবের উপহারে লিখেছেন অসংখ্য রম্য গল্প ও ফিচার। দৈনিক ইত্তেফাক, সমকাল, যুগান্তর, বাংলাদেশ প্রতিদিনে লিখেছেন রম্য গল্প। প্রথম উপন্যাস ‘পথে পথে’ মদিনা পাবলিকেশন্স থেকে ২০১১ সালের একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়। মোহাম্মদ অয়েজুল হকের অন্যান্য বই : বইঘর থেকে প্রকাশিত উপন্যাস ছায়াসিমি-২০১৬, চাঁদের আলো দিনরাত-২০১৫। একই প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয় সম্পাদিত গল্প সংকলন ‘আকাশের স্বপ্নগুলো ছুঁয়ে দেব’ ও যৌথ কাব্যগ্রন্থ স্বপ্নস্নান’। জাতীয় দৈনিকের সাহিত্য পাতায় লিখে চলেছেন ছোটগল্প, শিশুতোষ গল্প। একজন ব্লগার হিসেবে প্রথম আলো ব্লগ, সামহোয়ারইন ব্লগ, শব্দনীড়ে একসময় লিখেছেন গল্প, প্রবন্ধ, কবিতা। ২০১৮ সালে জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত রম্য গল্প নিয়ে সাহিত্যদেশ ২০১৯-এর একুশে বইমেলায় প্রকাশ করেছিল, ‘গল্পের সাথে হেসেছিল গল্পগুলো’। একই প্রকাশনী থেকে ২০২০ সালে প্রকাশিত হয় মোহাম্মদ অয়েজুল হকের উপন্যাস,আজ আকাশে চাঁদ নেই।