"হাইজেনবার্গের গল্প" প্রচ্ছদ কাহিনী: ১৯৩৯ সালে শুরু হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। আটলান্টিক মহাসাগরের অপর পাশে যুক্তরাষ্ট্র তার বিখ্যাত “Manhattan Project” শুরু করে যেখানে রবার্ট অপেনহাইমার সাহেবের নেতৃত্বে প্রথম মার্কিন পারমাণবিক বোমা তৈরির গবেষণা চলছিলো। যুদ্ধে টিকে থাকতে হলো হিটলারকেও বানাতে হবে জার্মান এটম বোম! কিন্তু, কে বানাবে এই মারণাস্ত্র? হিটলার কড়া নাড়লেন হাইজেনবার্গের দরজায়। গত চার দশক ধরে যেই নামকড়া জার্মান বিজ্ঞানীরা পরমাণুর গঠনের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিতে দিন-রাত এক করে ফেলেছিলেন তারাই এবার শুরু করলেন জার্মান নিউক্লিয়ার রিসার্চ টীম — ইউরেনিয়াম ক্লাব। হাইজেনবার্গ হিটলারের শত্রু থেকে পরিণত হলেন মিত্রে। ভূমিকা: লেখা-লেখির অভ্যাসটা বেশ অনেকদিন ধরেই আমার উপর চেপে বসেছে। আমি বিজ্ঞানের মানুষ; আমার বসবাস ল্যাবরেটরীর সাদা আলোর নীচে। সেই জীবনটা বেশ কঠিন পরিশ্রমের; প্রায়শই রাজ্যের ক্লান্তি ভর করে শরীরটার উপর। এমন অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে সাধারণত আমি ল্যাব থেকে বের হয়ে রাস্তার ধারের একটা কফিশপে ঢুকে পড়ি। গরম ধোঁয়া তোলা তিতা স্বাদের কালো বর্ণের তরলে চুমুক দিতে দিতে ল্যাপটপটা বের করে আরম্ভ করি লেখা-লেখি। বেশির ভাগ সময়ে সেই গল্পগুলোতেও চলে আসে আমার ল্যাবের বিজ্ঞান। ২০১৭ সালের শুরু দিকে আমার আদরের ছোট ভাই ফাহমিদের সফটওয়ার ফার্ম (batttery low interactive) আমার নামে একটি ব্লগ ওয়েবসাইট বানিয়ে দেয়। www.shamirmontazid.com । নিজের লেখা বিজ্ঞান আর ভ্রমণ বিষয়ক গল্পগুলো একটু একটু করে প্রকাশ করতে থাকি ফেইসবুকে। এই সাইটটায় প্রতি সপ্তাহে প্রায় চার-পাঁচ হাজার মানুষ আমার লেখা পড়তে আসে। আমি বেশ অবাক হয়ে যাই। ফেইসবুকের জঞ্জালে কেটী পেরী এবং ক্যাট ভিডিও বাদ দিয়ে আমার বিশাল বিশাল ঘুমপাড়ানী বিজ্ঞান বিষয়ক বাংলা প্রবন্ধ পড়তে মানুষ কেন আগ্রহী হবে? কিছু মানুষের কাছে আমি সরাসরি কারণটা জানতে চাইলাম। ১০ মিনিট স্কুলের আদরের সহকর্মী অভীপ্সু (IBA, JU) বলেছিলো, “ভাইয়া, আমি ব্যবসায় শিক্ষার ছাত্র কিন্তু বিজ্ঞানকে ভালোবাসি। কঠিন রিসার্চ পেপার পড়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু, যতবারই আপনার লেখা সায়েন্স আর্টিকেল পড়েছি ততবারই বিজ্ঞানে একটু বেশী আকৃষ্ট হয়েছি।” অভিপ্সুর কথাটা বেশ মনে ধরলো। বিজ্ঞান তো কেবল যারা সায়েন্স বিভাগে পড়ে তাদের পৈতৃক সম্পত্তি নয়। আমার ল্যাবের বিজ্ঞানটা সবার। এর আবিষ্কারের আনন্দটাও তাই সবাই সমানভাবে উদযাপন করবে। অক্সফোর্ডের বন্ধু আনিসুল করিম সবসময় আমার গল্প বলার ক্ষমতার ভূয়সী প্রশংসা করে থাকে। তাই, শেষ মেষ ঠিক করে ফেললাম যে, একটা বিজ্ঞান বিষয়ক গল্পের বই লিখবো যা বিজ্ঞানের ছাত্র না হয়েও সবাই পড়তে পারবে। ব্লগ থেকে বই লেখার পেছনের মূল কৃতিত্বটা অধ্যয়ন প্রকাশনীর তাসনোভা আপুর। তার সাথে প্রথম মিটিং-এর পর আমি ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডে পিএইচডি করতে চলে আসি। ফেইসবুক মেসেঞ্জারে তিনি দিনের পর দিন আমাকে পান্ডুলিপি পাঠানোর জন্য তাগিদ দিতেন। এই শনিবার, আগামী রবিবার করে করে দুই মাস পর আমি তাকে ব্লগ সাইট থেকে পূর্ব প্রকাশিত ১৫ টি গল্প-প্রবন্ধ একসাথে করে পাঠাই। উনি বললেন, এগুলো নাকি বই হিসেবে পড়তেও ভালো লাগবে। যেহেতু প্রকাশক মানুষ বলেছেন, সেহেতু আশায় বুক বাধঁলাম। যেই মানুষটা গত দেড় বছরে মাত্র ১৫টা বিজ্ঞান বিষয়ক ব্লগ লিখেছে সেই মানুষটাই মাত্র একমাসে আরো নতুন ১০টা গল্প লিখতে মনস্থির করলো। আজ ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ অ্যামস্টারড্যামের এক কফিশপে বসে শেষ গল্পটা লিখে ফেললাম। পূর্বপ্রকাশিত ১৫টি এবং নতুন লেখা ১০টি গল্পসহ মোট ২৫টি কাহিনী থাকছে “হাইজেনবার্গের গল্পে”। এই বইটির নাম আমি প্রথম দিতে চেয়েছিলাম “হাইজেনবার্গের প্রলাপ”। ১০ মিনিট স্কুলের কেমিস্ট্রি শিক্ষক হিসেবে আমার ছাত্ররা হাইজেনবার্গ নামটা বেশ পছন্দ করেছিলো। ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ সাহেব আমার সবচেয়ে পছন্দের বিজ্ঞানী। তাই বিজ্ঞানবিষয়ক কিছু করার সময় হাইজেনবার্গ নামটাই আমি বেশী ব্যবহার করি। এই বইয়ের সবগুলো আর্টিকেলকে গল্প বলা যাবে না। কিছু কিছু অংশ আমার মতামত কলুষিত প্রবন্ধ। কয়েকটি অংশে রয়েছে কিছু মজার সায়েন্স এক্সপেরিমেন্ট, কয়েকজন বিজ্ঞানীর জীবনকাহিনী; তবে বেশীর ভাগই সত্যিকার ঘটনা যা আমার মতো বিজ্ঞানপাগল মানুষেরা পড়ে প্রতিনিয়ত রোমাঞ্চিত হয়। তাই গল্প-প্রবন্ধ-উপন্যাস কোন ক্যাটাগরীতে বইটা যাবে তা আমি নির্ধারণ করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছি। আমি সাহিত্যিক নই, বিজ্ঞানী। সাহিত্যের ব্যাকরণ বিচারে হয়তো এই বইটা ডাস্টবিনের নিচের দিকে অবস্থান লাভ করবে। তবে আমার লেখা গল্পগুলো যদি এক-দুইটা স্কুল পড়ুয়া বাচ্চাকে বিজ্ঞানের প্রতি আকৃষ্ট করতে পারে তাহলে আমার এই বই লেখার উদ্দেশ্য সার্থক হবে। এই বইটা আমি বিশ্বের বেশ কিছু শহরের কফিশপে বসে লিখেছি। ঢাকার নর্থ এন্ড, অক্সফোর্ডের কস্তা কফি, এডিনবরার এলিফেন্ট হাউস, মক্কার স্টার বাকস, থিম্পুর কফি কালচার, অ্যামস্টারডামের ভাস্কোবেলোতে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে শুধুমাত্র এককাপ কফি খেয়ে ফ্রি ওয়াইফাই কাজে লাগিয়ে এই বইয়ের অধিকাংশ গল্প লেখা হয়েছে। এই প্রতিটি কফিশপের প্রতি তাই আমার গভীর কৃতজ্ঞতা। আরো কৃতজ্ঞতা আমার বন্ধু শুভ, স্বর্ণা, শামস, আয়মান, অমিতা, ইফতি, বাঁধন, অভিষেক আর ওমরের প্রতি যারা প্রতিনিয়ত আমার জীবনটা উপভোগের সঙ্গী হয়েছে। হাইজেনবার্গের গল্পের এখানেই শেষ নয়। বিশ্বের প্রতিটা কোণার কফিশপে বসে আরো গল্প লিখবো। সেগুলো প্রকাশিত হবে আগামী বছরগুলোতে। আশা করি বিজ্ঞানের জগতে আপনার পরিভ্রমণ সুখকর হোক। জয়, বিজ্ঞানের জয়! "হাইজেনবার্গের গল্প" সূচিপত্র বিজ্ঞান কীভাবে কাজ করে? /১৫ পৃথিবীর প্রথম ভ্যাকসিন /২১ ব্লু ম্যাজিক পিল /২৪ পাস্তুরাইজেশন /২৭ থ্যালিডোমাইড কেলেংকারি /৩০ জঙ্গীবাদের পেছনে আছে DNA /৩৩ একজন বিজ্ঞানী এবং ইসরাঈল /৩৫ স্পার্ম তিমির তেলের গল্প /৩৭ নিষ্পাপ ফাঁসির আসামী /৩৯ মশা ও HIV Virus /৪১ মা যখন খুনী (নয়) /৪৩ ভুল যখন ভালো /৪৪ নীরব ঘাতক /৪৭ ডিম সমাচার /৪৯ যুদ্ধাস্ত্র থেকে মাইক্রোওভেন /৫১ উটপাখির যত দোষ /৫৩ ২০০ বছর পর পিতা-পুত্রের পরিচয় /৫৬ ষষ্ঠ ইন্দ্রীয় /৫৮ ভ্রূণের মহাবিশ্ব /৬৩ কাইমেরিক মা /৬৫ মহাশূণ্যে বারো মাস /৬৭ বিবর্তনের রূপকথা /৭০ রোগ যখন জীবন বাচাঁয় /৭৬ অ্যালান টিউরিং /৭৮ হাইজেনবার্গ /৮৩
এদেশের তরুণ উদ্যোক্তাদের মধ্যে যে ক’জন আপন আলোয় উদ্ভাসিত হয়েছেন এবং বিশেষভাবে খ্যাতি অর্জন করেছেন তাঁদের মধ্যে একজন শামীর মোন্তাজিদ। তিনি একাধারে একজন বিজ্ঞানী, গবেষক, পর্যটক, অনলাইন শিক্ষক এবং লেখক। আয়মান সাদিকের প্রতিষ্ঠা করা বিখ্যাত অনলাইন লার্নিং প্লাটফর্ম ‘টেন মিনিট স্কুল’ এর চিফ অপারেটিং অফিসার হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন, এবং একইসাথে এই দায়িত্ব পালনকালে তিনি বিভিন্ন শিক্ষামূলক ভিডিও তৈরির মাধ্যমে অর্থাৎ অনলাইন ভিডিও এর মাধ্যমে লেকচার দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের নিকট অনলাইন শিক্ষক হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। রসায়ন ও জীববিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ের লেকচার সমৃদ্ধ অন্তত চার শতাধিক ভিডিও তিনি তৈরি করেছেন। তিনি ‘হাইজেনবার্গ’ নামে সকলের নিকট অধিক পরিচিত। শিক্ষাজীবনে তিনি ছিলেন বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করার পর শামীর মোন্তাজিদ ২০১১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হন এবং এখান থেকে কৃতিত্বের সাথে স্নাতক সম্পন্ন করেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদ থেকে ডীন’স অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। এরপর বঙ্গবন্ধু সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি ফেলোশিপ এর বৃত্তি লাভ করেন এবং সেই সুবাদে বিশ্বখ্যাত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান। বর্তমানে সেখানে মেডিকেল সায়েন্সের উপর পড়াশোনা করছেন ও সেই সূত্রে যুক্তরাজ্যেই বসবাস করছেন। বর্তমানে ক্যান্সার প্রতিরোধ বিষয়ক একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন। শামীর মোন্তাজিদ লেখালেখির ক্ষেত্রেও বেশ সিদ্ধহস্ত। শামীর মোন্তাজিদের বই এর সংখ্যা বেশি নয়। তিনি মূলত লেখালেখি করেন তাঁর নিজস্ব ওয়েবসাইট ‘shamirmontazid.com’-এ, যেখানে তিনি ৬০টির বেশি ব্লগ লিখেছেন নিজের জীবন থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েই। তিনি খাওয়াদাওয়া করতে ও রান্না করতে খুব পছন্দ করেন এবং আরো বেশি পছন্দ করেন দেশ-বিদেশ ভ্রমণ করতে। এসব বিষয় নিয়েই লেখা হয়েছে শামীর মোন্তাজিদ এর বই সমূহ। শামীর মোন্তাজিদ এর বই সমগ্র এর মধ্যে একটি প্রকাশিত হয়েছে, যার নাম ‘হাইজেনবার্গের গল্প’। আরেকটি শীঘ্রই প্রকাশিত হতে যাচ্ছে, যার নাম ‘উড়ছে হাইজেনবার্গ’, যেখানে তাঁর ভ্রমণের তীব্র নেশা থেকে বিভিন্ন দেশ ঘুরতে বেরিয়ে পড়ার ও সেসব ভ্রমণের বিভিন্ন মজাদার কাহিনী উঠে এসেছে। তিনি তাঁর লেখালেখির মাধ্যমে এদেশের তরুণ সমাজকে ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত করে যাচ্ছেন।