‘বড় প্রশ্ন ছোট উত্তর’ বইয়ের ফ্ল্যাপের কথাঃ আমাদের কালের নায়ক স্টিফেন হকিং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত নিজের গবেষণা আর লেখালেখি চালিয়ে গেছেন, ব্যস্ত থেকেছেন নিজের শেষ বইয়ের পাণ্ডুলিপি নিয়ে । কিন্তু সেটি পুরোপুরি শেষ করে যেতে পারেননি। হকিংয়ের মৃত্যুর পর তার পরিবারের সদস্য এবং বন্ধুরা কাজটি শেষ করেন। এ কাজে যুক্ত ছিলেন কিপ থর্ন, পল ডেভিস, মাটিন রিসসহ অনেকেই। ২০১৮ সালের জুলাইয়ে বইটি 'ব্রিফ আনসারস টু দ্য বিগ কোয়েশ্চনস' শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে। তারই বাংলা অনুবাদ 'বড় প্রশ্ন ছোট।উত্তর'। জীবনভর বড় বড় প্রশ্ন নিয়ে ভেবেছেন হকিং। সেসবের উত্তর খুঁজছেন। এই বই হকিংয়ের এসব চিন্তা ও গবেষণার সংকলন। বইটি মহাবিশ্বের জন্ম, বিগ ব্যাং, স্থান-কাল, কৃষ্ণগহ্বর, টাইম ট্রাভেলের মতে হকিংয়ের প্রিয় বিষয়গুলো ছাড়াও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মহাকাশ ভ্রমণ, এলিয়েন, জিনপ্রযুক্তি, নিউক্লিয়ার যুদ্ধ এবং মানুষের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করেছেন তিনি। বইটির মুখবন্ধ লিখেছেন 'দ্য থিওরি অব এভরিথিং' চলচ্চিত্রে স্টিফেন হকিংয়ের নাম ভূমিকায় অভিনয় করা ব্রিটিশ অভিনেতা এডি রেডম্যান। আর মহাকর্ষ তরঙ্গ শনাক্তে অবদান রেখে ২০১৭ সালের নোবেল বিজয়ী মার্কিন তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী কিপ থর্নের লেখা ভূমিকা বইটিকে অন্য মাত্রা দিয়েছে। শেষ কথা লিখেছেন হকিংয়ের মেয়ে লুসি। এ তিনটি রচনা স্টিফেন হকিং এবং তাঁর গবেষণায় নতুন আলো ফেলেছে।
স্টিফেন উইলিয়াম হকিং একাধারে একজন তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী, মহাবিশ্ববিজ্ঞানী এবং লেখক। তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের তাত্ত্বিক মহাকাশবিদ্যা বিভাগের পরিচালক এবং অধ্যাপক ছিলেন। বিংশ ও একবিংশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা এই মেধাবী মানুষটির নাম শোনেননি, এমন পড়াশোনা জানা মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। স্টিফেন হকিং ১৯৪২ সালের ৮ জানুয়ারি যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ডে জন্মগ্রহণ করেন। স্কুলের পড়াশোনার পাট চুকিয়ে পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়ন বিষয়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এরপর কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত মহাকাশতত্ত্ববিদ ডেভিড সিয়ামার তত্ত্বাবধানে পিএইচডি প্রোগ্রামে যোগ দেন। গ্যালিলিওর জন্মের ঠিক তিনশ বছর পর জন্ম নেওয়া এই বিজ্ঞানী তখন থেকেই তাঁর প্রতিভার স্ফূরণ ঘটাতে থাকেন। পিএইচডি শেষ করার আগেই মাত্র ২১ বছর বয়সে তাঁর জীবন আচমকা থমকে দাঁড়ায়। মোটর নিউরন রোগ বা এমায়োট্রফিক ল্যাটেরাল স্ক্লেরোসিস নামক এক বিরল রোগে আক্রান্ত হন হকিং। এই রোগে পেশি নাড়ানোর জন্য দায়ী নিউরনগুলোর মৃত্যু ঘটতে থাকে এবং শরীরের প্রায় সব অংশ অচল হয়ে যেতে থাকে। বাগদত্তা জেইন ওয়াইল্ড ও সুপারভাইজার সিয়ামার অনুপ্রেরণায় আশার সঞ্চার হয় তাঁর মাঝে। ঠিকমতো কলমটিও ধরতে না পারা এই বিজ্ঞানী ১৯৭৪ সালে বিজ্ঞানী রজার পেনরোজের সাথে তাঁর কালজয়ী ব্ল্যাকহোল তত্ত্ব প্রকাশ করেন, বর্তমানে যা হকিং রেডিয়েশন নামেও পরিচিত। তিনি রয়্যাল সোসাইটি অফ আর্টস এর সম্মানিত ফেলো এবং পলিটিক্যাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সের আজীবন সদস্য ছিলেন। ২০০৯ সালে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরষ্কার ‘প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অফ ফ্রিডম’ খেতাবে ভূষিত হন। লেখক হিসেবেও হকিং বিস্ময়কর কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। স্টিফেন হকিং এর বই সমূহ পাঠক সমাজে বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। তাঁর নিজের তত্ত্ব ও বিশ্বতত্ত্ব নিয়ে রচিত বই ‘আ ব্রিফ হিস্ট্রি অফ টাইম’ দিয়ে তিনি ব্রিটিশ সানডে টাইমস এর বেস্ট সেলার তালিকায় ছিলেন টানা ২৩৭ সপ্তাহ। স্টিফেন হকিং এর রচনা সব ধরনের পাঠকদের কাছে জটিল বৈজ্ঞানিক কথাবার্তা সহজভাবে জানার পাথেয় হিসেবে সমাদৃত হয়েছে। বিশ্ববিখ্যাত এই বিজ্ঞানীকে ১৯৭৯ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের লুকাসিয়ান অধ্যাপকের সম্মাননা দেওয়া হয়। ২০০৯ সালে তিনি এই পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। পাঠকনন্দিত স্টিফেন হকিং এর বই সমগ্র হলো ‘দ্য ইউনিভার্স ইন আ নাটশেল’, ‘দ্য গ্র্যান্ড ডিজাইন’, ‘মাই ব্রিফ হিস্ট্রি’, ‘দ্য থিওরি অফ এভরিথিং’, এবং ‘দ্য নেচার অফ স্পেস অ্যান্ড টাইম’। ২০১৪ সালে ইউনিভার্সাল পিকচার্স ‘দ্য থিওরি অফ এভরিথিং’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করে। এই সিনেমায় স্টিফেন হকিং এর ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য এডি রেডমেইন জিতে নেন অস্কার। শারীরিকভাবে ভীষণ রকম প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েও হকিং তাঁর গবেষণা কার্যক্রম সাফল্যের সাথে চালিয়ে যান। ২০১৮ সালের ১৪ মার্চ ৭৬ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।