"নজরুলের প্রবন্ধ সমগ্র"বইটির প্রসঙ্গে কিছু কথা: জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সৃষ্টিশীলতার মাধ্যমে বাংলাদেশের শিল্পসাহিত্য-সংগীতের নানামাত্রিক ধারা সমৃদ্ধতর হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে গল্পকার হিসাবে আনুষ্ঠানিকভাবে সাহিত্যাঙ্গনে পদার্পণ করলেও পরবর্তী সময়ে তিনি কবিতা, উপন্যাস, সংগীত এবং চলচ্চিত্রাঙ্গনেও অনবদ্য অবদান রেখেছেন। এছাড়া তিনি শুধু শিল্প-সাহিত্যের ক্ষেত্রেই তাঁর কর্মযজ্ঞ সীমাবদ্ধ রাখেননি, প্রান্তিক জনগােষ্ঠীর অধিকার আদায়ের সংগ্রামে, উপনিবেশিক শােষণমুক্ত স্বাধীন ভারত বিনির্মাণে এবং সর্বোপরি বাঙালি জাতির জাতিগত জাগরণের ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের পাথেয় হিসাবে তাই জাতীয় কবির চর্চা অত্যাবশ্যক। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নস্নাত স্বাধীন বাংলাদেশে বৈষম্যহীন, লৈঙ্গিক সমতাভিত্তিক এবং অসাম্প্রদায়িক সমাজ বিনির্মাণের নিমিত্ত জাতীয় কবির সৃষ্টিশীলতার চর্চা একান্ত অপরিহার্য। সেই অভীষ্টের অনুষঙ্গ হিসেবে নজরুলের প্রবন্ধ সমগ্র’র বর্তমান মুদ্রণ প্রকাশের প্রয়াস। এ-গ্রন্থে বাংলা একাডেমি প্রকাশিত নজরুল-রচনাবলীর জন্মশতবর্ষ সংস্করণের পাঠ (নতুন সম্পাদনা পরিষদ কর্তৃক সম্পাদিত) অনুসরণ করা হয়েছে।
১৮৯৯ সালের ২৪ মে (১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার, অভিনয়শিল্পী, সুরকার ও প্রবন্ধকার। নজরুলের বাল্যকাল কেটেছে দুঃখ-দুর্দশায়। তাই তাঁর ডাকনাম ছিলো দুখু মিয়া। তাঁর বৈচিত্র্যময় শিক্ষাজীবন শুরু হয় গ্রামের মক্তবে। পিতৃহীন হওয়ার পর তিনি পড়ালেখা ছেড়ে যোগ দেন লেটোর দলে, যেখান থেকে তিনি কবিতা ও গান রচনার কৌশল রপ্ত করেন। পরবর্তীতে এক বছর ময়মনসিংহের দরিরামপুর হাই স্কুলে পড়ে পুনরায় চুরুলিয়ায় রানীগঞ্জের শিয়ারসোল রাজ স্কুলে ভর্তি হন, এবং সেখানে তিন বছর অধ্যয়ন করেন। প্রবেশিকা পরীক্ষার আগেই তাকে পড়ালেখা ছাড়তে হয় যুদ্ধে যোগদানের জন্য। যুদ্ধের দিনগুলোতে নানা জায়গায় অবস্থান করলেও তার করাচির সৈনিকজীবনই উল্লেখযোগ্য, কেননা সেসময়েই তার প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায় ‘বাউণ্ডেলের আত্মকাহিনী’ নামক গল্প প্রকাশের মাধ্যমে। কাজী নজরুল ইসলাম এর বই সমূহ’র বিষয়বস্তু বিবিধ। তবে কাজী নজরুল ইসলাম এর বই-এ সমকালীন রাজনৈতিক ও সামাজিক যন্ত্রণা এবং সাম্যবাদের ধারণা প্রকটভাবে স্থান করে নিয়েছে। রাবীন্দ্রিক যুগে তার সাহিত্য প্রতিভা উন্মোচিত হলেও তার সৃষ্টি সম্পূর্ণ ভিন্ন। কাজী নজরুল ইসলাম এর বই সমগ্র এর মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো ‘রিক্তের বেদন’, ‘দোলনচাঁপা’, ‘বিষের বাঁশি’, ‘সাম্যবাদী’, ‘সর্বহারা’, ‘প্রলয়শিখা’ ইত্যাদি। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী নজরুল ‘সাপ্তাহিক লাঙল’, দ্বিসাপ্তাহিক পত্রিকা ‘ধূমকেতু’র সম্পাদক ছিলেন। বাংলাদেশের জাতীয় কবি এবং বাংলা সাহিত্যের বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ২৯ আগস্ট ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।