সব আখ্যান গল্প হয় না। বহু যত্নে কেটে ছেটে আমাদের জীবন ও ভাবনার অন্তর্গত আখ্যানের ভেতর থেকে বের করে আনতে হয় ভাস্কর্যের মতাে অনন্য গল্পকে। এরকম নিখুঁত গল্পের শৈলী আয়ত্ব করেই গল্প লিখতে শুরু করেছেন দীপেন ভট্টাচার্য। তার শব্দ স্নিগ্ধ, বাক্য সুষমামাখা, আখ্যান মানবিক। একই গল্পের মধ্যে বহু গল্পের ইশারা বুনে রাখেন। এবং প্রতিটি ইশারাতেই তিনি এমনভাবে বাঁক নির্মাণ করেন যে পাঠকের কোনাে পূর্ব-অনুমানই ধূলিস্মাৎ হয়ে যেতে বাধ্য। তার গল্পে বিজ্ঞান, পুরান, কল্পনা, ইতিহাস, দার্শনিকতার অসামান্য সম্মিলন থাকে। থাকে সময় থেকে সময়ান্তরে যাত্রা। বাস্তব জগতকে অনায়াসে টেনে নিয়ে যান। যাদুবাস্তবতায়। এর সঙ্গে সহজে মিশিয়ে দেন। ফ্যান্টাসি ও সাইফাই কল্প বিজ্ঞানকে। এবং তার উদ্দেশ্য থাকে যে কোনাে গল্পকেই সত্যি করে তােলা। এ সত্যি করে তােলার পাশাপাশি তিনি গল্পের পাঠককে তার গল্পের স্থান ও সময় থেকে মাঝে মাঝেই বের্টোল্ট ব্রেশটের এলিয়েনেশন তত্ত্বের মতাে করে বিচ্ছিন্ন করে আনেন। তাঁকে ভাবনার পরিসর যােগান। পাঠককে নতুন ভাবনায় উস্কে দেন। সেখানে গল্পকার ও পাঠক দুজনেই এই গল্পের প্রকৃত নির্মাতা হয়ে ওঠে। তার যে কোনাে গল্পই বহু গল্পের জননী। প্রিয় পাঠক, এ বইটিতে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে দীপেন ভট্টাচার্যের লেখা বিশ্বমাত্রিক ৮টি গল্প।
জন্ম ১৯৫৯ সালে। আদি নিবাস এলেঙ্গা, টাঙ্গাইল। ঢাকার সেন্ট গ্রেগরিজ স্কুল, নটর ডেম কলেজ ও ঢাকা কলেজে পড়াশোনা করেছেন। রাশিয়ার মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে পদার্থবিদ্যায় মাস্টার্স এবং ১৯৯০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব নিউ হ্যাম্পশায়ার থেকে জ্যোতিঃপদার্থবিদ্যায় পিএইচডি করেন। নাসার গডার্ড স্পেস ফ্লাইট ইনস্টিটিউটে গবেষক ছিলেন। পরে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার রিভারসাইড ক্যাম্পাসে গামা রশ্মি জ্যোতির্বিদ হিসেবে যোগ দেন। পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় বায়ুমণ্ডলের ওপরে বেলুনবাহিত গামা-দুরবিন ব্যবহার করে মহাকাশ গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন। বর্তমানে ক্যালিফোর্নিয়ার মোরেনো ভ্যালি কলেজের পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক। ২০০৬-২০০৭ সালে ফুলব্রাইট ফেলো হয়ে ঢাকার ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান। বাংলাদেশে বিজ্ঞান ও পরিবেশসচেতনতার প্রসারে যুক্ত। তাঁর চারটি গল্পগ্রন্থ ও পাঁচটি বিজ্ঞানকল্প উপন্যাস অভিজিৎ নক্ষত্রের আলো, দিতার ঘড়ি, নক্ষত্রের ঝড় এবং অদিতার আঁধার, নিওলিথ স্বপ্ন। বাংলাদেশের ভূতাত্ত্বিক ইতিহাসের ওপরও তাঁর একটি বই প্রকাশিত হয়েছে।