এই মুহূর্তে দুই বাংলাতেই বেশ কয়েকটি প্রকাশনা থেকে হ য ব র ল প্রকাশিত হয়েছে এবং বই-বাজারে সেসব বই সহজলভ্য। তবুও কেন হ য ব র ল প্রকাশ করলাম আমরা। এমন প্রশ্ন শুধু বন্ধুবান্ধব নয়, কয়েকজন মান্যজনের কাছ থেকেও শুনতে হয়েছে। প্রসঙ্গত জানাই হ য ব র ল সুকুমার রায় পরিকল্পিত দ্বিতীয় বই। ইউ রায় অ্যান্ড সন্স থেকে প্রকাশ পাবার পর সে বই কয়েক বছরের মধ্যেই দুষ্প্রাপ্য হয়ে যায়। পরে সিগনেট প্রেস থেকে খােল নলচে বদলে এই নব সংস্করণটি প্রকাশিত হয়। এই নবকলেবরটি অনেকেরই পছন্দ হয়নি। বিশেষ করে আপত্তি জানিয়েছিলেন সুকুমার-পত্নী সুপ্রভা রায়। ফলে সত্যজিৎ রায় ও দিলীপকুমার গুপ্ত পরিকল্পিত সিগনেট প্রেসের এই সংস্করণটি কিছুদিন বিক্রি হবার পর বাজার থেকে তুলে নেওয়া হয়। হ য ব র ল আবার তার পুরনাে চেহারায় ফিরে আসে। ফলে এই সংস্করণটি কালের গর্ভে হারিয়ে যায়। হারিয়ে যায় সত্যজিৎ রায়ের আঁকা প্রচ্ছদসহ বেশ কিছু ইলাসট্রেশনও। সুকুমার রায় ও সত্যজিৎ রায় গবেষক শ্রী দেবাশিস মুখােপাধ্যায় যখন এই সংস্করণটি যথাযথ-মুদ্রণের কথা বলেন, আমি তৎক্ষণাৎ রাজি হয়ে যাই। দেবাশিস তাঁর নিজের সংগ্রহ থেকে গােটা বইটি স্ক্যান করে আমাকে পাঠানাের জন্যেই বইটির প্রকাশ সম্ভব হলাে। তাকে ধন্যবাদ। বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ প্রকাশ করছি শ্রী সন্দীপ রায়কে বইটির এই আদি সংস্করণটি প্রকাশের অনুমতি দেওয়ার জন্যে।
উপেন্দ্ৰকিশোর রায়ের জ্যেষ্ঠ পুত্ৰ সুকুমারের জন্ম ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে। ১৯০৬-এ পদার্থবিদ্যা ও রসায়ন দুই বিষয়েই অনার্স নিয়ে বি.এসসি পাশ করার পর ১৯১১-য় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গুরুপ্ৰসন্ন ঘোষ বৃত্তি লাভ করে মুদ্রণ বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য তিনি বিলেতে যান। লন্ডনে ও ম্যাঞ্চেস্টারে অধ্যয়ন করেন তিনি ও তাঁর গবেষণার জন্য সম্মানিত হন। ১৯১৩-য় উপেন্দ্ৰকিশোরের সম্পাদনায় ছোটদের সচিত্ৰ মাসিক পত্রিকা সন্দেশ’’ প্রকাশিত হয়। সুকুমার দেশে ফেরারী কিছুকাল পরে ১৯১৫-য় উপেন্দ্রকিশোরের মৃত্যু হয়। সুকুমার ইউ রায় অ্যান্ড সন্স কার্যালয়ের পরিচালনার এবং “সন্দেশ’ সম্পাদনার দায়িত্ব গ্ৰহণ করেন। “সন্দেশ’-এর পাতাতেই তাঁর অধিকাংশ ছোটদের লেখা-গল্প, কবিতা, প্ৰবন্ধ, ধাঁধা ইত্যাদি প্রকাশিত হয়েছে। শুধু নিজের লেখা নয়, ছবি এঁকেছেন তিনি। “হ য ব র ল’, ‘আবোল তাবোল’ জাতীয় আজগুবি চালের বেঠিক বেতাল ভুলের ভবের গদ্য ও পদ্য রচনা ছাড়াও শিল্প সাহিত্য ভাষা ধর্ম বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি বিষয়ক গভীর ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও সক্রিয় ছিল তাঁর লেখনী। আড়াই বছর কালাজ্বরে ভুগে ১৯২৩-এ মাত্র ৩৬ বছর বয়সে সুকুমার রায় ১০০ গড়পার রোডের বাড়িতে পরলোকগমন করেন। মৃত্যুর কিছুদিন আগেও তিনি শুয়ে শুয়ে সন্দেশের জন্য ছবি এঁকেছেন, প্রচ্ছদ রচনা করেছেন, গল্প কবিতা লিখেছেন। আবোল তাবোল’-এর ডামি কপিাটাও রোগশয্যায় তৈরি করেছেন। কিন্তু বইটি ছেপে বেরোবার ন” দিন আগে তাঁর মৃত্যু হয়।