"বাংলা উপন্যাসে খল চরিত্র" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: বাংলা উপন্যাস নিয়ে সুধী মহলের অনেক প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও সমালােচক কাজ করেছেন। তাদের অনেকে আবার চরিত্রসমালােচনাও করে থাকেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় তারা অনেক চরিত্রকে কেবল সমালােচনার জন্যই কেবল সমালােচনা করেছেন। কোনাে চরিত্র সমালােচনার পূর্বে সেই চরিত্রের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট ও আচরণিক বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ প্রয়ােজন। কেন্দ্রীয়, নায়ক কিংবা নায়িকা চরিত্র নিয়ে যারা কাজ করেছেন, তারা সেই চরিত্রকে হয় নায়ক বা নায়িকা হিসেবে বিশেষায়িত করেছেন অথবা তার নেতিবাচক দিকসমূহ তুলে ধরেছেন। কিন্তু উক্ত চরিত্র কেন নায়ক, নায়িকা বা কেন কেন্দ্রীয় চরিত্র তা তুলে ধরলেও তারা কেন খল, কোন্ প্রেক্ষাপটে বা প্রেক্ষিতে খল তা তুলে ধরতে কেউ অগ্রসর হননি কিংবা আগ্রহী হননি। ফলে চরিত্রগুলাে বরাবরই নায়ক, নায়িকা বা খল হিসেবেই আখ্যায়িত হয়ে এসেছে। এক কথায়, কিছু চরিত্র খল চরিত্র বলে হীনতার স্বীকার হয়েছে; হয়েছে অবহেলিত। আমার এই গ্রন্থটির উদ্দেশ্য সেই সমস্ত অবহেলিত চরিত্রকে বিশ্লেষণ করা। কেন তারা খল চরিত্র, তারা খল চরিত্র কেন হলাে কিংবা খল হতে কী কী নিয়ামক কাজ করেছে, কোন কারণে তারা খল হলাে কিংবা তাদের খলতার পেছনে কী উদ্দেশ্য ছিল, কোন প্রেক্ষিতে তারা খল হয়েছে, নাকি তাদের খল হতে কেউ বাধ্য করেছে, সেটার গবেষণালব্ধ কারণ উপস্থাপন করা। যদি চরিত্রগুলাে ইচ্ছাকৃত বা স্বপ্রণােদিতভাবে খল হয় তাহলে কোন্ স্বার্থে খল হয়েছে, তাদের খল হওয়া কতটুকু যুক্তিযুক্ত ছিল অথবা খল না হয়ে কী করণীয় ছিল তার রহস্য ভেদ করাই আমার গ্রন্থটির মূল লক্ষ্য। খলতা কেবল উপন্যাসের চরিত্রে থাকে না, মানবজীবনেও তার বহিঃপ্রকাশ। লক্ষ করা যায়। সুষ্ঠু গবেষণার ক্ষেত্রে খলতা মনােভাব পােষণে কোন্ কোন্ বিষয় জড়িত তা অনুসন্ধানের লক্ষ্যে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ ব্যবহার করা হয়েছে। মানবদর্শন, মনােবিজ্ঞান, ইতিহাস, জীনতত্ত্ব প্রভৃতি ব্যবহার করে প্রত্যেকটি চরিত্র বিশ্লেষণের প্রয়াস এই গ্রন্থে সংশ্লিষ্ট হয়েছে। সফল গবেষণার স্বার্থেই বাংলা উপন্যাসের সুবিশাল ভাণ্ডার থেকে খ্যাতনামা সাহিত্যিকদের উপন্যাস থেকে ঔপন্যাসিকদের প্রতিনিধিত্বমূলক উপন্যাসকে আশ্রয় করে আমার এই গ্রন্থটি সাজানাে হয়েছে।
আমি মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, ঝিনাইদহ সদরের এক নিভৃত গ্রামে আমার জন্ম। শৈশব কেটেছে গ্রামের বাড়ীতে দিগন্তজোড়া সবুজ মাঠে খেলা করে আর বিলে মাছ শিকার করে। উচ্চ শিক্ষা গ্রহনের জন্য জেলা সদরে নানা বাড়ীতে চলে আসি। উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই আমি প্রচুর বই পড়তে শুরু করি। আর লেখালেখির শখটাও তখন থেকেই। তবে সে সব লেখা কোথাও প্রকাশ করা হয়নি। ঢাকা আসার পর ফেসবুকের সাথে পরিচয় এবং প্রণয়। তারপর প্রথমআলো ব্লগে লেখালেখি। মূলত আমার লেখক সত্ত্বার প্রকাশ প্রথমআলো ব্লগ থেকেই। প্রথমআলো ব্লগ সংকলন, জলছবি বাতায়নের একাধিক সংখ্যায় আমার ছোট গল্প প্রকাশিত হয়েছে। এক সময় প্রথমআলো ব্লগ বন্ধ হয়ে গেলে ব্লগের লেখাগুলো একত্র করে একটি বই ছাপা হয়-যার নাম আপনালয়।