বাঙালি জাতির জীবনের মহত্তম ঘটনা মুক্তিযুদ্ধ ক্রমে যেন হয়ে উঠছে চরম বিভ্রমের উৎস। ইতিহাসচেতনা ও সমগ্রদৃষ্টির ঘাটতি থেকে একদিকে চলছে অন্ধের হস্তি দর্শনের মতাে মুক্তিযুদ্ধের খণ্ডিত পর্যালােচনা, এর সঙ্গে যােগ হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের মহৎ মানবিক আদর্শের পরিপন্থী। সাম্প্রদায়িকতাদুষ্ট বিবেচনা, উদ্দেশ্যমূলকভাবে যা মা মুক্তিযুদ্ধের অর্জন নস্যাতে সচেষ্ট রয়েছে। ফলে মুক্তিযুদ্ধ বিভ্রান্তির কুহক হয়ে ক্রমে হারাচ্ছে তার প্রেরণাসঞ্চারী ভূমিকা। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য প্রসারিত ও গভীরতাসম্পন্ন যে-ধরনের বিশ্লেষণ প্রয়ােজন তা দাবি করে নিষ্ঠা, শ্রম ও দক্ষতার উপযুক্ত সমন্বয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক তেমনি এক গবেষক ড. আতিউর রহমান, অর্থনীতিবিদ হিসেবে যাঁর কৃতি সমপ্রসারিত হয়েছে। সামাজিক-রাজনৈতিক সংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক গবেষণায় মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিকা বিশ্লেষণ করে ইতিপূর্বে প্রণীত হয়েছেন দুই উল্লেখযােগ্য গ্রন্থ – মুক্তিযুদ্ধের মানুষ : মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন এবং অসহযােগের দিনগুলি : মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিপর্ব মুক্তিযুদ্ধ গবেষণায় ট্রিলজি হিসেবে নিবেদিত বর্তমান গ্রন্থে তিনি পর্যালােচনা করেছেন জাতির মহত্তম জাগরণে সাধারণ মানুষের। এ সম্পৃক্তি, স্বপ্ন ও আশার মাত্রাসমূহ দেশের মুক্তি। সংগ্রামে নিপীড়িতজনের অংশগ্রহণকে বাঙময় করে তােলার এই প্রয়াস আধুনিক সমাজগবেষণায় নতুন মাত্রা যােগ করার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে রাজনৈতিক খেলা ও বিভ্রম দূর করতে সহায়ক হবে। নিঃসন্দেহে মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপকতা আরাে নিবিড়ভাবে অনুধাবনে সমাজকে সমর্থবান করে তুলবে মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক . আতিউর রহমানের তিনটি গ্রন্থ।
Atiur Rahman- রহমান বাংলাদেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ। প্রচলিত ধারার বাইরের এক উন্নয়ন গবেষক। কর্মজীবীর। স্বাপ্নিক এই পরিশ্রমী লেখক যা বিশ্বাস করেন তাই অপকটে প্রকাশও করেন। সর্বক্ষণ সাধারণ মানুষের চোখ দিয়ে দেখবার চেষ্টা করেন বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রাকে। প্রচলিত উন্নয়ন ভাবনাকে চ্যালেঞ্জ করে তিনি সাধারণ মানুষের চোখ দিয়ে দেখে চলেছেন দেশের অর্থনীতি, সমাজনীতি ও রাজনীতিকে। বহুমাত্রিক বিষয় হিসেবে উন্নয়নকে বাংলা ভাষায় সহজ করে উপস্থাপনের কৃতিত্ব তাঁকে দিতেই হবে। গরিবের প্রতি তাঁর পক্ষপাতিত্বের কথা সকলেরই জানা। সব লেখাতেই তিনি তা তুলে ধরেন তাঁর হৃদয় দিয়ে। ১৯৮৩ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি প্রাপ্ত ড. আতিউর রহমান স্বদেশেই রয়ে গেছেন। সর্বক্ষণ ব্যস্ত রয়েছেন ব্যতিক্রমী গবেষণায়, গণমাধ্যমে, জনবিতর্কে, সাধারণের ভাষায় লেখালেখিতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. রহমান বর্তমানে গবেষণা প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন সমন্বয়ের সভাপতি। একই সঙ্গে তিনি সিডিএফ-এর সভাপতি, মোনাজাতউদ্দীন স্মৃতি পরিষদের সভাপতি এবং বিশ্বসাহিত্য-কেন্দ্রের অন্যতম ট্রাস্টি। জনতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের তিনি সাবেক চেয়ারম্যান। বিআইডিএস-এর একজন সাবেক উর্ধ্বতন গবেষক ড. রহমানের অসংখ্য বই প্রকাশিত হয়েছে দেশের ও বিদেশের নামকরা প্রকাশনা সংস্থা থেকে। তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘ভাষা আন্দোলন : আর্থ-সামাজিক পটভূমি’; মুক্তিযুদ্ধের তিনটি বই :‘মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন মুক্তিযুদ্ধের মানুষ’; ‘অসহযোগের দিনগুলি’,রবীন্দ্র-অমর্ত্য ভাবনা;’ ‘উন্নয়ন আলাপ;’ ‘জনগণের বাজেট;’ ‘আলো আঁধারের বাংলাদেশ;’ ‘সুশাসনের সন্ধানে;’ ‘ অধিকারভিত্তিক উন্নয়ন;’ ‘উন্নয়ন কার জন্য;’ ‘অপউন্নয়ন;’ ‘স্বপ্নের বাংলাদেশ খুঁজে ফেরা;’ `Peasants and classes;’ `Education for Development’ ইত্যাদি। দেশি ও বিদেশি প্রফেশনাল জার্নালে তাঁর বিপুল সংখ্যক গবেষণা-প্রবন্ধ ছাপা হয়েছে। সব মিলে তিরিশটিরও বেশি বইয়ের লেখক ড. রহমান।