“মহাকালের সিঁড়ি" বইটি সম্পর্কে কিছু কথা: কাল- মহাকালের প্রতিনিধি। জন্ম থেকে মৃত্যু মাঝখানের কালটুকু হলাে জীবন। তাই কালের সঙ্গে সম্পর্ক দ্বারাই নির্ধারিত হয় জীবনের মূল্য। যথাকালে যথা কর্মই ধর্ম। অযথাকালে অযথা কর্ম অধর্ম। কষ্টের কাল চলে শম্বুক গতিতে। আনন্দের কাল চলে। আলাের গতিতে। হিংসার কাল চলে সিংহের গতিতে। অহিংসার কাল চলে আহ্বার গতিতে। মহাকাল কৃষ্ণবর্ণ। কৃষ্ণ অর্থ কাল বা কালাে। কৃষ্ণ ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন। সৃষ্টির আদিতে কৃষ্ণ, অন্তেও কৃষ্ণ। আলাের যাত্রারম্ভ কৃষ্ণ থেকে। কৃষ্ণ সর্বব্যাপী, চিরন্তন, শাশ্বত। আলাে চলাচল করে- কৃষ্ণ স্থির, নিশ্চল, অচঞ্চল।। মনুষ্যের জন্ম কৃষ্ণের মধ্যে। জ্বণস্থলীর গভীর কৃষ্ণ ছাড়া প্রাণের বিকাশ অসম্ভব। আগমন কৃষ্ণ থেকে নির্গমনও কৃষ্ণে। প্রতিটি বস্তুকণার অবস্থান মহাকালে। প্রতিটি কণার ভেতরে মহাকাল, বাহিরেও মহাকাল। প্রাতিভাসিক জগতে ঘটের শূন্যস্থান সসীম- ঘট ভেঙে গেলে অসীম। মহ অর্থ সীমার হনন। বস্তুর কায়িত রূপটি ভেঙে গেলেই তা মহা, অসীম। আমিত্বের ক্ষুদ্র কারাগার থেকে মুক্ত হলেই- ‘আমরা’ (নাহনু) মহাকাল যেমন মহাপ্রেমিক তেমনি চরমনিষ্ঠুর। আপন গতিতে চলার প্রশ্নে তিনি কারাে দিকে তাকান না।। কাল বড়ই অদ্ভুত- স্বাদ নেই, ঘ্রাণ নেই, রূপ নেই; কোনাে সংবেদী অঙ্গ নেই যা কাল পরিমাপ করতে পারে। তব। আমরা বুঝতে পারি কাল আছে। চৈতন্যের একেক গতি ও স্থিতিতে কাল ধরা দেয় একেক পরিমাপে। সব ঘটনার আধার হলাে কাল। কিন্তু কালের আণবিক অস্তিত্ব নেই। সকাল, বিকাল, গতকাল, আগামীকাল- কালের এরূপ বিভাজন ব্যবহারিক। আমরা ঘড়ি বানিয়েছি এবং ধরে নিয়েছি- ‘ক’ থেকে ‘খ’ পর্যন্ত সকাল। আমরা বলতে পারি না যে, ‘ক’ থেকে ‘খ’ পর্যন্ত বর্তমান। অস্তিত্বহীন বর্তমানের উপর ভিত্তি করে আমরা অতীত, ভবিষ্যৎ বানিয়ে নিয়েছি। বাস্তবে কাল অতীত নয়, বর্তমান নয়, ভবিষ্যৎও নয়- কাল হলাে এখন। অতীত ছাড়া, ভবিষ্যৎ ছাড়া, বর্তমান ছাড়া; কেন এবং কীভাবে ছাড়া; কে এবং কোথায় ছাড়া- মহা রহস্যময় এখনই মহাকাল- অনন্ত, অখণ্ড, অদ্বৈত।