‘বীজগণিত সমগ্র-দ্বিতীয় খণ্ড’ বইটিতে লেখা প্রকাশকের কথা: একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হলে আমাদের চারপাশের প্রতি দৃষ্টি রাখতে হবে। তাহলে দেখতে পাবো গণিত এবং বিজ্ঞান কীভাবে সম্পর্কযুক্ত। প্রাচীনকাল থেকে বিজ্ঞানের সূক্ষ সূক্ষ সমীকরণ এবং চুলচেরা বিচারের হিসাব নিকাশ-এর সহযোগিতা প্রদানে পাশে এসে দাঁড়িয়েছে গণিত। বিজ্ঞান এবং গণিত সব সময় একে অন্যের পরিপূরক। গণিত-এর আরেকটি দিক হচ্ছে বীজগণিত। বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রাকে বেগবান করার জন্য বীজগণিত সহযোগী হিসেবে সব সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, মাধ্যমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার স্তরে বাংলায় বীজগণিত বইয়ের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, গণিতের নির্ধারিত পাঠ্যবইয়ের বাইরে বীজগণিতকে জানার এবং এর অন্তর্নিহিত সম্পর্কীত জ্ঞানের পরিধিকে বৃদ্ধির তেমন কোনো সুযোগ নেই। কারণ সহজ পাঠ্য বীজগণিত বইয়ের বড্ড অভাব। ফলে অংক শিক্ষার আনন্দ থেকে প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছে আমাদের শিক্ষার্থীরা। আমাদের নতুন প্রজন্মকে বীজগণিত সম্পর্কে আগ্রহি করে ভোলার লক্ষ্যে এবং বিজ্ঞান সাধনায় উদ্বুদ্ধ করার উদ্দেশ্যে বীজগণিত সমগ্র' বইটি প্রকাশ করা হয়েছে। আমাদের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় বীজগণিত একটি আবশ্যিক বিষয়। বীজগণিতও একটি আনন্দের উপকরণ হয়ে উঠতে পারে। বইটির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে বীজগণিত দুর্বোদ্ধ বিষয় নয় এটি আনন্দদায়কও। বীজগণিতের প্রতি যেসব শিক্ষার্থীদের ভীতি রয়েছে, এই বইটি তাদের সাহস জোগাবে এবং তাদের নিকট বীজগণিত সহজতর হয়ে উঠবে। বীজগণিত সমগ্র’ বইটি দুইটি খণ্ডে বিভক্ত করা হয়েছে। দুইটি খণ্ডে রয়েছে বাস্তব সংখ্যা, ভগ্নাংশ, সূচকাবলী এবং সমাধানের ধাপ, রাশি, রৈখিক সমীকরণ, সূত্রসমূহ, সংখ্যা, জ্যামিতিক ও সুষম গতির প্রয়োগ। অসমতা, ঢাল, বিভেদ, বহুপদ, সাধারণ উৎপাদক, যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ, মূলদ রাশি, রৈখিক সমীকরণ জোট, অসমতার বিবিধ বিষয়, সমীকরণ ও অসমতা, বর্গমূল ও মূলদ সূচক, দ্বিঘাত সমীকরণ ও অসমতা, ফাংশন ও সেট, লেখচিত্র রূপান্তর, সূচক ও লগারিদম ফাংশন, অরৈখিক জোট ও কোণকচ্ছেদ, ক্রম ও ধারা, পরিসংখ্যান ও ডাটা বিশ্লেষণ, সম্ভাব্যতা ইত্যাদি। সেইসঙ্গে বহুনির্বাচনি ও সৃজনশীল প্রশ্নের রূপরেখা, প্রশ্ন প্রণয়ন এবং সমাধান। শিক্ষণীয় নির্দেশনা ও পুনরাবৃত্তি, অনুশীলনী যাচাই এবং মৌলিক জ্ঞান যাচাই-এর প্রক্রিয়াও বইটিতে স্থান পেয়েছে। অক্লান্ত পরিশ্রমে, আন্তরিক যত্ন এবং যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন সত্ত্বেও বইটিতে যেকোনো ভুলত্রুটি থাকতে পারে সেজন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। সম্মানিত অভিভাবক, শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষকমণ্ডলী এবং প্রিয় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে গঠনমূলক পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি। দুই খণ্ডে প্রকাশিত বীজগণিত সমগ্র বইটি শিক্ষার ক্ষেত্রে অনুপ্রাণিত ও আলোকিত ধারার সৃষ্টি করলেই, আমাদের পরিশ্রম সফল ও সার্থক হবে।
রফিকুল ইসলাম, পিতা-মো. আবুল কাশেম, মাতা-মোছা. আলেয়া খাতুন। ১৯৮৯ সালের ১ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার পান্টি ইউনিয়নের রামদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বিজ্ঞান বিভাগে পান্টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও পান্টি ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। ঢাকার শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষিতে স্নাতক শেষে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে এগ্রিকালচারাল বোটানি বিভাগে স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে অধ্যয়নরত রয়েছেন। ছাত্র জীবনে বিতর্ক, বই পাঠ প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন সৃজনশীল কাজের সাথে জড়িত ছিলেন। বিজ্ঞানের প্রতি ভালোলাগা থেকে নিয়মিত বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকা ও সাময়িকীতে বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখি করেন। ডিসকাশন প্রজেক্ট, আকিমুদ্দিন গ্রন্থাগার, প্রতিফলনসহ কয়েকটি বিজ্ঞান সংগঠনে বিজ্ঞান কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন। তরুণ প্রজন্মের মাঝে বিজ্ঞান প্রসারে বিজ্ঞান বক্তৃতা প্রদান করেন। বর্তমানে বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড কেন্দ্রীয় কমিটির একাডেমিক সমন্বয়ক। ২০০৭ সালে এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নকালে ওয়ার্ল্ড স্পেস উইক এসোসিয়েশনের আয়োজনে বিশ্বব্যাপী আয়োজিত প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ করে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে মহাশূণ্য ভ্রমণের সুযোগ লাভ করেন। বর্তমানে তিনি ৩৫ তম বিসিএস (কৃষি) ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে নিয়োগের অপেক্ষায় আছেন। বিজ্ঞানমনস্ক সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে তিনি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি এমন একটি বুদ্ধিদীপ্ত প্রজন্মের স্বপ্ন দেখেন যারা বিজ্ঞানের আলোয় সমাজকে বদলে দেবে।