"বাংলাদেশের ভ্যাট ব্যবস্থা ১ম ও ২য় খন্ড একত্রে" বইটির 'প্রাক-কথন' অংশ থেকে নেয়াঃ পণ্য বা সেবা ক্রয়ের সময় ক্রেতা বা ভােক্তাকে মূল্য সংযােজন কর পরিশােধ করতে হয়। এটিকে ভােক্তা কর বলা হয়। ভােক্তার নিকট থেকে বিক্রেতা বা ব্যবসায়ী পণ্য বা সেবার মূল্যের সাথে মূল্য সংযােজন কর আদায় করে সরকারের কাছে জমা প্রদান করেন। যেহেতু ভােক্তা সরাসরি এই কর সরকারকে দেন না, তাই এটিকে পরােক্ষ করও বলা হয়। মূল্য সংযােজন করকে সংক্ষেপে মূসক বলে। Value Added Tax সংক্ষেপে VAT নামে এই কর ব্যবস্থা বিশ্বব্যাপী পরিচিত ও সমাদৃত। বাংলাদেশে মূল্য সংযােজন কর আইন ১৯৯১ প্রবর্তনের মাধ্যমে ভ্যাট ব্যবস্থা চালু করা হয়। শুরুর দিকে তেমন জনপ্রিয় না হলেও ধীরে ধীরে আইনটির পরিধি ও ব্যাপ্তি বাড়তে থাকে। অভ্যন্তরীণ রাজস্বের ৫৬ শতাংশ আহরিত হয় এই আইনের আওতায় ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক ও টার্নওভার কর থেকে। তবে ব্যাপক অব্যাহতি, সংকুচিত মূল্য ভিত্তি, ট্যারিফ মূল্য, মূল্য ঘােষণা, অগ্রিম বাণিজ্যিক ভ্যাট, প্যাকেজ ভ্যাট, খাতভিত্তিক হরেক রকম ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি নানা রকম প্রজ্ঞাপন, আদেশ, ব্যাখ্যাপত্র ইত্যাদি কারণে আইনটি ক্রমশ জটিল হয়ে পড়ে। ভ্যাট চেইন ব্যাহত হয় এবং স্বেচ্ছা পরিপালন হ্রাস পায়। ভ্যাটের আহরণের প্রবৃদ্ধি স্থবির হয়ে পড়ে। ফলে বিচ্যুতিমূক্ত ও ব্যবসা বান্ধব নতুন একটি আইনের প্রয়ােজন পড়ে। জাতীয় রাজস্ববাের্ড ২০১০ সালে নতুন ভ্যাট আইনের খসড়া প্রণয়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করে। এই কমিটিকে সহযােগিতা করেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (IMF) একজন বিদেশী বিশেষজ্ঞ। উক্ত বিশেষজ্ঞের সহায়তা নিয়ে কমিটি ইংরেজিতে নতুন ভ্যাট আইনের খসড়া তেরী করে। পরে তা বাংলায় অনুবাদ করা হয়। যাচাই বাছাইয়ের পর ২০১২ সালের ১০ ডিসেম্বর মূল্য সংযােজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন ২০১২ নামে জাতীয় সংসদে পাস হয়। তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর পরিবেশে নতুন আইন বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় রাজস্ব বাের্ডের ভ্যাট অনলাইন প্রজেক্ট থেকে অটোমােশনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ইত্যবসরে ২০১৬ সালে সংযােজন কর ও সম্পূরক শুল্ক বিধিমালা ২০১৬ জারি করা হয়। ১ জুলাই ২০১৭ থেকে করযােগ্য আমদানি ও করযােগ্য সরবরাহের সকল পর্যায়ে ১৫ শতাংশ একক ভ্যাটের হার আদায়ের বিধান রেখে আইনটি বাস্তবায়নের ঘােষণা দেয়া হয়। ভ্যাটের একক হার এবং আইনটির বিভিন্ন বিধি বিধানের বিষয়ে ব্যবসায়ী মহলের আপত্তির কারণে এর বাস্তবায়ন দুই বছরের জন্য স্থগিত করা হয়। তবে অনলাইনে ভ্যাট রেজিস্ট্রেশনের সুযােগ উন্মুক্ত করা হয়। অনলাইনে দাখিলপত্র বা রিটার্ন জমা দেয়ার প্রস্তুতি চলতে থাকে। এ বছর মূল আইনটিতে বেশ কিছু পরিবর্তন করা হয়। একক হারের পরিবর্তে ১৫ শতাংশ এর পাশাপাশি ১০ শতাংশ, ৭.৫ শতাংশ, ৫ শতাংশ, ৪.৫ শতাংশ, ২.৪ শতাংশ এবং ২ শতাংশ হারে ভ্যাট পরিশােধের বিধান করা হয়। ভ্যাটের হিসাব রক্ষণ পদ্ধতি এবং দাখিলপত্রের কিছু পরিবর্তন সাধন করা হয়। পরিবর্তিত বিধি বিধানসহ ১ জুলাই ২০১৯ থেকে আইনটি চালু হয়েছে। পরিবর্তিত আইন ও বিভিন্ন ধরণের ফরম নিয়ে আমার ফেসবুক পেইজে পাঠকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে নতুন এই আইনটির বিধি বিধান ও প্রয়ােগ বিষয়ে একটি বই লেখার প্রয়ােজন অনুভূত হয়। আমার অসংখ্য প্রশিক্ষণার্থী সময়ে সময়ে অনুরােধ করেছেন। সহজবােধ্য ভাষায় বাহুল্য বর্জিত একটি বই লেখার জন্য। পাঠকদের আগ্রহ ও আকাঙ্খা পূরণের লক্ষ্য বইটির গ্রন্থনা শুরু করি। আইন, বিধি, প্রজ্ঞাপন ছাড়াও বইটিতে ভ্যাটের হিসাব রক্ষণ পদ্ধতি প্রায়ােগিক উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করা হয়েছে। বাংলাদেশে মূল্য সংযোেজন কর সাধারণ মানুষের কাছে ভ্যাট নামে অধিক পরিচিত। তাই বইটিতে মূসক শব্দের | পরিবর্তে ভ্যাট ব্যবহার করা হয়েছে। তবে বিভিন্ন ফরমের শিরােনাম ও আইনী পরিভাষা অপরিবর্তিত রাখার স্বার্থে প্রযােজ্য সকল স্থানে মূসক শব্দটিই ব্যবহার করা হয়েছে। আইনের শিরােনাম মূল্য সংযােজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন ২০১২ বার বার ব্যবহার না করে সংক্ষেপে আইন শব্দটি উল্লেখ করা হয়েছে। www.vat.gov.bd ওয়েবসাইটে সাইন। আপ করে কিভাবে ভ্যাট অনলাইন সিস্টেমের সুবিধা গ্রহণ করা যাবে তা বর্ণনা করা হয়েছে। ভুলত্রুটি পরিহারের যথাসম্ভব চেষ্টা করেছি। মানবিক সীমাবদ্ধতার কারণে তারপরও কিছু ত্রুটি থেকে যেতে পারে। এসব ত্রুটি বিচ্যুতি চিহ্নিতকরণসহ বইটির মানােন্নয়নে আপনাদের যে কোন পরামর্শ [email protected] বরাবর প্রেরণ করলে বাধিত হবাে। আপনাদের এসব পরামর্শ পরবর্তী সংস্করণে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। পাঠকের প্রশ্ন ও উত্তর’ শীর্ষক অধ্যায়ে ফেসবুক ও ইমেইলে প্রাপ্ত ভ্যাট বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করেছি। বাংলাদেশের ভ্যাট ব্যবস্থা বইটির প্রকাশে সহায়তা করার জন্য পাঠক, প্রশিক্ষণার্থী, সহকর্মী ও প্রকাশকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
জনাব এ কে এম মাহবুবুর রহমান। জন্ম বগুড়া জেলায়। বিসিএস (কাস্টমস ও ভ্যাট) ক্যাডারের সদস্য। বর্তমানে অতিরিক্ত কমিশনার পদে কর্মরত রয়েছেন। তিনি জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে পড়াশুনা করেছেন। ঢাকা পূর্ব, ঢাকা উত্তর, চট্টগ্রাম, যশোর ও রাজশাহী ভ্যাট কমিশনারেটে এবং কাস্টম হাউস চট্টগ্রাম ও বন্ড কমিশনারেট, ঢাকায় বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১০-১১ অর্থবছরে তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ২য় সচিব (ভ্যাট পলিসি ও বাজেট) হিসেবে ভ্যাটের নীতি নির্ধারণ ও বাজেট প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত ছিলেন। মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক আইন ২০১২ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার সাথে তিনি প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত রয়েছেন। বাংলাদেশ কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট ট্রেনিং একাডেমিতে অতিরিক্ত মহা- পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি ফিন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট একাডেমি, বিসিএস (কর) একাডেমি, রেজিওনাল পাবলিক এ্যাডমিনিস্ট্রেশন ট্রেনিং সেন্টার (আরপিএটিসি), আইসিএমএবি তে ভ্যাট বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করে সুখ্যাতি অর্জন করেছেন। ফেসবুকে তার একটি পেইজ (www.facebook.com/mahbub Vat) রয়েছে। এই পেজে তিনি ভ্যাট ও কাস্টমস্-এর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নিয়মিত লেখালেখি করেন