বই পরিচিতি ফারগানায় জন্ম নেওয়া চেঙ্গিয-তৈমুরের উত্তরসূরি সম্রাট বাবুরের মাধ্যমে হিন্দুস্তানে প্রতিষ্ঠিত হয় মােগল-সাম্রাজ্য, পানিপতের যুদ্ধে লােদিদের পরাজিত করার পর হিন্দুস্তানে যারা সর্বাধিক সময় নিয়ে সবচেয়ে প্রভাবশালী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিল, পতনের তিক্ত স্বাদ যে এক দিন তাদেরও আস্বাদন করতে হবে কে ভেবেছিল! কিন্তু কুদরতের অমােঘ বিধান; সাম্রাজ্য বিস্তারকরী কোনাে একক শক্তিকে বেশিদিন অবকাশ না দেওয়া! সেই ধারাবাহিকতায় মােগলদের ভাগ্যেও জুটল পরাজয়ের ঘূণিত তকমা। সম্রাট আলমগিরের পর মসনদে-বসা নামসর্বস্ব সম্রাটবর্গ যেমন পেনশনভােগী হিসেবে লাঞ্ছিত ছিল; তারচেয়ে ন্যাক্কারজনক ভাগ্য বরণ করতে হয়েছে পতনের পর। সম্রাট নির্বাসিত হন রেঙ্গুনে। জনসম্মুখে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় ধৃত শাহজাদাদের। মিথ্যা মামলায় ফেঁসে যান সম্রান্ত রাজ-সদস্যগণ। রাজ-পরিবারের বেঁচে যাওয়া অনেকেই জীবিকার তাগিদে বেছে নেন ততীয়শ্রেণির চাকুরি। অসংখ্য মানুষ যাদের অধীনে কাজ করে জীবন চালাত, অনভিজ্ঞতার কারণে সামান্য সম্মানজনক কাজও পাননি তারা। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে বেছে নেন ভিক্ষাবৃত্তি। যে শাহজাদিদের সেবায় সব সময় নিয়ােজিত থাকত একদল দাসী-বাঁদি, তাদেরও বরণ করতে হয় অন্যের ঘরের চাকরানির কাজ। ঘুমের সময়ও যাদের জন্য থাকত রাজকীয় ব্যবস্থা ও আয়ােজন, মাটিতে শুয়ে কাটাতে হয় তাদের অনেকের জীবন। যে প্রাসাদে একসময় শত শত মানুষের। খাবারের ব্যবস্থা হত, তারই বাসিন্দাদের একদিন ভােগ করতে হয় ক্ষুৎপিপাসার তীব্র যন্ত্রণা। এমনই বিভিন্ন রােমহর্ষক কাহিনির সাক্ষী হতে যাচ্ছেন আপনি, বইয়ের পরতে পরতে লেখক যার বিবরণ দিয়েছেন। ইতিহাস আপন গতিতেই চলছে। উত্থানের পর পতন, জয়ের পর পরাজয়, সক্ষমতার পর অক্ষমতা তাে ইতিহাসের ধারাপরিক্রমা। কিন্তু ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়ার গরজ নেই আমাদের। আসলে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলাে ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না। -নাসিম মুমতাজী