"ডেটলাইন বাংলাদেশ : নাইন্টিন সেভেন্টিওয়ান" বইয়ের পিছনের কভারের লেখা: নিউইয়র্ক টাইমসের যুদ্ধ-সংবাদদাতা সিডনি শনবার্গ বিশ্বজনীন খ্যাতি অর্জন করেছেন কাপুচিয়ায় পলপট বাহিনীর ক্ষমতা-দখল ও ' গণহত্যা বিষয়ক রিপাের্টের কল্যাণে। কাম্পুচিয়ায় তার বাস্তব অভিজ্ঞতা নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র দ্য কিলিং ফিল্ডস’ আলােড়ন তুলেছে। দুনিয়া জুড়ে, পেয়েছে একাধিক অস্কার পুরস্কার। কিন্তু একথা অনেকেরই অজানা যে, আরাে আগে সেই ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে সিডনি শনবার্গের অসাধারণ সব রিপাের্ট ছাপা হয়েছে ‘নিউইয়র্ক টাইমস'-এ। ২৫ মার্চের গণহত্যার সূচনা তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন ঢাকায় থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন অন্যান্য বিদেশি সাংবাদিকের সঙ্গে। পূর্ব পাকিস্তান থেকে বহিষ্কৃত হলেও যুদ্ধক্ষেত্র | থেকে দূরে সরে যান নি কখনাে। পত্রিকার দিল্লি ব্যুরাে প্রধান হিসেবে বারবার ফিরে এসেছেন সীমান্ত এলাকায়। কখনাে মুক্তিযােদ্ধাদের সঙ্গে ঢুকে পড়েছেন মুক্তাঞ্চলে, প্রত্যক্ষ করেছেন যুদ্ধ অপারেশন, আবার ঘুরেছেন শরণার্থী শিবিরে। জুন মাসে মুষ্টিমেয় যেসব বিদেশি সংবাদদাতাকে ঢাকা আসার অনুমতি দিয়েছিল সামরিক সরকার, তাদেরও অন্যতম ছিলেন শনবার্গ। কিন্তু ঢাকা থেকে প্রেরিত তার রিপাের্টে ক্ষুব্ধ সামরিক কর্তৃপক্ষ আবারাে বহিষ্কার করে। তাকে পরে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সম্মিলিত অভিযানের সঙ্গী হয়ে তিনি যশাের সীমান্ত পথে প্রবেশ করেন বাংলাদেশে, প্রত্যক্ষ করেন বাঙালির মহৎ সংগ্রামের সেই অবিস্মরণীয় বিজয় মুহূর্ত। সিডনি শনবার্গের রিপাের্টাজ তাই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের এক অসাধারণ দলিল। বাংলায় অনূদিত ও গ্রন্থাকারে প্রথম প্রকাশিত তার এই রিপাের্টাজের জন্য। একটি বিশেষ ভূমিকাও লিখে দিয়েছেন তিনি।
’ডেটলাইন বাংলাদেশ : নাইন্টিন সেভেন্টিওয়ান' বইয়ের সূচিপত্র মার্চ ২৭ পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক আক্রমণ-অভিযান.....১৭ মার্চ ২৮ পূর্ব পাকিস্তানে ট্যাঙ্কের বিরুদ্ধে লাঠি বর্শা.....২২ এপ্রিল ৪ পাকিস্তান : ‘এসবই খেলার রীতি’ -তবে ভয়ঙ্কর ও নির্দয় এক খেলা .....২৭ এপ্রিল ৭ পূর্ব পাকিস্তান ছেড়ে আসা বিদেশিরা বলছে ভয়ঙ্কর লড়াইয়ের কথা .....৩১ এপ্রিল ১৩ অব্যাহত হত্যাযজ্ঞের মধ্যে বাঙালিদের মন্ত্রিসভা গঠন.....৩৪ এপ্রিল ১৩ আটক বাঙালি অফিসারের ভয়ঙ্কর প্রহরগুলাে.....৪১ এপ্রিল ১৩ তছনছ অর্থনীতি.....৪৫ এপ্রিল ১৪ গেরিলা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে বাঙালিরা .....৪৯ এপ্রিল যুদ্ধের নরক-যন্ত্রণা পােহাচ্ছে কেবল এক পক্ষই..... ৫২ মে ১৬ পাকিস্তানি শরণার্থীদের সঙ্গে প্রতিযােগিতা ভারতীয় দরিদ্রজনের উম্মার কারণ হয়েছে.....৫৫ মে ২১ ভারতে বাঙালি শরণার্থীদের দুর্দশা .....৫৮ জুন ১৬ হতাশার ট্রেনে চেপে চলছে বাঙালি শরণার্থীদল.....৬৩ জুন ২৫ সেনাভিযানের তিন মাস পরও ঢাকা ভীতসন্ত্রস্ত.....৬৭ জুন ২৬ অধিকাংশ যানবাহন অকেজো হওয়ার ফলে অর্থনীতির মারাত্মক ক্ষতি.....৭১ জুন ২৯ পূর্ব পাকিস্তানের শহরে সেনাবাহিনীর সন্ত্রাসের লক্ষ্য হচ্ছে। হিন্দু জনগােষ্ঠী.....৭৫ জুন ২৯ বাঙালিদের ‘ভিতুর ডিম’ আখ্যায়িত করেছে এক পাকিস্তানি.....৭৯ জুলাই ৪ ‘বিদেশি বাহিনী চাপিয়ে দিচ্ছে স্বীয় কর্তৃত্ব.....৮২ জুলাই ১৪ বাঙালি দমনের নীতি অনুসরণ করছে পশ্চিম পাকিস্তান..... ৮৬ সেপ্টেম্বর ৫ আমেরিকার সঙ্গে ভারতের ফারাক বাড়ছে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক সহজ হচ্ছে .....৯৩ সেপ্টেম্বর ১২ সৈন্যদের হত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযােগ অব্যাহত.....৯৭ সেপ্টেম্বর ২৯ ভারতে শরণার্থী-শিশু : ‘হাজারে হাজারে’ মৃত্যু.....১০০ বিভক্ত পাকিস্তান.....১০৫ অক্টোবর ১০ গেরিলা এলাকায় জীবন ফিরে পাচ্ছে পূর্ব পাকিস্তানি শহর.....১১৭ অক্টোবর ১১ বাঙালিদের জন্য অস্ত্রের চালান আসছে কলকাতায়.....১২২ অক্টোবর ১৭ বাংলাদেশের জন্য দাঁতে দাঁত চাপা যুদ্ধ.....১২৫ অক্টোবর ১৯ সীমান্তজুড়ে মুখােমুখি ভারতীয় ও পাকিস্তানি সৈন্য.....১২৯ অক্টোবর ২৩ ভারত-পাকিস্তান : তারা যুদ্ধের কথা বলছে, তারা যুদ্ধ বাধিয়ে দিতেও পারে.....১৩২ নভেম্বর ২ কঠোর নীতি নিচ্ছে ভারত.....১৩৫ নভেম্বর ২৩ সীমান্তে এগিয়ে যাচ্ছে ভারতীয় সামরিক বহর, যশাের এলাকায় পাকিস্তানের দুর্বল প্রতিরােধ.....১৩৮ নভেম্বর ২৪ অনুপ্রবেশের কথা স্বীকার করেছে ভারত, বলেছে এটা আত্মরক্ষামূলক.....১৪৩ ডিসেম্বর ৮ ‘মুক্ত’ যশােরে বাঙালিদের নৃত্য.....১৪৭ ডিসেম্বর ১১ বড় কথা হচ্ছে পাকিস্তানিদের প্রতি ঘৃণা.....১৫১ ডিসেম্বর ১১ উদ্ধারকারী বিমান অবতরণে অসম্মতি.....১৫৪ ডিসেম্বর ১২ পশ্চিম পাকিস্তানের সমর্থকরা শহরে ঢুকছে.....১৫৭ ডিসেম্বর ১৬ ঢাকা অভিযানের শেষ পর্ব- এক টেবিলে দুজন মানুষ.....১৬১ ডিসেম্বর ২০ যুদ্ধ-সংবাদদাতার নােটখাতা.....১৬৮
মফিদুল হক (জন্ম: ১৯৪৮) পেশায় প্রকাশক এবং কর্মসুবাদে শিল্প-সংস্কৃতি ও সৃজনমূলক বিভিন্ন উদ্যোগের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত। তার সমাজচিন্তামূলক বহুবিধ প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও শিল্প-সাহিত্যের সাময়িকীতে, যদিও প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা তুলনায় খুব বেশি নয়। মৌলিক প্রবন্ধ রচনার পাশাপাশি অনুবাদেও তিনি সর্বদা আগ্রহের পরিচয় রেখেছেন। সমাজ-অধ্যয়ন তাঁর রচনার মূল বিষয়, এক্ষেত্রে শিল্প-সাহিত্যের দৃষ্টিকোণ পেয়েছে বিশেষ প্রাধান্য। বাংলা একাডেমী থেকে জীবনীগ্রন্থ সিরিজে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর রচিত আবুল হাশিম’ এবং পূর্ণেন্দু দস্তিদার' প্রকাশিত উল্লেখযােগ্য অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘মনােজগতে উপনিবেশ: তথ্য সাম্রাজ্যবাদের ইতিবৃত্ত’, ‘তৃতীয় বিশ্ব এবং নারীমুক্তির পথিকৃৎ। অনুবাদ গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে এর্নেস্তো কার্দেনালের ‘বিপ্লব ও ভালােবাসার কবিতা, জন হের্সের ‘হিরােশিমা', সিডনি শনবার্গের ‘ডেটলাইন বাংলাদেশ: ১৯৭১', আহমেদ সালিমের ‘পাকিস্তানের কারাগারে শেখ মুজিবের বন্দিজীবন’ প্রভৃতি। শিল্পকলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত হয়েছে দ্বিভাষিক গ্রন্থ কাইয়ুম চৌধুরী। তিনি আন্তর্জাতিক থিয়েটার ইনস্টিটিউটইউনেস্কো প্রকাশিত দ্বিবার্ষিক সংকলন ‘ওয়ার্ল্ড অব থিয়েটার'-এর অন্যতম সম্পাদক। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ও সদস্য-সচিব তিনি।