এই পৃথিবীর মালিক শুধু মানুষ নয়। জীবজন্তু, গাছপালা ও কীটপতঙ্গ সকলেই মিলে এ এক ছড়ানো জাল। মানুষ তার একটি মাত্র সুতো। সেই সুতোর কোনো-একটি ছিঁড়ে গেলে মানুষকেই তা বুনে নিতে হবে। অন্য কোনো প্রাণী এই ছড়ানো জাল ছিন্ন করে না, তাই তা বোনার দায়িত্বও তাদের নয়। তাই সুন্দরবনে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মিত হলে যে বিপর্যয় সৃষ্টি হবে তার সকল দায় মানুষের। তেমনি বঙ্গোপসাগর, বঙ্গবন্ধু, শরৎকাল, নববর্ষ, শাহবাগ, পাঁচ কোটি বছর আগে জন্ম নেওয়া বাদুড়ের বিপন্নতা, উঁই ঢিবি, রবীন্দ্রনাথ ও আইনস্টাইন বা সাজেক উপত্যকা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের নিজস্ব মৌলিক সম্পদ ও সৌন্দর্যের ঝরনাতলার মালিক মানুষ নয়। প্রকৃতির সব সম্পদ থেকে মানুষ ঋণ নিতে পারে, কিন্তু ধ্বংস করার অধিকার মানুষের নেই। কালো ঝুঁটি বুলবুল ও বনের মর্মর ধ্বনি মানুষের সৃষ্টি নয়। ফুল ও পাখির সুবদ্ধ-সংগীতও আধুনিক কালের নয়। এ সবের সমাহার এই অনুস্মৃতিমূলক প্রকৃতি-কথা। পদ্ম বা মাধবী, হিজল বা কামিনী, গ্রীষ্ম ও বর্ষাসুন্দরও মানুষ সৃষ্টি করেনি। প্রকৃতির নির্জনতা ও নৈঃসঙ্গ্য মানুষ উপভোগ করতে পারে মাত্র। এ সবের সুচারু সমাহার এই রচনাগুলো। এর সুভগ সম্ভোগও জীবনের আনন্দ-বেদনার অচ্ছেদ্য অংশ হোক, ভালোবাসার অপার ভালোবাসায় এই গ্রন্থ নিবেদিত।
Bipradash Barua- জন্ম ২ আশ্বিন ১৮৬২ শকাব্দ (২০ সেপ্টেম্বর ১৯৪০) চট্টগ্রামের ইছামতী গ্রামে। পড়াশুনা চট্টগ্রাম, রাঙামাটি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। গল্প, উপন্যাস, প্রকৃতি ও বিচিত্র বিষয়ে লেখেন। পাখি, সমুদ্র ও বৃক্ষ, বনমর্মরভূমি, ভ্রমণ, গবেষণা-বিশাল লেখার ভুবন। বাংলাদেশের আনাচ-কানাচ উঠে আসে দৈনিক পত্রিকার কলামে। রাতের রেলগাড়িতে ছায়াপথে ভ্রমণ এই বিষয়ে প্রথম পদক্ষেপ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের বিশাল রাজ্যে প্রবেশের ছোট্ট জানালা। সেই থেকে শুরু। তার ফসল দৈনিক পত্রিকার সহজ-সরল লেখাগুলো। প্রকৃতির বিচিত্র বিষয় নিয়ে এক ডজনের বেশি বই প্রকাশিত হয়েছে। গাছপালা, তরুলতা ও বৃক্ষ ও নিসর্গ, নিসর্গের খোঁজে, প্রকৃতিও প্রতিশোধপরায়ণ, বিপন্ন বাংলাদেশ ও বন্ধু বৃক্ষ প্রভৃতি গ্রন্থে তাঁর মনোভঙ্গি ধরা পড়ে। এসব লেখায় ছড়িয়ে আছে আকাশ ও নক্ষত্রপ্রীতি। ১৯৯১-তে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, ১৪১১ সনে বাংলাদেশ শিশু একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার লাভ। তাঁর তিনটি বই অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার লাভ করে। পেয়েছেন রেডি টুডে প্রবর্তিত প্রথম গ্রিন এওয়ার্ড ২০১০।