"জোছনা রাতের জোনাকি" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ শাহেদ মাধবীকে দেখছে আর দেখছে। মাধবী, অনিন্দ্যসুন্দর। মাধবী! সে যতই দেখে ততই অবাক হয়, একবার দেখে তাে আবার দেখতে ইচ্ছে করে, আবার দেখে তাে হাজারবার দেখতে ইচ্ছে করে। চিন্তা-চেতনা, জল্পনাকল্পনা, আশা-ভালােবাসায় শুধু মাধবী আর মাধবী। কিন্তু কে এই মাধবী? জানতে চেয়ে বিস্মিত হয় শাহেদ। এ কী বলছে মাধবী! দুশাে বছর আগে নাকি তাদের পরিচয়! অবিশ্বাস্য, অকল্পনীয় কে বিশ্বাস করবে এই পরাবাস্তবতাকে? অথচ এক সময় মাধবীর সব কথা সত্য প্রমাণিত হতে থাকে। প্রমাণিত হতে থাকে শাহেদ জন্মেছিল, জন্মেছিল দুশাে বছর আগে, ঠিক মাধবীর পাশে, মাধবীরই ভালােবাসার পরশে। কিন্তু নিষ্ঠুর নিয়তি আর সমাজের জাঁতাকলে এক সময় হারিয়ে যায় শাহেদ। তবে হারানাের আগে সে চিৎকার করে বলে যায়, সে ফিরে আসবে, ফিরে আসবে তার প্রিয়, অতি প্রিয় ভালােবাসার কাছে, কোনাে এক জোছনা রাতে জ্বলজ্বলে জোনাকি হয়ে। তাইতাে অপেক্ষায় থাকে মাধবী, এক-দুটি দিন নয়, এক-দুটি মাস নয়, এক-দুটি বছর নয়, এক-দুটি যুগ নয়, দীর্ঘ দুই-দুটি শতাব্দী। তারপর তারপর... সত্যি আবার তাদের দেখা হয়, দেখা হয় নীরবে নীভূতে সংগােপনে শুধুই রাতের অন্ধকারে। কিন্তু প্রকৃতি যে বড়াে নিষ্ঠুর! বড়াে নির্মম! আগের মতােই ভয়ালরূপে আবির্ভূত হয় দুজনের মাঝে। তারপর গ্রাস করতে থাকে শতবছর ধরে অপেক্ষমাণ নির্মল পবিত্র ভালােবাসার অপূর্ব সুন্দরী মাধবীকে। শাহেদ আর সহ্য করতে পারে না। সে চিৎকার করে ছুটতে থাকে মাধবীর পেছনে, মাধবীকে যে আর সে হারাতে চায় না, কিন্তু সে পেরে ওঠে না... তারপরও সে ছুটতে থাকে... ছুটতে থাকে তার প্রিয়, অতি প্রিয় ভালােবাসা আর ভালােলাগার মাধবীর পেছনে। শেষ পর্যন্ত কী ঘটেছিল শাহেদ আর মাধবীর ভাগ্যে?
লেখক মোশতাক আহমেদ এর জন্ম ১৯৭৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর, ফরিদপুর জেলায়। পেশায় একজন চাকুরিজীবী হওয়া সত্ত্বেও লেখালেখির প্রতি তাঁর আগ্রহ প্রচুর। এ পর্যন্ত সায়েন্স ফিকশন নিয়েই সবচেয়ে বেশি লিখেছেন। বাংলা সায়েন্স ফিকশন জগতে তার পোক্ত একটি অবস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও মোশতাক আহমেদ এর বই সমূহ ভৌতিক, প্যারাসাইকোলজি, মুক্তিযুদ্ধ, কিশোর ক্ল্যাসিক, ভ্রমণ ইত্যাদি জঁনরাতে বিভক্ত। যেকোনো একটি বিষয়ে সীমাবদ্ধ না থেকে তিনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখতেই পছন্দ করেন। মোশতাক আহমেদ এর বই সমগ্র সংখ্যায় পঞ্চাশ পেরিয়েছে। তাঁর প্রথম প্রকাশিত বই ছিল ‘জকি’। এটি একটি জীবনধর্মী উপন্যাস। ২০০৫ সালে এটি প্রকাশিত হয়। মোশতাক আহমেদ পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রথমে ফার্মেসি বিভাগে, পরে আইবিএতে। পরবর্তী সময়ে ইংল্যান্ডের লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অপরাধবিজ্ঞান থেকে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। পড়াশোনার খাতিরেই হোক বা কর্মজীবনের তাগিদেই হোক, ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অনেক ভ্রমণ করেছেন। সেসব ভ্রমণকাহিনীর আশ্রয়ে তাই ক্রমেই সমৃদ্ধ হয়েছে তাঁর লেখা ভ্রমণকাহিনীগুলোও। তাঁর সৃজনশীল কর্মকাণ্ড শুধু লেখালেখিতেই গণ্ডিবদ্ধ নয়। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাজারবাগের পুলিশ ও পাকিস্তানী হানাদারবাহিনীর মধ্যে একটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। সে ঘটনার ওপর ভিত্তি করে মোশতাক আহমেদ ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধ’ নামে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন। এটি ২০১৩ সালের মার্চ মাসে মুক্তি পায়। তাঁর পুরস্কারের ঝুলিতে এ পর্যন্ত রয়েছে ২০১৩ সালের কালি ও কলম সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৪ সালের ছোটদের মেলা সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৪ সালের কৃষ্ণকলি সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৫ সালের সিটি আনন্দ আলো পুরস্কার এবং সর্বশেষ সংযুক্তি হিসেবে সায়েন্স ফিকশন বিষয়ে বিশেষ অবদান রাখার জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০১৭।