১৯৮২ সালে শহীদ বরকতের জননী হাসিনা খাতুনসহ বরকতের গােটা পরিবার অর্থাৎ তার অকাল প্রয়াত কনিষ্ঠ ভ্রাতা আবুল হাসনাতের স্ত্রী ও সন্তানাদি বাবলা গ্রাম পরিত্যাগ করে পরিস্থিতি জনিত কারণে বাংলাদেশ চলে যেতে বাধ্য হন। নিকট আত্মীয় হিসাবে তখন অমর ভাষা শহীদ আবুল বরকতের স্মরণে প্রতিবছর ২১শে ফেব্রুয়ারীর স্মরণসভা অনুষ্ঠানের গুরুদায়িত্ব তার উপর বর্তায়। আর্থিক অনটন ও অল্প-বয়সজনিত কারণে তিনি ২১শে ফেব্রুয়ারীর অনুষ্ঠানের ধারাবাহিকতা বজায় না রাখতে পারলেও ১৯৯৫ সাল থেকে এ যাবৎকাল পর্যন্ত শহীদ আবুল বরকতের জন্মভিটে মুর্শিদাবাদ জেলার অন্তর্গত সালার থানার বাবলা গ্রামে নিয়মিত অনুষ্ঠান করে আসছেন। ২০০০ সালের প্রথমদিকে তিনি আমার সঙ্গে সাক্ষাত করে শহীদ বরকতের একখানি প্রামাণ্য জীবনীগ্রন্থ রচনার আহ্বান জানান। আমি তাকে তথ্যের অপ্রতুলতার কথা জানালে তিনি আমাকে শহীদ আবুল বরকতের আত্মীয়-স্বজন, সহপাঠী, সহচর এবং বন্ধুদের একটি তালিকা তুলে দেন, যাদের অধিকাংশই ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুর্শিদাবাদ জেলার স্থায়ী বাসিন্দা। আব্দুস সবুরের সঙ্গে সিয়াদত আলি আমার একটি সাক্ষাতকারের ব্যবস্থাও করে দিয়েছিলেন তার বসতবাড়ী মুর্শিদাবাদ জেলার সালার থানার অন্তর্গত পূর্বগ্রামে। ২০০০ সালের জুলাই মাসের ২৭ তারিখ থেকে ধারাবাহিক ভাবে বেশ কয়েকদিন আব্দুস সবুর সাহেবের সঙ্গে আমার একান্ত আলাপচারিতার সুযােগ ঘটে। সেই আলাপচারিতার ভিত্তিতেই ভাষা শহীদ আবুল বরকতের সময়কালকে ধরে রাখা হয়েছে নির্মোহ গবেষকের দৃষ্টিতে। ভাষাশহীদের অমর জীবন-বৃত্তান্ত এবং ভাষা-আন্দোলনের বাস্তব প্রেক্ষাপট ক্রমশই হারিয়ে যাচ্ছে আজকের প্রজন্মের কাছে। ইন্টারন্যাশনাল মাদার ল্যাংগুয়েজ অ্যাওয়ারনেস অ্যাসােসিয়েশন (ইমলা)-র উদ্যোগে পরিচালিত “ভাষা শহীদ আবুল বরকতঃ নেপথ্য কথা” নামে এই ছােট গবেষণা গ্রন্থটি বাংলা ভাষাপ্রেমী মানুষদের মনকে অন্ততঃ কিছুটা যদি স্পর্শ করতে পারে তাহলে নিজেকে ধন্য মনে করব।