"কাশ্মীর ইতিহাস ও রাজনীতি" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: কী আছে সেখানে যে তাকে বলা হয় ভূস্বর্গ? কেমন সেখানকার মানুষ? কেমন তাদের জন্ম-মৃত্যু-বিয়ে আর জীবনের নানা অধ্যায়? কেমন তাদের ভালোবাসা কিংবা ঘৃণার প্রকাশ? কী তাদের ইতিহাস? বর্তমান তাদের কেমন- সংঘাতের না শান্তির? কোথায় ঠিকানা তাদের আগামীতে? বস্তুনিষ্ঠতার মানদণ্ডে যাচাই করে এসব প্রশ্নেরই উত্তর লেখা হয়েছে এই গ্রন্থে। গ্রন্থকারের দুই বছরের অভিজ্ঞতা রস যুগিয়েছে এর প্রতিটি পৃষ্ঠায়। ভ্রমণে আগ্রহীদের জন্য এটি হল প্রামাণ্য। তবে, এটা ভ্রমণকাহিনীর উর্ধ্বে। এটি একটি রাজনৈতিক এথনোগ্রাফি। বিতার্কিকের যুক্তিবোধ, সাংবাদিকতার অনুসন্ধানী দৃষ্টি আর সাংস্কৃতিক মননে সমৃদ্ধ জাকারিয়া’র লেখনি প্রাঞ্জলভাবে তুলে। ধরেছে কাশ্মীরের রূপের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা ভূরাজনীতি। "কাশ্মীর ও আজাদির লড়াই" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে উত্তপ্ত ও বিক্ষত জনপদ কাশ্মীর। গত প্রায় ৭১ বছর কাশ্মীরীরা আজাদির জন্য লড়ছে। একই সঙ্গে বিশাল ভারত তার সর্বোচ্চ সামরিক শক্তি নিয়ে জম্মু-কাশ্মীর-লাদাখে উপস্থিত। কাশ্মীর ভ্যালি বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে সামরিকায়িত এলাকাগুলোর একটি। বিশ্ব দেখছে, প্রতিদিন কাশ্মীরে রক্ত ঝরছে- কিন্তু সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান আপাতত কোন উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। কাশ্মীরীদের গণভোটের বহুল প্রচারিত দাবিও উপেক্ষিত এখন। বাংলাদেশ ও কাশ্মীরের রাজনৈতিক ইতিহাসে অনেক মিল থাকলেও বাংলাদেশিরা ঐ জনপদের ভৌগলিক, জাতিগত এবং রাজনৈতিক বিকাশধারার বিষয়ে কমই জানে। বাংলাদেশের প্রচার মাধ্যম ও একাডেমিক জগতে কাশ্মীর বিষয়ে গভীরতর মনোযোগ প্রায় অনুপস্থিত। কাশ্মীর বিষয়ে ভারত ও পশ্চিমের বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে প্রকাশিত বিবরণগুলোই বাংলাদেশে প্রশ্নহীনভাবে সর্বদা প্রচারিত হতে দেখা যায়। বর্তমান প্রকাশনা এই শূন্যতা পূরণে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়। এখানে জম্মু-কাশ্মীরলাদাখের সামাজিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ইতিহাসের চুম্বক তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হয়েছে স্থানীয় নির্ভরযোগ্য একাডেমিক সূত্রগুলোকে ব্যবহার করে। একই সঙ্গে কাশ্মীর সংঘাতের আঞ্চলিক তাৎপর্য বুঝতেও সাহায্য করবে এই কোষগ্রন্থ। আজাদির লড়াই কাশ্মীর অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি এই উপত্যকা আজ বিশ্বের সবচেয়ে বেশী রক্তাক্ত এবং একইসাথে অন্ধকারাছন্ন সামরিক আগ্রাসনের শিকার এক উপত্যকার নাম। পাকিস্তান সমর্থিত ভারত বিরোধী আন্দোলনে এ পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছে ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষ। কাশ্মীরের এই বধ্যভূমি যেন ছাড়িয়ে গিয়েছে ফিলিস্তিন ও তিব্বতকেও। এর সাথে যোগ করুন প্রতিদিনের অবাধ গ্রেফতার, কারফিউ, রেইড, চেকপয়েন্ট। প্রায় ৭ লক্ষ ভারতীয় সৈন্য অব্যাহত ভাবে চালিয়ে যাচ্ছে এই জুলুম। উপত্যকার চল্লিশ লাখ মুসলিমরা আজ শিকার হচ্ছে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ আর অকথ্য সব নির্যাতনের, যার মধ্যে আছে গোপনাঙ্গে বৈদ্যুতিক তার ঢোকানোর মত নানারকম ভয়ংকর, বর্বরোচিত টর্চার। তাহলে কেন, কোন কারণে কাশ্মীরের এই চরম মানবিক দুর্দশাগুলো আমাদের নৈতিক চিন্তায় কেমন যেন একটা অদৃশ্য, দুর্বোধ্য রূপ নিয়ে আছে? পঙ্কজ মিশ্র। ঘরের মাটিতে ন্যায়বিচার আর আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের দাবিতে চালিয়ে যাওয়া কাশ্মীরিদের আন্দোলন উপেক্ষিত হয়ে আছে তাদের মাতাল রাজনীতিবিদদের কাছে, ঠিক যেমনটা এই আন্দোলন উপেক্ষার শিকার হয়ে আসছে পাকিস্তানের কাছে। আন্তর্জাতিকভাবে তাদের এই যুদ্ধ হয়েছে বিস্মৃত, অবহেলিত। কেননা পশ্চিমা বিশ্ব নারাজি দেখিয়েছে তাদের আঞ্চলিক মিত্র ভারতের উপর কোন প্রকার চাপ প্রয়োগ করতে। আযাদির লড়াই (কাশ্মীর দ্য কেস ফর ফ্রীডম) বইটি হচ্ছে এই ভারসাম্যহীনতা নিরসন করার এবং আমাদের নৈতিক কল্পনাশক্তির শূন্যস্থান পূরণ করার একটি আবেগময় প্রচেষ্টা মাত্র। কাশ্মীরের অতীত-বর্তমান এবং দখলদারিত্বের কারণ ও প্রতিকার তুলে ধরে লেখকবৃন্দ এই বইয়ে উচ্চকিত করেছেন ভারতীয় বাহিনীর প্রত্যাহার ও কাশ্মীরিদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের দাবি তুলে ধরা এক জোরালো আহবানের… আয়না : কাশ্মীরের স্বাধীনতার প্রতিচ্ছবি ভারতীয় হানাদার বাহিনীর উপস্থিতি কাশ্মীরি জনসাধারণের জান মালের জন্য সর্বদা বিপদজনক। বস্তুত ভারতীয় হানাদার বাহিনীর উপস্থিতিই সকল সমস্যার কেন্দ্রবিন্দু। এছাড়া অন্য যত সমস্যা ও বিতর্ক রয়েছে তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। তাই ভারতীয় সরকারকে একথার অনুভূতি অর্জন করতে হবে যে কাশ্মীরি জনসাধারণের সাথে ভারতীয় হানাদার সৈন্যদের সমন্বয় কোনোভাবে, কোনো পরিস্থিতিতেই সম্ভব নয়। এমনকি জোর জবরদস্তি করে, শক্তির জোরে শত বছর পর্যন্ত যদি ভারতীয় সৈন্যরা কাশ্মীরে অবস্থান করে তবুও কাশ্মীরি জনগণ তা মানসিকভাবে মেনে নিবে না। কাশ্মীরি জনসাধারণের দুর্বলতা অসহায়ত্ব ও দারিদ্রতা হেতু এসব বিষয়ে তাদের চুপ থাকায় যদি ভারত সরকার মনে করে যে কাশ্মীরের অবস্থা স্থিতিশীল ও জনগণ সবকিছু সন্তুষ্ট ভাবে মেনে নিয়েছে তাহলে বুঝে নিতে হবে ভারত সরকার আত্মপ্রবঞ্চনার শিকার হচ্ছে ও ভারতীয় নাগরিকদের কাশ্মীর সম্পর্কে অন্ধকারে রাখছে।