ছড়ার রয়েছে প্রায় দেড় হাজার বছরের সুদীর্ঘ ইতিহাস। ছড়ার প্রধান দাবি ধ্বনিময়তা ও সুরঝংকার, অর্থময়তা নয়। প্রাচীন যুগে ‘ছড়া’ সাহিত্যের মর্যাদা না পেলেও বর্তমানে সে তার প্রাপ্য সম্মান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। যদিও এখনও অনেকেই ছড়াসাহিত্যকে শিশুসাহিত্যেরই একটি শাখা মনে করেন কিংবা সাহিত্যের মূলধারায় ছড়াকে স্বীকৃতি দিতে চান না। এরপরও বর্তমান সময়ে ছড়ার বিকল্প কিছু তৈরি হয়নি। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের ছড়ার জয় জয়কার। অনেক কবিরাও লিখেছেন ছড়া। বিশেষ করে রাজনৈতিক ছড়ার যে প্রভাব তার অনেক প্রমাণ ইতিমধ্যেই আমরা পেয়েছি। সমাজ ও রাষ্ট্রের নানা সমস্যা নিয়ে লড়াই করতে গেলে ছড়াই প্রথম হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। স.ম. শামসুল আলম সাহিত্যের অন্যান্য শাখার পাশাপাশি ছড়াকে বেছে নিয়েছেন তার দ্রোহ, বিদ্রোহ ও অভিব্যক্তি প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে। ‘তবক দেব সবক দেব’ নামের এ বইটি স.ম. শামসুল আলমের একটি ছড়ার বই। ‘আস্ত গরু জবাই করে লোক খাওয়ালাম কেন? এবার আমি ইলেকশনে জিততে পারি যেন।’ (জিততে পারি যেন/ পৃষ্ঠা ১০) ‘আমরা জোটে তোমরা জোটে যুগটা এখন জোটের জোট ছাড়া ভোট পাই কি না পাই সন্দেহ তাই ভোটের।’ (যুগটা এখন জোটের/পৃষ্ঠা ২৪) রাজনীতি যখন নীতিহীন হয়ে পড়ে তখন এ নিয়ে কথা বলা হয়ে পড়ে খুবই বিপদজনক। কিন্তু এ বিপদের কথা চিন্তা করে তো আর হাতগুটিয়ে বসে থাকা যায় না। দেশের এই সব অপরাজনীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে ছড়াই সম্বল। স.ম. শামসুল আলম একজন সমাজ ও রাষ্ট্র সচেতন মানুষ। ফলে তার চোখ থেকে এড়িয়ে যায় না অনেক বিষয়। যা কিছুই অনিয়ম, অসংগতি তার বিরুদ্ধে ছড়াকে দাঁড় করিয়ে দেন অনায়াসে। বইটির নামের সাথে সংগতি রেখে তিনি ছড়ায় ছড়ায় সবক দিয়েছেন আমাদের রাষ্ট্রের অমঙ্গলকারীদের।
স.ম. শামসুল আলম ১৯৬২ সালের ২৫ আগস্ট রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলাধীন শিকজান গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম এস. এম. শাহজাহান আলী এবং মাতা সালেহা শাহজাহান। তিনি ১৯৭৯ সাল থেকে লেখালেখি শুরু করেন এবং একই বছরে ফরিদপুর জেলা পরিষদের মুখপত্র 'মাসিক গণমন'-এ প্রথম লেখা প্রকাশিত হয়। ১৯৮৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হয় প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'হিংসার নক্ষত্র এক'। ১৯৯৪ সালে রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই তাঁকে কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলার কার্যনির্বাহী পরিষদে অন্তর্ভুক্ত করেন এবং ২০০৮ সাল পর্যন্ত এই মেলার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। বর্তমানে তিনি লেখালেখিতে সক্রিয় এবং সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় তাঁর অবাধ বিচরণ। বাংলাদেশের প্রায় সবগুলো জাতীয় দৈনিক ও বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তাঁর লেখা গল্প, উপন্যাস, কবিতা, ছড়া, শব্দরম্য, নাটক, কলাম, উপসম্পাদকীয় ইত্যাদি প্রকাশিত হয়েছে ও হচ্ছে। এ পর্যন্ত তাঁর ৪০টির অধিক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তন্মধ্যে শিশু-কিশোরদের জন্য লেখা গ্রন্থের সংখ্যা বেশি। স.ম. শামসুল আলম বেশ কিছু সংগঠন থেকে সংবর্ধনা-সম্মাননা পেয়েছেন। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, শিশুসাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য তাভীশ দীপঙ্কর গবেষণা পরিষদ কর্তৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা সম্মাননা-২০১৪, কবিতায় বিশেষ অবদানের জন্য কবি ওমর আলী সাহিত্য পদক-১৪২২, ছড়াসাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্মৃতি পদক-২০১৬, বাংলাদেশ শিশুসাহিত্য একাডেমি কর্তৃক মায়ের অলংকার গ্রন্থের জন্য কিশোরকবিতা সম্মাননা-২০১৬ প্রভৃতি। বর্তমানে তিনি নির্মাণ ও আবাসন ব্যবসার সাথে জড়িত। শিশু-কিশোর সংগঠন আনন ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। তিনি দুই সন্তানের জনক- কন্যা শামাদান উফা ও পুত্র আনজাম আনন। স্ত্রী নিগার সুলতানা জুঁই।