আমেরিকা ভ্রমনের এই দিনলিপি মূলত সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভি (রহ.) এর আমেরিকার সফরনামা। তিনি দাওয়াতি উদ্দেশ্যে আমেরিকা সফর করেন।এই সফরনামা আমেরিকা সফরের অনেক বড় একটি চিত্র তুলে ধরে।এই সফর দাওয়াতি উদ্দেশ্যে ছিল। এজন্যে মুলমানদের দাওয়াতি তাকাযা ও তাদের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়াবলিই এর মধ্যে বেশি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। তাছাড়া, আমেরিকা বিশ্বের ধনী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম এবং বিজ্ঞানÑপ্রযুক্তিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে অগ্রগামী। এজন্যে এ দিকটিরও চিত্রায়ণ করা হয়েছে। আমেরিকান জীবনাচারের অনেক দিক সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করা হয়েছে বইটিতে। আশা করি এই সফরনামা পড়ে পাঠকবৃন্দ স্বশরীরে আমেরিকা ভ্রমনের মজা অনুভব করবেন। এই সফরে মে, ১৯৭৭ এর শেষ থেকে আগস্টের শুরু পর্যন্ত মোট দুই মাস মার্কিন যুক্তরাষ্টের পূর্ব উপকুল থেকে শুরু করে পশ্চিম উপকুল পর্যন্ত কানাডাসহ আমেরিকার বহু স্থানে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভি রহ.এর। সামগ্রিকভাবে প্রায় ৬ হাজার মাইলের সফর করেন তিনি। উত্তর আমেরিকার প্রায় সবগুলো গুরুত্বপুর্ণ স্থানে গিয়ে আমেরিকান সভ্যতা দেখে সেখানকার জীবনধারার বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেছেন সফরনামাটিতে। আমেরিকার পার্থিব ও শিল্পের ক্ষেত্রে উন্নতি, শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে অগ্রগামীতা, বল্গাহীন জীবনাচার, সম্পদের নেশা, স্বার্থপরতা, ইসলামি দাওয়াতের অবারিত সুযোগ, মুসলমানদের সংখ্যা ও তাদের কর্ম ইত্যাদি বিভিন্ন দিক সম্পর্কে এই সফরনামায় আলোচনা করা হয়েছে। আমেরিকার কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠী আমেরিকার একটি অভ্যন্তরীন সমস্যা। আমেরিকার জনসংখ্যার দশ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ। কৃষ্ণাঙ্গদের শিক্ষার হার ও অর্থনৈতিক মান অনেক নিচে। কৃষ্ণাঙ্গদের অভিযোগ হল, তাদের এই দূরাবস্থার মূল কারণ হল, ইউরোপীয় বংশোদ্ভুত লোকদের অমনযোগিতা ও পক্ষপাতিত্ব। আর ইউরোপিয়ানদের বক্তব্য হল, কৃষ্ণাঙ্গদের এই দূরাবস্থার জন্য দায়ী তাদের অলসতা ও অযোগ্যতা। ইউরোপিয়ানরা তাদেরকে ছোট, অচ্ছুত মনে করে থাকে। এজন্যে তাদের সাথে ভিন্ন ধরণের আচরণ করে থাকে। আচরণের এই ভিন্নতা কৃষ্ণাঙ্গদের দৃষ্টিতে আরো বেশি প্রকট হয়ে ধরা দেয়। ফলে অনেক কৃষ্ণাঙ্গ তাদের বিমাতাসুলভ আচরনের কারণে, আর কেউ কেউ নিজেদের অন্য রকম মনÑমানসিকতার কারণে প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে ওঠে। তাদের এই আচরণ আমেরিকার শান্তি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অনেক বড় প্রভাব ফেলে। কৃষ্ণাঙ্গদের বারো থেকে পনের শতাংশ মানুষ নিজেদের এক সংস্কার আন্দোলনের প্রভাবে ইসলাম ধর্মের সাথে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করে। এদের জীবনাচার স্বভাবগতভাবে ও সামাজিকভাবে অনেক ভালো। তবে ইসলামের সাথে তাদের কী ধরণের সংযুক্তি -তা ব্যাখ্যার দাবীদার। এই সফরনামায় সেই বিষয়েও আলোকপাত করা হয়েছে। বইয়ে মাওলানা সাইয়েদ আবুল হাসান নদভি (র) এর যেসব ভাষণের সারাংশ দেয়া হয়েছে, সেসব ভাষণ ‘নয়ি দুনিয়া আমেরিকা মেঁ সাফ সাফ বাতেঁ’ নামে প্রকাশিত হয়েছে। আমেরিকা বর্তমান বিশ্বের স্বঘোষিত সুপার পাওয়ার। যার কারসাজিতে দেশে দেশে যুদ্ধও সৃষ্টি হয়, শান্তিও স্থাপিত হয়। প্রবল ক্ষমতাধর একটি দেশ। প্রাকৃতিক সম্পদ আর মানব মেধার অপূর্ব সম্মিলন ঘটেছে এই দেশে। মহান আল্লাহ যেন সম্পদ ঢেলে দিয়েছেন। দেশটি এসব সম্পদের সৎব্যবহারও করেছে, অপব্যবহারও কম করেনি। মাত্র কয়েকশ বছর আগে পৃথিবীর মানচিত্রে যার আত্মপ্রকাশ; কিন্তু বৈষয়িক উন্নতিতে যে পর্যায়ে পৌছে গেছে, অন্যদের সেখানে পৌছতে হাজার বছর লেগে যাবে। বিজ্ঞানÑপ্রযুক্তি, চিকিৎসা, অর্থনীতি- সবকিছুতে যেমন উন্নতির চরম শিখরে, ঠিক তেমনি নৈতিক অবক্ষয়ের চরম রসাতলে। প্রাকৃতিক সৌন্দের্যের লীলাখেলা দেশটিকে করে তুলেছে মনোরম, আর মনুষ্য সৃষ্ট নির্মান দেশটিকে করে তুলে ধরেছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে। এতক্ষণ ইউনাইটেড স্টেট অব আমেরিকার কথা বললাম; যার আদরের ডাকনাম ‘যুক্তরাষ্ট্র’। এই স্বপ্নের দেশে যাওয়ার জন্য যাদের মন আঁকুপাঁকু করে। মনের কোনে ধিকিধিকি জ্বলে ‘ইশ! যদি যেতে পারতাম এই সপ্নপুরীতে! নিজের চোখে দেখতে পারতাম পাশ্চাত্য সভ্যতার এই কেন্দ্রভূমিকে!”Ñ আপনার জন্য একটি সুসংবাদ। আপনাকে আর কষ্টকরে আমেরিকা যেতে হবে না। আপনি ঘরে বসেই অশরীরীভাবে ভ্রমন করবেন আমেরিকা আর পাবেন স্বশরীরে আমেরিকা ভ্রমনের চরমানন্দ। আপনি একবারেই আমেরিকাকে ততটাই চিনবেন, যতটা হয়ত শারীরিকভাবে দশবার আমেরিকা গেলেও চিনতেন না। কারণ, আপনার আমেরিকা সফর হবে সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভি (র) ও সাইয়েদ রাবে হাসানি নদভির সাথে। তাদের মতো দুজন মহান ব্যক্তির সাথে আমেরিকা সফর করতে হলে আপনাকে পড়তে হবে ‘ আমেরিকায় দুই মাস’ বইটি। বইয়ের পাতায় পাতায় জীবন্ত হয়ে উঠেছে আমেরিকান সভ্যতা আর ফুটে উঠেছে পাশ্চাত্য সভ্যতার আলো, অন্ধকার। আপনি শারীরিকভাবে সফর করলে হয়ত আমেরিকাকে শুধু দেখতেন; চিনতেন না। কিন্তু এই বই আপনাকে আমেরিকা দেখাবেও, চেনাবেও। বইয়ের পাতায় পাতায় আমেরিকার নানা জায়গার দুর্লভ ছবি যেন আমেরিকা ভ্রমনকে আরো জীবন্ত করে তুলেছে। অতএব, দেরী না করে রুদ্ধশ্বাসে পড়ে ফেলুন- ‘আমেরিকায় দুই মাস’। বইটি দৃষ্টিনন্দন প্রচ্ছদ, দুর্লভ ছবি, উন্নত কাগজ ও ঝকঝকে ছাপায় প্রকাশিত হতে যাচ্ছে মাকতাবাতুস সুন্নাহ থেকে।