হেকীম হাবীবুর রাহমান ‘ঢাকা পাঁচাস বারাস পাহ্লে’ গ্রন্থে স্মৃতির তুলিতে এঁকেছেন তাঁর ছোটবেলাকার ঢাকা শহরকে। ঢাকার নিকট অতীতের সামাজিক-সাংস্কৃতিক, প্রাত্যহিক জীবনের চিত্র পেতে হলে হেকীম সাহেবের গ্রন্থটিই প্রথম উৎস। এ গ্রন্থটি উর্দু থেকে বাংলায় অনুবাদ করে সূফী একটি বড় মাপের অবদান রাখলেন ঢাকাপ্রেমিকদের জন্য। সূফীর অনুবাদ গ্রন্থটির একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো বিশ্লেষণমূলক অসংখ্য টীকা-টিপ্পনী। টীকা-টিপ্পনীয্ক্তু অনুবাদ একটি কঠিন কাজ। সূফী আক্ষরিক অনুবাদে নিবদ্ধ না থেকে বইটির উপর ব্যাপক নিজস্ব গবেষণাভিত্তিক মন্তব্য সংযোজন করেছেন। এর ফলে হেকীম সাহেবের মূল্যবান গ্রন্থটি আরো মূল্যবান হলো। হেকীম সাহেবের বিবরণে যেখানে অপূর্ণতা রয়েছে বা ঐতিহাসিক সত্যতায় ঘাটতি রয়েছে সেখানে সূফী তাঁর গবেষণালব্ধ জ্ঞান দিয়ে আমাদেরকে বিভ্রান্তি থেকে মুক্ত রাখার চেষ্টা করেছেন। সেদিক থেকে আমি বলবো সূফী শুধু হেকীম সাহেবের বিখ্যাত গ্রন্থটি অনুবাদই করেননি, টীকা আকারে নতুন তথ্য দিয়ে বইটিকে আরো সমৃদ্ধ করে তিনি আমাদেরকে উপহার দিয়েছেন। কেউ যদি মনে করেন যে, হেকীম সাহেবের মত জ্ঞানী মানুষের ভুলত্রুটি চিহ্নিত করে সূফী তাঁর প্রতি অশ্রদ্ধাই প্রদর্শন করেছেন, তা হলে মারাত্মক ভুল করা হবে। ভুলত্রুটি ধরিয়ে দেয়া জ্ঞানজগতের নিয়ম, এটা জ্ঞানান্বেষী সহযাত্রীদের পবিত্র দায়িত্ব। এ কর্তব্যটি পালন করতে সূফী দ্বিধা করেননি। আজকাল সমালোচনার ভয়ে অনেক লেখকই সত্য কথা বলতে নারাজ। জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় এ স্বভাব নিন্দনীয়। সূফী এ নিন্দার ঊর্ধ্বে থেকেছেন। আমি তাঁকে অভিনন্দন জানাই এ সাহসী মনোভঙ্গির জন্য। ‘ঢাকা পাঁচাস বারাস পাহ্লে’ সাধারণ অনুবাদ গ্রন্থ নয়, এটি একটি গবেষণাধর্মি অনুবাদ। এ দুরূহ কাজের জন্য হাশেম সূফী আমাদের সকলের ধন্যবাদার্হ।