“মায়াবী জোছনার বসন্তে" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ নিশা আসে, নিশা যায়। কীভাবে আসে কীভাবে যায়। তা আমি জানি না। তবে ও আসে, যখনই আমি কামনা করি তখনই আসে। হােক তখন সকাল, বিকেল, সন্ধ্যা, দুপুর কিংবা মাঝরাত; কখনােই না নেই নিশার। আমার ডাকে সে সাড়া দেবেই। এজন্যই নিশাকে আমার এত ভালাে লাগে, ভালাে লাগে ওর মায়াবী রূপলাবণ্যকে, ভুবনভােলানাে হাসিকে। এক সময় অনুভব করি নিশা আমার জীবনের অনন্য এক প্রশান্তি। তাইতাে আমি সময় অসময় আশ্রয় খুঁজি নিশার মাঝে। সবার অলক্ষে গােপনে চলে যাই ওর কাছে। নিশা আমাকে নিরাশ করে না। পারিপার্শ্বিক অস্থিরতা আর অসুস্থতার বেড়াজাল থেকে আমাকে মুক্ত করে ও আমার জীবনে নিয়ে আসে পরম প্রশান্তি, জীবনকে করে তােলে সুখী আর আনন্দময়। কিন্তু কেন যেন আশেপাশের কেউই আমার এই সুখ আনন্দকে মেনে নিতে পারে না। কারণ তাদের দৃষ্টিতে নিশা অসম্পূর্ণ, অপূর্ণ, অযােগ্য। আমার আর নিশার সম্পর্কের নাকি কোনাে যৌক্তিকতা নেই, নেই কোনাে বৈধতা। তাইতাে সবাই উঠেপড়ে লাগে নিশার বিরুদ্ধে। নিশাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে পরিকল্পনা করে তারা। আর নিশার শূন্যতা আমার দিকে ঠেলে দেয় অপূর্ব সুন্দরী নােভাকে। শুরু হয়। নিশা-নােভার যুদ্ধ। আর সেই যুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত হতে থাকি আমি। এক সময় অনুভব করি যুদ্ধ শেষ হয়েছে। কিন্তু কে জয়ী হলাে সেই যুদ্ধে? সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে আমি অপেক্ষা করতে থাকি মায়াবী জোছনার বসন্তের জন্য। কবে আসবে বহু আকাঙ্ক্ষিত সেই মায়াবী জোছনার বসন্ত?
লেখক মোশতাক আহমেদ এর জন্ম ১৯৭৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর, ফরিদপুর জেলায়। পেশায় একজন চাকুরিজীবী হওয়া সত্ত্বেও লেখালেখির প্রতি তাঁর আগ্রহ প্রচুর। এ পর্যন্ত সায়েন্স ফিকশন নিয়েই সবচেয়ে বেশি লিখেছেন। বাংলা সায়েন্স ফিকশন জগতে তার পোক্ত একটি অবস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও মোশতাক আহমেদ এর বই সমূহ ভৌতিক, প্যারাসাইকোলজি, মুক্তিযুদ্ধ, কিশোর ক্ল্যাসিক, ভ্রমণ ইত্যাদি জঁনরাতে বিভক্ত। যেকোনো একটি বিষয়ে সীমাবদ্ধ না থেকে তিনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখতেই পছন্দ করেন। মোশতাক আহমেদ এর বই সমগ্র সংখ্যায় পঞ্চাশ পেরিয়েছে। তাঁর প্রথম প্রকাশিত বই ছিল ‘জকি’। এটি একটি জীবনধর্মী উপন্যাস। ২০০৫ সালে এটি প্রকাশিত হয়। মোশতাক আহমেদ পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রথমে ফার্মেসি বিভাগে, পরে আইবিএতে। পরবর্তী সময়ে ইংল্যান্ডের লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অপরাধবিজ্ঞান থেকে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। পড়াশোনার খাতিরেই হোক বা কর্মজীবনের তাগিদেই হোক, ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অনেক ভ্রমণ করেছেন। সেসব ভ্রমণকাহিনীর আশ্রয়ে তাই ক্রমেই সমৃদ্ধ হয়েছে তাঁর লেখা ভ্রমণকাহিনীগুলোও। তাঁর সৃজনশীল কর্মকাণ্ড শুধু লেখালেখিতেই গণ্ডিবদ্ধ নয়। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাজারবাগের পুলিশ ও পাকিস্তানী হানাদারবাহিনীর মধ্যে একটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। সে ঘটনার ওপর ভিত্তি করে মোশতাক আহমেদ ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধ’ নামে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন। এটি ২০১৩ সালের মার্চ মাসে মুক্তি পায়। তাঁর পুরস্কারের ঝুলিতে এ পর্যন্ত রয়েছে ২০১৩ সালের কালি ও কলম সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৪ সালের ছোটদের মেলা সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৪ সালের কৃষ্ণকলি সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৫ সালের সিটি আনন্দ আলো পুরস্কার এবং সর্বশেষ সংযুক্তি হিসেবে সায়েন্স ফিকশন বিষয়ে বিশেষ অবদান রাখার জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০১৭।