"উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও অপচয় হ্রাসের মাধ্যমে সীমিত সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে গবেষকদের জন্য আস্থা রাখবার মতাে একটি পরিবেশ সীমিত মাত্রায় হলেও যে দেশে সৃষ্টি করা যায়, ড. বাছিত নিজেই স্থাপন করেছেন এমন একটি দৃষ্টান্ত। সম্পূর্ণ একক উদ্যোগে প্রজেক্ট লিখে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে বরাদ্দ এনে ন্যানােটেকনােলজি রিসার্চ ল্যাবরেটরি’ নামে একটি স্টেট অব আর্টস ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠা করে বাংলাদেশের গবেষকদের জন্য ড, বাছিত আজ একটি উদাহরণ। ওই ল্যাবরেটরিতে অনেক ছাত্র-ছাত্রী এমএসসি, এমফিল, পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের জন্য গবেষণা করছেন এবং তাঁরা এখন নিয়মিত অনেক গবেষণা প্রবন্ধ উচ্চমানের আন্তর্জাতিক পিয়ার রিভিউড জার্নালে প্রকাশ করছেন। তরুণ গবেষকদের প্ল্যাটফর্ম ন্যাশনাল ইয়াং একাডেমি অব বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাছিত বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন। তার এই বিশাল কর্মযজ্ঞ দেখে ঈর্ষা এবং গর্ব দুটোই হয়। বাংলাদেশের মতাে জায়গায় থেকে এই অল্প সময়ে এত কিছু করতে পারা সত্যিই এক বিস্ময়! বর্তমান গ্রন্থের প্রবন্ধসমূহ লেখকের নিজস্ব উপলব্ধি থেকে লেখা, বক্তব্য সুস্পষ্ট ও অকপট। লেখক করেছেন, দেখেছেন, বুঝেছেন সেভাবেই লিখেছেন। উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় আগ্রহী ছাত্র-শিক্ষক সবার জন্যই বইটি সহায়ক হবে। তবে বইটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অভিঘাত হবে পাঠকের মনে চিন্তা জাগিয়ে তােলা। প্রতিটি প্রবন্ধ পড়ার সাথে সাথে পাঠকের মনেও স্বতঃস্ফূর্তভাবেই বিভিন্ন চিন্তা আসবে। সেই চিন্তা থেকে আরও আলােচনা-বিতর্ক ইত্যাদি হবে এবং এসবের ভেতর থেকেই গঠনমূলক কিছু বের হয়ে আসবে বলেই আমার বিশ্বাস। গবেষণা কী, কীভাবে গবেষণা করতে হয়, কীভাবে গবেষণা প্রবন্ধ লিখতে হয়, থিসিস রচনার নিয়ম কানুন কী, প্লেজিয়ারিজম কী এবং এটা যে অবশ্য বর্জনীয়, গবেষক হওয়ার সাথে যে সততা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত ইত্যাদি নানা বিষয় বইটিতে এত পরিষ্কারভাবে লেখা হয়েছে যে, কেউ পড়লেই এসবের একটি স্পষ্ট ধারণা পাবেন। যােগ্য এবং দূরদর্শী একজন উপাচার্যের কর্তব্য, একজন শিক্ষার্থীকে গবেষক হিসেবে গড়ে তুলতে উপযুক্ত ও দক্ষ শিক্ষকের ভূমিকা এবং সর্বোপরি মানসম্পন্ন একটি বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় রূপান্তরে কী ভূমিকা রাখতে পারে, সে বিষয়েও সম্যকভাবে অবহিত হবেন। এছাড়া আন্তর্জাতিক মানের কনফারেন্স আয়ােজনে প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন কেন প্রয়ােজন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়ােগ, পদোন্নতি এবং পদোন্নয়নের জন্য যুগােপযােগী নীতিমালা প্রণয়ন কেন অপরিহার্য, ভালাে মানের গবেষণাগার এবং ভালাে গবেষক তৈরি করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের কী করণীয়, এই বইটিতে এ রকম আরও অনেক বিষয় প্রাঞ্জল ভাষায় উপস্থাপন করা হয়েছে। শিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রে বিচিত্র সব প্রসঙ্গ নিয়ে একটি লজিক্যাল ফ্লো-তে লেখা এরকম কোনাে বইয়ের কথা অন্তত আমার জানা নেই। সেই হিসেবে আগত সব সময়ের জন্য এটি একটি পথিকৃৎ গ্রন্থ হয়ে থাকবে, এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস। সমস্যা চিহ্নিত করাই এই গ্রন্থের একমাত্র অর্জন নয়, বর্তমান বাস্তবতায় যােগ্য গবেষক ও শিক্ষকের করণীয় কী, সে বিষয়টিও বাছিত এড়িয়ে যাননি। এরকম একটি বই সত্যিই খুব দরকারি; বিশেষ করে সঠিকভাবে গবেষণা প্রজেক্ট লিখতে পারলে প্রয়ােজনীয় অর্থপ্রাপ্তি যে অসম্ভব নয়, এটি এই বইয়ের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ।