এখনো গুলির চিহ্ন’ একটি কাব্যগ্রন্থ। এ কাব্যগ্রন্থের নামকরণটি বেশ ব্যতিক্রম ও ব্যঞ্জনাময়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের সেই ঘাতকের গুলির চিহ্ন আজো স্পষ্ট! এক একটি গুলি স্বাধীন বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে করেছিল রক্তাক্ত, ক্ষতবিক্ষত! স্বাধীন দেশে স্বাধীনতার স্থপতিকে এভাবে প্রাণ দিতে হবে তা কেউ কি কখনও ভেবেছিল? বাঙালির এ শোক এ আত্মঘাতী লজ্জা চিরকাল বহন করতে হবে। বাংলা গল্প কবিতা উপন্যাস গানে মুজিবের জন্য যে হাহাকার, যে আর্তনাদ তার কোনো অন্ত নেই। বাংলা ভাষার এমন কবি সাহিত্যিক নেই যে শেখ মুজিবকে নিয়ে লেখেননি। আলোচ্য এ কাব্যগ্রন্থের কবি হাইউল রশিদ ফকির ‘এখনো গুলির চিহ্ন’ কবিতায় লিখেন― ‘এখনো গুলির চিহ্ন― এখানে দোতলায় উঠার সিঁড়ির দেয়ালে সুস্পষ্ট স্মৃতি― ক্ষত হয়ে আছে বাংলাদেশের বুকের গভীরের মতন ঠিক বাঙালি জাতির কপালে যেনো জীবন পূর্বাহ্নে বর্ষার পাহাড়ি ঝর্ণা নেমে আসে। নেমে আসে পাহাড়ি ঢলের নির্মম হিংস্রতা নিয়ে যেনো জাতির পিতা আর আমাদের মধ্যকার শত বছরের সোনালি সুখের বন্ধন ভাঙতে পরিকল্পিত আক্রোশ। ১৫ আগস্টের পরে বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সামাজিক অবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটে। ক্ষমতা দখল আর পালাবদলের মধ্য দিয়ে এ দেশের স্বাধীনতাই যেন হুমকির মুখে পড়ে! সকল প্রতিকূলতার মধ্যে বাঙালি স্বাধীনতাকে আঁকড়ে আছে মুজিব আদর্শে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে। হাইউল রশিদ ফকির একজন প্রাণবন্ত, টগবগে মানুষ। তার স্বভাবের ছাপ দেখা যায় তার কবিতায়। দ্রোহ ও দাহন, স্মৃতির সম্মোহন আর স্বপ্নের আনন্দ তার কবিতাকে করে বেগবান। ধর্মীয় মূল্যেবোধ ও বিশ্বাসের নিবেদন আছে তার কবিতায়। যেমন― ‘একদিন নামবে মানব মানবীর অবিস্মরণীয় ঢল সারা দুনিয়ায়! ছুটবে সেথায় মানব মানবীর ঝর্ণা স্রোতধারা ঠিক মক্কা মদিনায়! ধরাধামে বাদশাহ’র বাদশাহ কাবাতুল্লাহ্য় বসে রবেন কাবা’য়! বিশ্বের সেরা নগরী মক্কা মদিনা পরিণত হবে বিশ্ব মানব মেলায়!’ একদিন-পৃষ্ঠা-৩৬ মূলত এই বইটির অধিকাংশ কবিতাই বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত কবিতা। ১৯৫৭ সালে জন্ম নেওয়া এ কবি বাঙালি ও বাংলাদেশের অনেক উত্থান পতন দেখেছেন। তার অভিজ্ঞতা ও চিন্তার পরিপক্কতা এ বইয়ের কবিতারগুলোর মধ্য প্রতীয়মান হয়েছে। তবে বাংলা কবিতার যে বাঁক বদল, ভাষারীতি, শব্দচয়ন এ ব্যাপারে আরো মনোনিবেশ প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে অনুভূতির সর্বোচ্চ শিল্পমাধ্যম হলো কবিতা। পাঠক এ বইটি পড়ে একজন হাইউল রশিদ ফকিরকে চিনতে পারবেন।