লোকধর্মের মধ্যে নিহিত যে-সব চিন্তা ,দেশীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা ও অনুরাগ বিচ্ছুরিত হতে দেখি তা ভিন দেশ থেকে আমদানিকৃত নয় ।একদিন এ দেশের জল-হাওয়ায় তার ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছিল।এখন দেশের মানুষের চিন্তাশীল মন ও মননের ক্ষেত্রে যদি গভীর মমত্ববোধ না জাগে তা হলে আমাদের পূর্ব প্রজন্মের বাস্তুভিটে প্রাশ্চাত্য সংস্কৃতির আঘাতে ,দূর্বিপাকে টলে উঠবেই । সংস্কৃতির সদগুণকে আশ্রয় করে ঐতিহ্যের যে প্রত্যয় গড়ে ওঠে তা-ই ঠিক করে দেয় একটি জাতির নিজস্ব পরিচয় ।এই পরিচয়কে ধরে রাখতে হলে চাই লোকসংস্কৃতির পাঠ।আর তাই লোকসংস্কৃতির অংশ হিসেবে ‘বাংলাদেশের লোকধর্ম-১ম খণ্ডে’ প্রকৃতজনের ভাব-ভাবনা ,কীর্তি ও কাহিনী লিপিবদ্ধ করার চেষ্টা করেছি।এখানে ভগবানিয়া বলাহাড়ি,মতুয়া,রাই রসরাজ,ও পাগলাচাঁদ নামের পাঁচটি লোকধর্ম নিয়ে পৃথক পৃথক আলোচনা রয়েছে।এই গ্রন্থে প্রতিটি লোকধর্মের দর্শন ,সামাজিক আচার সংস্কার,দৈনন্দিন জীবন পরিচয় ,ধর্মীয় অনুষ্ঠান ,তীর্থ ও পীঠস্থান,অন্যান্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে তুলনামূলক আলোচনা এবং আধ্যত্নিক গুরুর জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা রয়েছে। আজ পাশ্চাত্য ও পশ্চিমা জনেরা চিন্তায় এত উন্নত এর কারণ তারা তাদের আধুনিক চিন্তার সঙ্গে সংস্কৃতির লোকায়ত ধারার তাৎপর্য করতে চেষ্টা করেছেন।তারা দেশীয় সংস্কৃতির নিদর্শন সংগ্রহে আত্নোসর্গ করেছেন।আমরা তা পারিনি।এজন্য পদে পদে আমাদের হোঁচট খেতে হয়,আত্নপরিচয়ের সংকটে ভুগতে হয় ।আজ তাই দেশীয় ভাব-ভাবনার অনুপ্রাণিত হয়ে আমাদের আত্ননুসন্ধানের প্রয়োজন রয়েছে।প্রয়োজন রয়েছে লোকসংস্কৃতি অনুশীলনের মধ্য দিয়ে স্বদেশনুরাগ ও স্বাজাত্যবোধ জাগ্রত করার।
রঞ্জনা বিশ্বাস ১৯৮১ সালের ১০ ডিসেম্বর গােপালগঞ্জের। কোটালীপাড়া থানার রাধাগঞ্জ ইউনিয়নের খাগবাড়ি গ্রামে। জন্মগ্রহণ করেন। পিতা নির্মল বিশ্বাস ও মাতা পরিমলা। বিশ্বাস। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএসএস ডিগ্রি লাভ করেন। ‘ভুলস্বপ্নে ডুবে থাক আদিবাসী মন’ (২০০৯), “আমি তিনবেলা বৃষ্টিতে ভিজি। (২০১০), “বেদনার পাথর ও প্রান্তিক দীর্ঘশ্বাস' (২০১৬) তার কবিতার বই। কবিতা ও ফোকলাের তার আগ্রহের বিষয়। কবিতা চর্চার পাশাপাশি ফোকলােরচর্চাকেও তিনি। ব্রত হিসেবে নিয়েছেন। কোটালীপাড়া এলাকার রূপকথার সংগ্রহ নিয়ে বের হয়েছে- ' জয়নালবাদশা ও রাজপুত্র তাজেম' (২০১১) ও ‘উড়াল ঘােড়া’ (২০১৭)।। এছাড়া বের হয়েছে শিশুতােষ বই- ‘খােকার বাংলা (২০১৯)। তার উল্লেখযােগ্য গবেষণাকর্ম- ‘বেদে। জনগােষ্ঠীর জীবনযাত্রা' (২০১১), রবীন্দ্রনাথ : কাবুলিওয়ালা, সুভা ও দালিয়া’ (২০১২), বাংলাদেশের। বেদে জনগােষ্ঠীর নৃতাত্ত্বিক পরিচয়’ (২০১৫), সাহিত্যে। বেদে সম্প্রদায়’ (২০১৬), ‘কিতুবীম : হিব্রু কবিতার। সাহিত্যমূল্য (২০১৭), লােকসংস্কৃতিতে বঙ্গবন্ধু ও। মুক্তিযুদ্ধ’ (২০১৭) মুক্তিযুদ্ধে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়, ১ম খন্ড। (যৌথ) (২০১৯), বেদে জনগােষ্ঠীর ভাষা উৎস ও তাত্তিক। বৈশিষ্ট্য (২০১৭), এবং বেহুলা বাংলার ৭১ সিরিজের। মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক উপন্যাস ‘বিষুদবারের বারবেলা’ (২০১৭)। গবেষণাকর্মের জন্য তিনি কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার-২০১৫ অর্জন করেন ।