“আমার জীবনকথা ও বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ ড. মল্লিক তাঁর সময়কালের রাজনৈতিক বিবর্তন, ব্রিটিশ বিরােধী আন্দোলন, সাম্প্রদায়িকতা, হিন্দু-মুসলিম বিরােধ, পাকিস্তান আন্দোলনে বাঙালি মুসলমানের ভূমিকা, পাকিস্তান সৃষ্টির পর আত্ম জিজ্ঞাসার প্রক্রিয়া, পূর্ব বাংলায় অসাম্প্রদায়িক জাতীয় চেতনার উন্মেষ, ছাত্র রাজনীতির স্বরূপ, ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে প্রাদেশিক গভর্নর মােনায়েম খানের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে নানামুখী সমস্যা, বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে তাঁর ভূমিকা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ ও মত বিনিময়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক, অর্থমন্ত্রীর পদ গ্রহণের পরিপ্রেক্ষিত ইত্যাদি বিষয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন বর্তমান গ্রন্থে। উপাচার্য ও অধ্যাপক থাকাকালীন সংশিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থার সমকালীন অবস্থা সম্পর্কে তাঁর মূল্যায়ন, শিক্ষা সচিব থাকাবস্থায় স্বাধীনােত্তর দেশের শিক্ষা পদ্ধতি সম্পর্কে তার মূল্যবান মতামত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনাকালীন উক্ত বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে তাঁর স্মৃতিচারণ, স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষে জনমত সৃষ্টির লক্ষে ড. মল্লিক যেসব দেশে বক্তব্য প্রদান করেছেন এবং যুদ্ধকালীন বাংলাদেশ বিষয়ে বিদেশীদের মূল্যায়ন সম্পর্কেও তিনি তাঁর নিজস্ব . মতামত তুলে ধরেছেন যা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নির্মাণে উপাত্ত হিসেবে কাজে আসবে। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে রাষ্ট্রদূত থাকাকালীন ড. মল্লিক সদ্যপ্রসূত স্বদেশকে কিভাবে সে-দেশে পরিচিত করে তুলেছেন, পাশাপাশি পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ একটি গণতান্ত্রিক দেশে অবস্থান করে তার অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে নিজদেশের গণতান্ত্রিকতার মূল্যায়ন সম্পর্কেও তিনি তাঁর মতামত রেখেছেন। অর্থমন্ত্রী থাকাবস্থায় তিনি এদেশের অর্থনৈতিক কাঠামােকে খুব কাছে থেকে দেখেছেন, তার নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ আমাদের সামাজিক অর্থনৈতিক কাঠামাে উন্নয়নে কতটুকু ভূমিকা রেখেছে সে সম্পর্কেও পাঠক ও অর্থনীতি বিষয়ে উৎসাহীদেরকে তথ্য যােগান দেবে। পরিশিষ্টে রয়েছে বেশ কিছু বক্ততার অংশ বিশেষ। এসব বক্তৃতা, বিবৃতি, স্মৃতিকথা সমকালের স্বদেশ, সমাজ, রাজনীতির ইতিহাস নির্মাণে এক দুর্লভ উপাত্ত হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। বর্ণাঢ্য আলােকচিত্রে পূর্ণ এ-গ্রন্থ থেকে পাঠক-গবেষক অনেক অজানা রাজ্যের সংবাদ পাবেন— একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় ।
ইতিহাসবিদ-শিক্ষাবিদ ড. আজিজুর রহমান মল্লিক ১৯১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকা জেলার রাজাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩৪ সালে মানিকগঞ্জ মডেল হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক এবং ১৯৩৬ সালে ঢাকা কলেজ থেকে আই.এ. পাশ করেন। ১৯৪০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস বিভাগ থেকে বি.এ. (সম্মান) এবং ১৯৪১ সালে এম.এ. পাশ করেন। একই বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যােগদান । ১৯৪৩-১৯৫১ পর্যন্ত রাজশাহী কলেজে অধ্যাপনা। ১৯৫৩ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি.এইচ.ডি ডিগ্রী লাভ। ১৯৫৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যােগদান। ১৯৬৫ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্প পরিচালক ও পরে উপাচার্য হিসেবে যােগদান। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষে জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরে অসংখ্য বক্তব্য প্রদান করেন। ১৯৭২-৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম শিক্ষা সচিব, ভারতে বাংলাদেশের প্রথম হাই কমিশনার এবং বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী। হাই কমিশনার থাকাকালীন সময়ে বিভিন্ন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি আদায়, পাকিস্তান থেকে বাঙালিদের ফিরিয়ে আনা ইত্যাদি বিষয়ে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস বিভাগে যােগদান। ১৯৮৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে প্রফেসর এমেরিটাস করেন। ১৯৮৩১৯৯৩ সাল পর্যন্ত তিনি ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৬ সালে বাংলা একাডেমীর ফেলাে, বাংলাদেশ ইতিহাস সমিতির সভাপতি এবং ১৯৮৩৮৪ ও ১৯৮৪-৮৫ সালে এশিয়াটিক সােসাইটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তিনি। তাঁর উল্লেখযােগ্য প্রকাশনা ' British policy and the Muslims in Bangal (1757-1856)। দুই পুত্র ও তিন কন্যার জনক ড. মল্লিক বর্তমানে অবসর জীবন-যাপন করছেন।